পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর এক গবেষণায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর দুর্যোগ মোকাবিলায় অনেক এলাকার ত্রাণ বরাদ্দ, বিতরণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের তথ্য উঠে এসেছে। এর সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, ঝুঁকি চিহ্নিত করা, সচেতনতা ও সতর্কবার্তা প্রচারে ঘাটতি থাকার বিষয়টিও এসেছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ আগের চেয়ে অনেক বেশি সাফল্য অর্জন করেছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তা প্রশংসিতও হয়েছে। টিআইবির গবেষণাতে তার উল্লেখ আছে। দুর্যোগ-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশেষ করে ত্রাণ বরাদ্দ, বিতরণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ঘটনা এ ক্ষেত্রে তাই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যদি এই অনিয়ম ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ঘটনা না ঘটত তাহলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আরো নিখুঁত ও কার্যকর বলে প্রতিপন্ন হতো। দুর্যোগকবলিত মানুষ আরো বেশি সুবিধা ও সেবা পেয়ে লাভবান হতো। এ কথা বলাই বাহুল্য, দুর্নীতি সর্বক্ষেত্রে ও সর্বস্তরে বিস্তৃত হয়ে পড়েছে। দুর্যোগ-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেয়া কর্মসূচিও যে এর বাইরে নেই টিআইবির গবেষণায় সেটি ফের প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বা এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ সহায়-সম্পদসহ প্রায় সবকিছুই হারায়। দুর্যোগ-পরবর্তী পরিস্থিতি হয় ভয়ঙ্কর। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদির সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। এই সময়টাতে ত্রাণ বরাদ্দ, বিতরণসহ দুর্যোগকবলিত মানুষের সুরক্ষা দেয়া অত্যন্ত দুরূহ ও কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময় ত্রাণ কার্যক্রমে ত্বরিত ও কার্যকর পদক্ষেপ, সততা, স্বচ্ছতা, সমদৃষ্টি ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানেই যদি অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়, তাহলে সেই দুঃখ রাখার আর কোনো জায়গা থাকে না। অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রভাব ও দলীয় মনোবৃত্তি লক্ষ্য করা যায়। তাই বলে দুর্যোগ-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রেও দেখা যাবে, এটা মেনে নেয়া যায় না।
অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে উপকূলীয় ১৫টি জেলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৭ জন নিহত হয় এবং বাড়িঘর ও ফসলাদির অপরিমেয় ক্ষতি হয়। সরকার রোয়ানুকবলিত জেলাগুলোতে খাবার ও নগদ টাকা বরাদ্দ করা ছাড়াও মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনা এবং আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে তাদের রক্ষণাবেক্ষণের প্রশংসনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এখানে সরকারের সদিচ্ছার কোনো ঘাটতি দেখা যায় না। এর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল অনিয়ম-দুর্নীতি তারাই করেছে। তারাই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার ক্ষেত্রে রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়েছে। এটা যে কেবল রোয়ানুর দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে ঘটেছে এমন মনে করার কারণ নেই। এর আগেও বিভিন্ন দুর্যোগ-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে এটা দেখা গেছে। ত্রাণসামগ্রী লুটপাট, ত্রাণ বরাদ্দ ও বিতরণে বৈষম্য, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় দলীয় লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা ইত্যাদি লক্ষ্য করা গেছে। এটি একটি ‘সংস্কৃতিতে’ পরিণত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নজরদারি বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে এই সংস্কৃতির অবসান ঘটতে পারে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ-বিপর্যয় এদেশে নতুন কিছু নয়। প্রায় প্রতি বছরেরই এটা সাধারণ ঘটনা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঘটনা বেড়েছে। বিশেজ্ঞদের মতে, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া। এ ধরনের ঘটনা আগামীতে আরো বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে আমাদের আরো সতর্ক-সচেতন হওয়া দরকার। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ঠেকিয়ে দেয়ার কোনো উপায় বা ব্যবস্থা নেই। তবে এর ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায় যদি উপযুক্ত সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়। এ ব্যাপারে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা নেয়া যেতে পারে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আঘাতের আগে ও পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায় মানুষজন সরিয়ে আনা, আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের জায়গা করে দেয়া এবং ত্রাণ ও রক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা। এরপর আসে তাদের যথাযথভাবে পুনর্বাসন করার কাজ। রোয়ানুর ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি আগের সব ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সতর্কবার্তা প্রচারে বিলম্ব বা ঘাটতি হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষজন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবও দেখা গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রের মান ও পরিবেশ অনেক ক্ষেত্রে যাচ্ছেতাই বলে প্রতীয়মান হয়েছে। যেহেতু ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা আগামী দিনগুলোতে রয়েছে সুতরাং এসব দিকেও গুরুত্ব সহকারে নজর দিতে হবে। মানুষজনের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, ত্বরিত সতর্কবার্তা প্রেরণ এবং তাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমকে অবশ্যই সকল প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতি থেকে মুক্ত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।