Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপকূলীয় ৫ জেলায় ক্ষতিকর জাল অপসারণে বিশেষ কর্মসূচি

| প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : বরিশালসহ দেশের উপকূলীয় পাঁচটি জেলার উন্মুক্ত জলাশয়ে ইলিশসহ মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ক্ষতিকর জাল অপসারণে ১৫ দিনের বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচজন যুগ্ম সচিবকে বরিশাল, নোয়াখালী, ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনাতে প্রেরণ করা হয়েছে। তারা ১ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সরেজমিন জেলাগুলোর মৎস্য সম্পদ সমৃদ্ধ নদ-নদী থেকে ক্ষতিকর জাল অপসারণে অভিযান পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করছেন।
অপরদিকে গত ১ নভেম্বর থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সারাদেশে জাটকা নিধনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। এরই মধ্যে মৎস্য সম্পদ সম্প্রসারণে ক্ষতিকর বেহুন্দি জাল, বেড় জাল ও কারেন্ট জালের মতো ক্ষতিকর জালসমূহ অপসারণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কারেন্ট জাল উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহারে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারির পরও তা পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এখনো এর অবৈধ বিপণন ও ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ‘মৎস্য সম্পদবিনাশী ক্ষতিকর জাল অপসারণে বিশেষ কমসূচি’র আওতায় ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ২০টি অভিযান ও ২২টির মতো ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এ অভিযানে ৫০টি বেহুন্দি জাল ও প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মিটারের মতো কারেন্ট জাল আটক করা হয়েছে। এসময় আরো ৫২টি ক্ষতিকর জাল আটক ছাড়াও প্রায় ১ লাখ টাকা জরিমানাও আদায় করা হয়েছে। এসময় বিপুল পরিমাণ জাটকাও আটক করেছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকলেও ৩০ জুন পর্যন্ত ইলিশ পোনা-জাটকা নিধন, পরিবহন ও বিপণন নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল মহল।
গত বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে-পরের ২০ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণন বন্ধ ছিল। এছাড়া উপকূলে ইলিশের মূল প্রজননস্থলের ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মৎস্য আহরণও বন্ধ রাখা হয়। ঐ সময়ে বিভিন্ন অভিযানে সারাদেশে প্রায় ২ হাজার ১শ’রও বেশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রশাসন। যার মধ্যে শুধু বরিশাল বিভাগের ছয় জেলাতেই প্রায় হাজারখানেক মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে প্রায় ১১ হাজার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এ সময়ে। যার মধ্যে বরিশাল বিভাগেই পরিচালিত অভিযানের সংখ্যা ছিল প্রায় ২ হাজার। এসব মোবাইল কোর্ট ও অভিযানে ১ কোটি ৫৫ লাখ মিটার জাল বাজেয়াপ্ত করা হয়। যার মধ্যে বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর  বিভিন্ন নদ-নদী থেকে প্রায় ৩০ লাখ মিটার ক্ষতিকর জাল জব্দ করা হয়। এসময় বিভিন্ন নদ-নদী থেকে বেআইনিভাবে আহরিত ৩০ টনেরও বেশি ইলিশ বাজেয়াপ্ত করে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর নদ-নদী থেকে প্রায় ৫ টন ইলিশ জব্দ করা হয়েছে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, অভিপ্রায়নী মাছ ইলিশ প্রতিদিন ¯্রােতের বিপরীতে প্রায় ৭১ কিলোমিটার বিচরণ করে থাকে। ইলিশ সারা বছর ডিম ছাড়লেও আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে-পরে শতকরা ৬০-৭০ ভাগেরও বেশি মা ইলিশ প্রজনন করে থাকে বিধায় ২০০৭ সাল থেকে আহরণে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। এতে করে প্রচুর মা ইলিশ আহরণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে। ফলে দেশে অন্য মাছের তুলনায় প্রতি বছর ইলিশের উৎপাদন ৪ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছর দেশে ইলিশের সহনীয় আহরণ প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে বলে মৎস অধিদফতরের দায়িত্বশীল মহল জানিয়েছে, যা চলতি অর্থবছরে ৪ লাখ টন অতিক্রমের সম্ভাবনা রয়েছে।
মৎস্য অধিদফতরের মতে, আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান ১ শতাংশেরও বেশি। মৎস্য সম্পদে একক প্রজাতি হিসেবে এর অবদান প্রায় ১২-১৩ শতাংশ। সারাবিশ্বে এখন আহরিত ইলিশের ৫০-৬০ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে মৎস অধিদফতর, যা মিয়ানমারে ২০-২৫ শতাংশ এবং অবশিষ্ট ১০-১৫ শতাংশ ভারতে আহরিত হয়ে থাকে।
এদিকে মৎস্য অধিদফতরের সুপারিশের আলোকে অন্যান্য বছরের মতো এবারও পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদীতে নভেম্বর-জানুয়ারি মাসের সময়কালকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ রয়েছে। এছাড়া নিম্ন মেঘনা নদী, শাহবাজপুর চ্যানেল ও তেঁতুলিয়া নদীতে মার্চ ও এপ্রিল মাসে এবং শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং দেশের পঞ্চম অভয়া¤্রম হিসেবে চিহ্নিত দক্ষিণে চাঁদপুর জেলার মতলব ও শরীয়তপুর উপজেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকায় একই সময়ে ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকবে।
এদিকে বরিশালের হিজলা উপজেলার নাছকাটি পয়েন্ট, হরিনাথপুর পয়েন্ট, ধুলখোলা পয়েন্ট এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর পয়েন্ট এলাকার মেঘনার শাখা নদী, হিজলা উপজেলার ধর্মগঞ্জ ও নয়া ভাঙনী নদী এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার লতা নদীর ৬০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ ও জাটকার ষষ্ঠ অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণার সুপারিশ করা হলেও সরকারি তরফ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়নি।
মৎস অধিদফতরের মতে, দেশের ৪০টি জেলার ১৪৫টি উপজেলার দেড় হাজার ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ জেলে ইলিশ আহরণের সাথে জড়িত। এর ৩২ শতাংশ সার্বক্ষণিক ও ৬৮ শতাংশ খ-কালীন ইলিশ আহরণে সম্পৃক্ত। এছাড়াও ইলিশ বিপণন, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, জাল ও নৌকা তৈরিসহ মেরামত কাজেও আরো প্রায় ২০-২৫ লাখ মানুষ কাজ করছে। এর মধ্যে শুধু বরিশাল বিভাগেরই প্রায় দেড় লক্ষাধিক জেলে এ পেশার সাথে জড়িত বলে মৎস্য অধিদফতর জানিয়েছে। যার ৬৫ শতাংশ সার্বক্ষণিকভাবে ইলিশ আহরণে জড়িত। দেশে উৎপাদিত ইলিশের সর্বনি¤œ বাজারমূল্য বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উপকূলীয়

৩১ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ