গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
স্টাফ রিপোর্টার : নয় বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি মেডিকেল টেকনোলজিস্টের সেবা শিক্ষাক্রম সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত। স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপন করবে না মর্মে সভায় সিদ্ধান্ত নেয় কারিগরি শিক্ষাবোর্ড। কিন্তু সভার সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এই সময়ে দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আইনে না থাকার পরেও একই ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম চালছে দুই মন্ত্রণালয়ের অধীনে। ফলে বাড়ছে নিয়োগসহ নানা ধরনের জটিলতা। আর ঝুঁকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য।
জানা গেছে, বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট তৈরির ক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ে ১৯৬৩ সালে ঢাকায় ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএসচটি) স্থাপিত হয়। এরপর পর্যাক্রমে রাজশাহী, বগুড়া, বরিশাল, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, ঝিনাইদহতে মোট ৮ টি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। চিকিৎসা শিক্ষা বিষয়ে ¯œাতক পর্যায়ের নিচে ডিপ্লোমা বা অন্যান্য কোর্স সংগঠনের জন্য স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি গঠিত হয়। ১৯৪৯ অনুসারে এ প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া ডিপ্লোমা বা লাইসেন্স কেবল মূল্য বহন করে।
কিন্তু ২০০২ সাল থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মেডিকেল টেকনোলজিতে বিভিন্ন কোর্স পরিচালনার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়া শুরু করে। এতে বিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়নি। ফলে এ বিষয়ে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। সমস্যা নিরসনে ২০০৭ সালের ৮মে তৎকালীন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ডা. এ এস এম মতিউর রহমানের (অব.) সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আলেয়া আক্তার স্বাক্ষরিত সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, উক্ত সভায় কারিগরি শিক্ষাবোর্ড স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং কোনো কোর্স চালুর জন্য অনুমোদন প্রদান করবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় জানানো হয়, বিএমডিসি অ্যাক্ট (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) ১৯৮০-এর ৩১(১) ধারা অনুযায়ী ‘কোনো ব্যক্তি সরকারের অনুমোদন ছাড়া শল্যবিদ্যাসহ চিকিৎসা শাস্ত্র, ধাত্রীবিদ্যা, সেবিকা বৃত্তি, ভেষজ কর্ম ও ধাত্রী বিদ্যায় কোনো পাঠ্যসূচি সংগঠন করতে অথবা প্রশিক্ষণ দিতে পারবে না এবং সনদ প্রদান, লাইসেন্স, ডিপ্লোমা অথবা ডিগ্রি প্রদান করতে পারবে না।’ তাই বিএমডিসি অ্যাক্ট অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষা বোর্ড স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ও সেবা শিক্ষাক্রম নামে কোনো কোর্স পরিচালনা করতে পারে না।
সভায় আরো জানানো হয়, চিকিৎসা শিক্ষা বিষয়ে ¯œাতক পর্যায়ের নিচে ডিপ্লোমা বা অন্যান্য কোর্স সংগঠনের জন্য স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি গঠিত হয়েছে। দি বেঙ্গল মেডিকেল (ইস্ট বেঙ্গল এমেন্ডমেন্ট) বিল, ১৯৪৯ অনুসারে এ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দেয়া ডিপ্লোমা বা লাইসেন্স কেবল মূল্য বহন করে। সভায় চিকিৎসা শিক্ষাসংক্রান্ত সামগ্রিক বিষয়ের তথ্য উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৎকালীন পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) প্রফেসর ডা. খন্দকার সিফায়েতউল্লাহ।
উক্ত সভায় তৎকালীন শিক্ষা সচিব উল্লেখ করেন, বিষয়টি আরো আগইে নিষ্পত্তির কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত ছিল। তিনি কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং এখন থেকে এ ধরনের কোর্সের আর অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব সেলিম মোল্লা বলেন, ২০০৭ সালে যখন আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয় তখন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চিকিৎসা শিক্ষা বিষয়ক কোর্স পরিচালনা করে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল ৭৭টি। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ধরনের কোর্স বন্ধ করা এবং অনুমোদন না দেওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এই কোর্স পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক।
অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সর্বস্তরে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিবছর প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স নিয়োগ দেয়া হলেও আট বছরেরও বেশি সময় ধরে টেকনোলজিস্ট নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে শুধু সরকারি হাসপাতালগুলোতে শূন্য পদ রয়েছে সাড়ে ৫শ’র বেশি। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতর টেকনোলজিস্ট নিয়োগে যে সকল শর্ত প্রদান করে সেগুলো কারিগরি শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার জন্য তার উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়। ফলে নিয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এসব কারণে ব্যহত হচ্ছে সরকারি হাসপাতালে টেকনোলজিস্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া। এ কারণে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা পাশ বেকার টেকনোলজিষ্টের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা। ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ রোগীরা। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চিকিৎসা সেবা।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য একজন চিকিৎসকের বিপরীতে ৫ জন টেকনোলজিস্ট থাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ ডাক্তার ও মেডিকেল টোকনোলজিস্ট অনুপাত হবে ১:৫। কিন্তু ২০০৭ সালের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ডাক্তার ও টেকনোলজিস্টের অনুপাত ১:০ দশমিক ২৩। অর্থাৎ একজন ডাক্তারের বিপরীতে টেকনোলজিস্ট রয়েছেন ১জনেরও কম। প্রতিবেদনে দেখাযায়, ২০০৬ সালে দেশে প্রতি ১৩ হাজার ৩১১ জন মানুষের জন্য টেকনোলজিস্ট ছিল মাত্র ১০ হাজার ৬৫৩ জন।
এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে অসংখ্যবার দাবি উত্থাপণ করা হয়। এমনকি দাবির পক্ষে আন্দোলনও পরিচালনা করা হয়। কিন্তু চিকিৎসা শিক্ষা ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান না হলে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সম্ভব নয় বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) প্রফেসর ডা. আব্দুর রশিদ বলেন, এই সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চলছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত না মানায় যে জটিলাতার সৃষ্ট হয়েছে তা নিরসনে পূণরয় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভার আয়োজন করা হয়েছে। এমনকি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দফতর পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার হয়তো এই জটিলতার একটি স্থায়ী সমাধান হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।