Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্নীতির তথ্য দিন ব্যবস্থা নেবো

আওয়ামী লীগের যৌথসভায় শেখ হাসিনা কাজের সুযোগ সৃষ্টি করায় এখন দেশে বেকার থাকার কোনো সুযোগ নেই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

দলের নেতাকর্মীদের প্রতি দেশের বিভিন্ন দুর্নীতি তথ্য তাঁর কাছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দুর্নীতি নিয়ে যে কথা বলে, আমি তো পার্লামেন্টে বলেছি, কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে আমাকে তথ্য দিন। আমি ব্যবস্থা নেবো। দুর্নীতিগ্রস্তদের থেকে দুর্নীতি নিয়ে কথা শুনতে হয়। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভার মুলতবি বৈঠকে তিনি এ আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক হয়। এর আগে গত ৭ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ যৌথসভা হয়। পরে তা মুলতবি করা হয়। এ সময় তিনি আরো বলেন, আমরা দেশের উন্নয়ন এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছি যে কেউ ইচ্ছা করলে বেকার থাকতে পারে। প্রকৃতপক্ষে দেশে বেকার থাকার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমরা এত সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি।

আওয়ামী লীগের নেতাদের দুর্নীতির কথা শুধু মুখে মুখে বললে হবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন এমন এমন লোকজনের কাছ থেকে আমাকে দুর্নীতির কথা শুনতে হচ্ছে যারা নিজেরাই দুর্নীতিগ্রস্ত। যাদের আমলে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অথবা কেউ বলতে গেলে ওই ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করতে যেয়ে গরিব মানুষের ওপর এমন চাপ দিয়েছে যে সুদ দিতে দিতে তাদের অনেক সময় বাড়িঘর ছেড়ে এলাকা থেকে চলে যেতে হয়েছে। অথবা আত্মহত্যা করতে হয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, এই গরিব মানুষের টাকা দিয়েই কিন্তু দেশে নাম-টাম করে কিন্তু বেশ ভালোই আছে এবং প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগও করে ফেলেছেন। এই টাকাগুলো কোথা থেকে, এগুলো গরিবের রক্তচোষা টাকা। এটাতো বাস্তব কথা। অথচ আমরা এত কাজ করার পরেও কিছু লোক আছে তাদের কোনও কিছু ভালো লাগে না

বিগত সময়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যা যা চেয়েছিলেন আমরা সেগুলো কিন্তু একে একে করে দিচ্ছি মানুষকে। তার যে স্বপ্নটা, সেটাই বাস্তবায়ন করা আমাদের লক্ষ্য। এত কাজ করার পরেও কিছু লোক আছে তাদের কোনও কিছু ভালো লাগে না।

আওয়ামী লীগ ওয়াদা রক্ষা করে মন্তব্য করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কথা দিয়েছি- যখনই নির্বাচনে ইশতেহার হয়, প্রতি বাজেটে নির্বাচনের ইশতেহার সামনে রেখে আমরা পরিকল্পনা নেই। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা যখন করি সেখানেও আমাদের ঘোষণাপত্র, আমাদের নির্বাচনি ইশতেহার মাথায় রেখে, সামনে রেখেই আমরা কিন্তু করি। অর্থাৎ যে ওয়াদা জাতিকে দেই সেটা আমরা রক্ষা করি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেটা বলে মানুষের জন্য যে ওয়াদা করে, সে ওয়াদা আওয়ামী লীগ রক্ষা করে। এটা হলো বাস্তবতা। সার কথা হলো, আওয়ামী লীগ যে কথা দেয় আওয়ামী লীগ সে কথা রাখে। জাতির কল্যাণে আমরা কাজ করি এবং মানুষ তার শুভ ফল পাচ্ছে।

দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চিন্তা করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ যেন মাথা তুলে চলতে পারে। গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের যে পরিবর্তন ঘটেছে। আমি জানি এটা অনেকেই নিতে পারে না। নানা ধরনের কথা রটায়। কিন্তু মানুষের জীবন যাত্রায় যে পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি আমরা করেছি। এটাকেও অনেকেই স্বীকার করতে চায় না। করতে চাইবেও না।

টানা ১৪ বছর সরকারে থাকায় ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মানুষের জীবনমান উন্নতি হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের দেশেও যারা একেবারে নির্দিষ্ট বেতনে চলতে হয় তাদের জন্য কষ্ট হচ্ছে। সেটা আমরা বুঝি। সেই জন্য বিদেশ থেকে অনেক টাকা খরচ করে খাবার কিনে নিয়ে আসতেছি। ভর্তুকি মূল্যে সেটা দিচ্ছি। আমি জানি না বাংলাদেশে আর কোনও সরকার এই ভাবে জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে কিনা।

দেশে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করা হয়েছে এবং দেশে বেকার থাকার সুযোগ নেই মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ ইচ্ছে করলে বেকার থাকতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বেকার থাকার কোনও সুযোগ নেই। কারণ আমরা এত সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অনেক ছেলেমেয়ে এখন গ্রামে বসে টাকা উপার্জন করছে। কাজেই এভাবে যত সুযোগ আছে আমরা করে দিয়েছি।

বাংলাদেশ নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের কথা মাথায় রেখেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি করা হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভূমিহীনদের নিয়ে সরকার জরিপ করছে। তাদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের উচিত সত্তর সালের নির্বাচনে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য পড়ে দেখা।
দেশের অনবাদি জমিতে আবাদ করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় (টুঙ্গিপাড়া-কোটালিপাড়া) খুঁজে দেখলাম প্রায় ১০ হাজার বিঘা জমি আছে অনাবাদি। আমাদের কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আনাবাদি জমিতে আবাদ করার একটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের বাইরেও অনেক জমি রয়ে গেছে। আমি উদ্যোগ নিয়েছি আমার ওখানে যত অনাবাদি জমি রয়েছে সেখান আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে আবাদ করা। সেখানে শ্রমিকের পাশাপাশি যন্ত্রের ব্যবহারও হচ্ছে। এইভাবে সবাই শুরু করলে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যের অভাব হবে না। উৎপাদন করে বাইরেও রফতানি করতে পারবো। তিনি বলেন, আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা চিন্তা করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ যেন অন্তত মাথা তুলে চলতে পারে। সারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। এই মন্দার কারণে আমরা অনেক হিসাব-নিকাশ করে চলছি। আমাদের অনেক প্রকল্প আছে যেগুলো এখনই শেষ না করলেও চলবে কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়া, মানুষের ওষুধ নিশ্চিত করা, বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিচ্ছি, ঘর করে দিচ্ছি; আর ৫৬ হাজার ঘর করলেই আমরা বলতে পারবো যে, আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ ভূমিহীন না। অন্তত তাদের একটা ঘর আছে, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা আছে। শুধু ঘর না, সেখানে তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। তাতে দারিদ্র্যের হাত থেকে তারা উঠে আসছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে দারিদ্র্যের হার অনেক বেশি ছিল। প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ ছিল, এখন সেটা ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। ইনশাল্লাহ সেটা আর থাকবে না। দারিদ্র্যের হার আমরা ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। করোনা অতিমারি আর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ যদি না হতো তাহলে এই কয়েক বছরে আরও ৩-৪ ভাগ আমরা কমিয়ে ফেলতে পারতাম। আমরা বলতে পারতাম বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত। ##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ