Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীতাকুন্ডে সুস্বাদু খেজুররস আহরণ কমেছে!

বিভিন্ন অজুুহাতে নির্বিচারে খেজুর গাছ ধ্বংস

| প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : ভোজনরসিক বাঙালির শীতকাল মানেই খেজুররসে ভেজা পিঠে-পুলি আর মিষ্টান্ন খাবার দিন। বিশেষতঃ গ্রাম বাংলায় শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরেই এ রেওয়াজ চলে আসছে। গ্রামে বাস করেন অথচ শীত মৌসুমে রসে ভেজা পিঠে-পুলি খাননি এক সময় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই ছিলো দুরূহ। কিন্তু হঠাৎ যেন সে দিনগুলো বদলে যেতে শুরু করেছে। এমনকি সীতাকুন্ডের মত একটি সবজিভান্ডার ও চাষাবাদ প্রধান এলাকাতেও এখন এমন মানুষের সংখ্যা প্রচুর, যারা পুরো একটি শীত মৌসুমে এক-দু’বার খেজুররসের স্বাদ পান না। তবে এ সু-স্বাদ থেকে অর্থাভাবে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন না। বঞ্চিত হচ্ছেন পর্যাপ্ত পরিমাণ খেজুর গাছের অভাবে!
জানা যায়, মাত্র কয়েক দশক আগেও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত সীতাকুন্ডের বিভিন্ন এলাকাতে প্রচুর পরিমাণ খেজুর গাছ ছিল। সে সময় পুকুরপাড়ে, গ্রাম্য সড়কের ধারে, গৃহস্থ বাড়ি, ফসলি জমির আইল থেকে শুরু থেকে যত্রতত্র খেজুর গাছ চোখে পড়ত। তখন গ্রামে এমন কোনো পরিবার ছিল না, যাদের কমপক্ষে ৫-১০টি খেজুর গাছ নেই। সেময় খেজুর গাছের আধিক্যের কারণে বহু খেজুর গাছ অবহেলায় পড়ে থাকত। গাছিরা সব গাছ কাটার সময় করে উঠতে পারতেন না। তারপরও যে পরিমাণ গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হতো তা গ্রামের প্রতিটি ঘর ছাড়াও সরবরাহ হতো দেশের বিভিন্ন শহরে। ফলে শীত মৌসুমে অনেকের জন্য রস সংগ্রহ ও বিক্রি ছিল একটি লাভজনক পেশা। গ্রামের কিছু গাছি এলাকার বাসিন্দাদের সাথে চুক্তি সাপেক্ষে গাছগুলো নিয়ে নিজেরা রস সংগ্রহ করে গাছের মালিকদেরও খাওয়াতেন আবার নিজের ইচ্ছেমতো গ্রাম ও শহরে বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ আয় করতেন। আর সেসব গাছিদের হাত ধরে তখন গ্রামের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যেত সুস্বাদু খেজুর রস। আর তা দিয়ে গ্রামের ঘরে ঘরে তৈরি হতো রসের মিষ্টান্ন ও রকমারি পিঠে-পুলি। কিন্তু বিগত ১০-১৫ বছরে যেন সেই চিত্র উল্টে যেতে বসেছে। এখন সীতাকুন্ডের পথে পথে ঘুরেও যত্রতত্র খেজুর গাছ চোখে পড়ে না। মাঝে মধ্যে হাতে গোনা কিছু খেজুর গাছ চোখে পড়লেও সে সংখ্যা এতই নগণ্য যে আগের চিত্র’র সাথে এর কোন তুলনা-ই চলে না। সম্প্রতি সীতাকুন্ড পৌরসদরে এ বিষয়ে আলাপকালে এক প্রবীণ ব্যক্তি মো. সোলেমান বলেন, সেসব দিনের কথা বললে যেন নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসে। রুপকথার মত মনে হয় দিনগুলি। তিনি বলেন, এখন তোমরা দিনে যতটুকু পানি খাও তখন শীতকালে আমরা তার চেয়ে বহু বেশি পরিমাণে রস পান করতাম প্রতিদিন। তিনি বলেন, এত খেজুর গাছ ছিল যে হাত বাড়ালেই রস পাওয়া যেত। আর সেসব রসের স্বাদও ছিল অন্যরকম। সীতাকুন্ডের এক গাছি গুলিয়াখালী গ্রামের আবচার উদ্দিন বলেন, শীত মৌসুমে বিভিন্ন্ জনের খেজুরগাছগুলি একটি চুক্তিতে আমি নিয়ে কেটে রস সংগ্রহ করি। কিন্তু গাছ এত কম যে পর্যাপ্ত রস পাই না। একটু লাভের জন্য শহরে রস পাঠাতে চাই। কিন্তু এত অল্প রস পাঠিয়ে পোষায় না। আর শহরে তো দূরের কথা এখন গ্রামের চাহিদাও পূরণ করা যাচ্ছে না। সোলাইমানের মত আবছারও মনে করেন, খেজুরগাছ গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। গ্রামের ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এ গাছগুলি রক্ষা করার পাশাপাশি আবারো নতুন করে বিপুল পরিমাণ খেজুর গাছ রোপণ করলে হয়তো আবারো এক সময় সীতাকুন্ডবাসীর আগের মত প্রাণভরে রসে ভেজা পিঠে-পুলি ও মিষ্টান্নের সু-স্বাদ গ্রহণের সোনালী দিনগুলি ফিরে আসবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সীতাকুন্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ