Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পিনাক-৬ ট্র্যাজেডির দুই বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়িত হয়নি সুপারিশ

প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বেশিরভাগ লঞ্চ চলছে সুকানি দিয়ে, স্পিডবোটে চালকদের নেই প্রশিক্ষণ, তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় নৌ-নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে
এম সাঈদ আহমাদ, শিবচর (মাদারীপুর) থেকে ঃ গত ৪ আগস্ট ছিল পিনাক-৬ লঞ্চডুবি ট্র্যাজেডির দুই বছরপূর্তি। ২০১৪ সালের ওই দিনে ভয়াবহ এ লঞ্চডুবির পর দেশের নৌ-খাতে আমুল পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছিল নৌ মন্ত্রণালয়। কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তনও ঘটে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌ-রুটে। কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় বিআইডবিøউর কর্মকর্তা নিয়োগসহ ঈদের সময় নেয়া হয় পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও। কিন্তু পিনাক-৬ ডুবির পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রায় সুপারিশই দেখেনি আলোর মুখ। ধরা যাক সুপারিশের প্রথম যে শর্তটি ছিল অর্থাৎ যাত্রী নিয়ন্ত্রণে পন্টুন থেকে কাটা হবে টিকিট। কিন্তু তা আজো মানা হয় না। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ লঞ্চই চলছে শুকানি দিয়ে। শুকানিদের ৬ মাস মেয়াদি অস্থায়ী অনুমোদনও দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাই। লঞ্চে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের ব্যবহারও হতাশাজনক। স্পিডবোটগুলোতে লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক হলেও চালকদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ। ফলে দুর্ঘটনার চরম ঝুঁকি রয়েই গেছে।
সরেজমিন একাধিক সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার সাথে স্বল্প দূরত্বের কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া নৌ-রুটটি দিন দিন দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ১০ বছর ধরে। ২০ বছর আগে এ রুটে শুরু হয় ফেরি সার্ভিস। এরপর লঞ্চ ও স্পিডবোট আসে পর্যায়ক্রমে। বর্তমানে এ রুটে ৮৭টি লঞ্চ ও আড়াই শতাধিক স্পিডবোট চলছে। যাত্রী ও নৌযান বাড়লেও ছিল না তদারকি। যার ফলে ২০১৪ সালে ঈদুল ফিতরের পরে মাওয়া ঘাটের কাছে পিনাক-৬ লঞ্চডুবিতে ৪৯ জন নিহত ও অর্ধ শতাধিক যাত্রী নিখোঁজ হন। এরপর সরকার নড়েচড়ে বসে, ঘোষণা আসে আমুল পরিবর্তনের। সব ঘাটে লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রী নিয়ন্ত্রণে নিয়োগ দেয়া হয় টার্মিনাল ইন্সপেক্টর। কিন্তু পিনাক-৬ ডুবির তদন্ত কমিটির সুপারিশে উল্লিখিত জনবল আজো নিয়োগ দেয়া হয়নি। সুপারিশের প্রথম যে শর্তটি ছিল অর্থাৎ যাত্রী নিয়ন্ত্রণে পন্টুন থেকে কাটা হবে টিকিট। কিন্তু তা আজো মানা হয় না। মাস্টার দিয়ে লঞ্চ চালনার নিয়ম থাকলেও কয়েকটি লঞ্চ ছাড়া বেশিরভাগ লঞ্চই চলে শুকানিদের দিয়ে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই ৬ মাসের অস্থায়ী সনদ দেয় সুকানিদের। জীবনরক্ষাকারী বয়া তেমন দেখা যায় না। তবে সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়, এ রুটের কোনো স্পিডবোট চালকদের নেই কোনো সার্টিফিকেট বা প্রশিক্ষণ। নৌরুটজুড়ে রয়েছে মাছ ধরার অবৈধ বাঁধ। নদীতে নেই কোনো নৌ-পুলিশ। তবে সুখের বিষয় বৈরী আবহাওয়া হলে বন্ধ করে দেয়া হয় লঞ্চ ও স্পিডবোট। স্পিডবোট যাত্রীদের দেয়া হয় লাইফ জ্যাকেট। যদিও এর মান নিয়ে যাত্রীদের প্রশ্ন রয়েছে। এত সব সংশয়ে পড়ে যাত্রীরা এখন অনেক সচেতন। অনেক যাত্রীই মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ফেরিতে পাড়ি দিচ্ছেন পদ্মা নদী। ফেরিেেত ভিড় এখন অনেক বেশি। ঈদের আগে পরে প্রশাসনও কঠোর থাকে লঞ্চ ও স্পিডবোটের ক্ষেত্রে।
লঞ্চযাত্রী শওকত হোসেন বলেন, এ রুটের লঞ্চগুলোতে নামমাত্র জীবন রক্ষাকারী বয়া রাখা হয়, যা কি না যাত্রীদের তুলনায় খুবই কম।
আরেক যাত্রী হুমায়ুন বলেন, লঞ্চ মাস্টার চালাচ্ছে না সুকানি চালাচ্ছে তা আমরা কিভাবে বুঝব। আমরা তো জানি মাস্টাররাই কেবল লঞ্চ চালায়।
লঞ্চের ইনল্যান্ড মাস্টার ওলিয়ার রহমান বলেন, এ রুটে চলাচলকারী ৮৭টি লঞ্চের মধ্যে কয়েকটিতে লঞ্চ শুধু ইনল্যান্ড মাস্টার দিয়ে চালানো হয়। বাকি লঞ্চগুলো সুকানি দিয়ে চালানো হয়। তবে সুকানি সনদে ছোট লঞ্চ চালানোর অস্থায়ী পারমিশন রয়েছে।
বেশ কয়েকজন শুকানি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা ৬ মাস করে অনুমোদন নিয়ে লঞ্চ চালাই।
স্পিডবোট চালক হুসাইন বলেন, আমরা যারা স্পিডবোট চালনা করি তাদের সবাই দেখে দেখেই চালনা শিখেছি। আমাদের কারোরই কোনো প্রশিক্ষণ নেই। কিভাবে স্পিডবোট চালালে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব তা কিন্তু আমাদের অজানা। তাই সরকারিভাবে যদি আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় আমাদের জন্য খুব ভালো হয়।
বিআইডবিøউটিএ কাওড়াকান্দি ঘাটের টার্মিনাল ইন্সপেক্টর এ বি এস মাহমুদ বলেন, পিনাক-৬ লঞ্চডুবির এ রুটসহ বিভিন্ন রুটে আমুল পরিবর্তন হয়েছে। পরবর্তীতে নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে প্রতিটি লঞ্চের মাস্টার ও ড্রাইভারদের প্রয়োজনীয় সনদপত্র দেয়া হয়েছে। সুকানিরা ৬ মাসের অনুমোদন সাপেক্ষেই লঞ্চ চালাচ্ছে। আমরা ঘাটে অবস্থান করে সার্বক্ষণিক লঞ্চের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ওভারলোডিং, জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামসহ সব বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইমরান আহমেদ বলেন, এ রুটে ৬৫ ফুটের নিচে কোনো লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ রুটের অধিকাংশ লঞ্চ সুকানি দিয়ে পরিচালিত হয়। এখানে মাস্টার নিয়োগ করা উচিত। প্রয়োজন নৌ-পুলিশও। আর স্পিডবোটগুলোর চালকদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে ভালো হয়।
পিনাক-৬ লঞ্চডুবির তদন্ত কমিটির প্রধান ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নূর-উর রহমান বলেন, পিনাক-৬ লঞ্চডুবির পর আমরা যেসব সুপারিশ করেছিলাম তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হওয়া উচিত। বেশিরভাগই বাস্তবায়ন পর্যায়ক্রমে হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ নৌযান চলাচল যে অধ্যাদেশ রয়েছে তাও সংশোধনে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ নৌ-রুট আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি নিরাপদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পিনাক-৬ ট্র্যাজেডির দুই বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়িত হয়নি সুপারিশ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ