পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত বৃহস্পতিবার তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা অর্ধবেলা হরতালের সময় শাহবাগে হরতাল সমর্থনকারীদের উপর পুলিশ ব্যাপক হামলা চালায়। টিয়ারশেল, পানি-কামান ব্যবহারসহ হরতাল পালনকারীদের উপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। এ সময় ১০ থেকে ১২ জন গুরুতর আহত হয়। শুধু হরতাল পালনকারীদের উপরই পুলিশ হামলা চালায়নি, সংবাদকর্মীদের উপরও বর্বরোচিত নির্যাতন চালায়। হরতালের খবর সংগ্রহ ও ছবি তোলার সময় সাংবাদিকদের নির্মমভাবে পেটানো হয়। শাহবাগ থানার সামনে পুলিশের মারধরের শিকার হন এটিএন নিউজের ক্যামেরাপারসন আবদুল আলীম ও রিপোর্টার এহসান বিন দিদার। এ সময় তাদের বুট ও অস্ত্রের বাঁট দিয়ে আঘাত করা হয়। এতে দিদারের ডান পা ফ্রেকচার হয় এবং আলীম আহত হন। পুলিশের এ নির্যাতনের চিত্র গতকাল বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত চিত্রে আলীমের উপর পুলিশের বেপরোয়া নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠে। ঘটনায় জড়িত শাহবাগ থানার এক এএসআইকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ১২ পুলিশ সদস্যকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। দুঃখের বিষয়, পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশকে আরও জনবান্ধব হওয়ার আহ্বান জানান। অথচ পুলিশ সপ্তাহ চলাকালেই পুলিশ এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনার জন্ম দিল।
সরকারের পলিসি ও জাতীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তের ব্যাপারে গণতান্ত্রিক দেশে যে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতিবাদ ও ভিন্নমত পোষণের অধিকার রয়েছে। এ অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রও সচেতন থাকে। আমাদের দেশে এ অধিকার বরাবরই খর্ব করা হয়েছে। এখনও করা হচ্ছে। সুন্দরবনের নিকটবর্তী রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা নিয়ে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন ও প্রতিবাদ করে আসছে। এ আন্দোলনে দেশের সচেতন মহলসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও একাত্মতা ঘোষণা করেছে। রামপালে উল্লেখিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হলে সুন্দরবনের উপর কী ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে, তার তথ্য-উপাত্ত হাজির করে বিরোধীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছে। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সময়ে লংমার্চ, মানববন্ধন, সভা-সমাবেশসহ হরতাল পালিত হয়েছে। প্রতিবারই পুলিশ বাধার সৃষ্টি করেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপর হামলা চালানো হয়েছে। সরকারও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরছে এবং এখানেই তা স্থাপনে বদ্ধপরিকর। এ পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা তাদের বিরোধিতা অব্যাহত রেখেছে। এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। দেখা যাচ্ছে, সরকার তাদের এ দাবি আমলে তো নিচ্ছেই না, উল্টো তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে বাধা দিচ্ছে। এটা গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির পরিপন্থী। আমরা দেখেছি, উন্নত বিশ্বে জলবায়ু সম্মেলন ও পরিবেশগত বিরূপ পরিস্থিতি নিয়ে বিশাল জনসমাবেশ ও প্রতিবাদ হয়েছে। সেসব প্রতিবাদ সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। তারা শান্তিপূর্ণভাবেই তাদের বিভিন্ন দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও সারিবদ্ধভাবে তাদের পাশাপাশি অবস্থান নিয়েছে। কোনো ধরনের হামলা করেনি, বরং শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনে সহায়তা করেছে। বিশ্বের তাবৎ মিডিয়া সেসব আন্দোলনের খবর সংগ্রহ করে প্রচার করেছে। কালেভদ্রে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ধৈর্যের সাথে তা মোকাবেলা করেছে। তাদের উপর বেপরোয়া হামলা চালায়নি, মারপিট করেনি। আমাদের দেশেই কেবল এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। বৃহস্পতিবার রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করে আন্দোলনকারীরা অনেকটাই শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল-সমাবেশ করেছে। মিছিল নিয়ে তারা অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ বাধা প্রদান করে। উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ টায়ার পুড়িয়ে প্রতিবাদ করে। কেউ পুলিশি ব্যারিকেড উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। এতেই পুলিশের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটে। বেপরোয়া হয়ে উঠে। বেপরোয়া লাঠিচার্জ থেকে শুরু করে মহূর্মুহু টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও পানি-কামান ব্যবহার করে করে। কোনো কোনো আন্দোলনকারীকে টেনে-হিঁচড়ে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। অনেককে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে চায়। এসব সংবাদই সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল এটিএন নিউজের রিপোর্টার ও ক্যামেরাপারসন। তাদের কি দোষ ছিল? সংবাদ সংগ্রহ ও পুলিশের নির্যাতনের চিত্র ধারণ করাই কি তাদের অপরাধ ছিল? ঘটনা ঘটলে সংবাদকর্মীরা কি সংবাদ সংগ্রহ করবে না? আমরা দেখেছি, যুদ্ধসংবাদ সংগ্রহে বিবদমান গ্রুপগুলোও সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহ করতে সহায়তা করে। যুদ্ধের বিভৎসতা তুলে ধরতে তারা কোনো বাধা প্রদান করে না। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই অন্যায্যভাবে বা বিনা উসকানিতে হামলা চালায়, তার সংবাদ ও চিত্র ধারণ করতে গেলেই চরম বাধা সম্মুখীন এবং নির্যাতনের শিকার হতে হয়। আইনের লোক যদি নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তবে মানুষ কোথায় যাবে? তার মত প্রকাশ এবং দাবি-দাওয়া কিভাবে উপস্থাপন করবে?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার পুলিশকে জনবান্ধব হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, পুলিশের কতিপয় লোকজন তা আমলে নিচ্ছে না। আন্দোলনকারীদের নির্যাতনের পাশাপাশি সাংবাদিকরাও তাদের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। এ ধরনের পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এতে বরং সরকারের ভাবমর্যাদা চরমভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে। বলা বাহুল্য, পুলিশের একশ্রেণীর সদস্যের মধ্যে বিগত কয়েক বছর ধরে অতি উৎসাহী ও আক্রমাণাত্মক মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। অতি সাধারণ কোনো মানববন্ধন বা সমাবেশেও তারা চড়াও হচ্ছে। এর ফলে দেশ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গণতান্ত্রিক দেশে পুলিশের এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা মনে করি, পুলিশকে এ ধরনের আচরণ থেকে বের হয়ে আসা উচিত। দুষ্টের দমন শিষ্টের লালনের দিকে মনোযোগী হওয়া উচিৎ। রাজনৈতিক কর্মসূচি হলেই তাদের মারমুখি আচরণ করতে হবে, এ অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অতি উৎসাহী যেসব পুলিশ সদস্য নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে, তাদের শোধরাতে হবে। দায়ীদের যথাযথ শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।