Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গঙ্গাচড়ায় দিগন্ত জুড়ে হলুদের ঝিলিক মধু আহরণে ব্যস্ত মৌচাষিরা

| প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনামুল হক মাজেদী, গংগাচড়া (রংপুর) থেকে, : রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সরিষা ফুলের হলুদ সমারোহে ভরে গেছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সরিষার আবাদ বেশি হওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক। ভালো ফলনের আশায় কৃষকরা সরিষার ক্ষেত পরিষ্কার ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। গঙ্গাচড়া উপজেলার কৃষকরা বুঝে গেছে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করলে পরাগায়নের মাধ্যমে ফসল ভালো হয়। তাই মৌসুমী মৌচাষিদের আসা সরিষার ফলন বৃদ্ধি পাবে প্রায় ১০ শতাংশ। ফলে ৯টি ইউনিয়নে প্রায় ২০ লাখ টাকা মূল্যের প্রায় ৮ টন মধু সংগ্রহ হবে, এমন আশাবাদ মৌচাষি ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা আবাদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মৌসুমি মৌচাষিদের তৎপরতা। সরিষা যেমন দিচ্ছে তৈল, সঙ্গে দিচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এছাড়া সরিষা চাষে রয়েছে দ্বিগুণ লাভ। জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য এর ফুল ও পাতা ঝড়ে তৈরি করা হয় জৈব সার। ফলে উপজেলার অনেক কৃষকেরা এখন ধান ও অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রান্তিক কৃষক মুন্নাফ মিয়া জানান, তার আবাদি ৩ একর জমিতে সরিষা আবাদ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। গত ১০ বৎসর যাবৎ আবাদ যোগ্য জমিতে সরিষা চাষ করে প্রতি মৌসুমে ২০/৩০ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত লাভ করে আসছি। চলতি মৌসুমে সরিষার ফলন ভালো হলে আরও বেশি লাভের আশা করছি। নোহালী ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার জানান, ভালো বীজ শনাক্ত করে সঠিক সময়ে বীজ রোপণ করলে এবং বিভিন্ন প্রকার সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে আগাম ফলন ফলিয়ে তা বাজার জাত করতে পারলে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে অধিক লাভ করা সম্ভব হবে। এক বিঘা সরিষা চাষ করতে খরচ হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে বিঘায় ৪-৫ মন সরিষা উৎপাদন হয়। প্রতিমণ সরিষার বাজার মূল্য ১৫-১৮শত টাকা। অন্যান্য ফসল চাষ করে প্রতি বিঘায় যে পরিমাণ লাভ হয় তার চেয়ে ওই পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করা যায়। এদিকে সরষের হলুদ ফুলের সাম্রাজ্যে মাঠে মাঠে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মৌ চাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রংপুর জেলা থেকে প্রায় শতাধিক মৌচাষির দল প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরষে ফুল থেকে বিশেষ কায়দায় মধু সংগ্রহ করছে। তাদের সংগৃহীত এই মধু রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্রি করে থাকে।
বছরের নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সরষে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ চলে। এ সময়ে গড়ে একেকজন মৌ চাষি প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ মণ মধু আহরণ করতে পারেন। চলতি বছর জেলার বিভিন্ন স্থানে মৌচাষিরা সরিষা ফুল থেকে প্রায় ২০ টন মধু সংগ্রহ করবেন, যার পাইকারি মূল্য ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। কাউনিয়া থেকে আসা মৌচাষি মমিনুর ইসলাম জানান, ৪ বছর আগে তিনি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০টি বাঙ নিয়ে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তার বাক্সের সংখ্যা শতাধিক। সরিষা ফুল থেকে তিনি মাসে ১২-১৫ মণ মধু সংগ্রহ করছেন। তিনি এই মধু ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় পাইকারি বিক্রি করেন। তিনি আরো জানান, দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রফতানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এবার উপজেলার ৯ ইউনিয়নে উচ্চ ফলনশীল ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। তবে পরিবেশ অনুকূলে থাকলে সরিষার ফলন বাম্পার হবার সম্ভাবনা আছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, মৌচাষিরা আসায় ফলন প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। মৌমাছি শুধু মধুই সংগ্রহ করে না ফসলের জন্য ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে
কৃষকদের সহয়তা করে থাকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গঙ্গাচড়ায়


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ