বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
১২ নভেম্বর ১৯৭০, দিনভর মেঘলা ছিল আকাশ, সারাদিন ছিল গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। এমন আবহাওয়াকে স্বাভাবিক ভেবে প্রতিদিনের ন্যায় রাতে ঘুমিয়ে পড়ে সবাই। কিন্তু রাত প্রায় ১টার দিকে হঠাৎ প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘গোর্কি’ আঘাত হানে উপকূলে। মাত্র ৩০মিনিটের মধ্যে লন্ডভন্ড হয়ে যায় গোটা উপকূলীয় ও দ্বীপাঞ্চল। সেদিন গোর্কির আঘাতে প্রাণ হারায় উপজেলা হাতিয়া-সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপকূলের অর্ধলাখ মানুষ। মারা যায় লক্ষাধিক গৃহপালিত পশু। পরদিন ভোরের আলোয় উপকূলীয় অঞ্চলে যেন লাশের সারি।
জানা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে ৩৩টি কিল্লা নির্মাণের পর এগুলো দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রেড ক্রিসেন্টকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এসব কেল্লার কারণে ১৯৮৫ ও ১৯৯১ এর ভয়াবহ বন্যায় রক্ষা পেয়েছিল ব্যাপক জানমাল। কিন্তু বর্তমানে এ কেল্লাগুলো পুরোটাই বেদখলে চলে গেছে। ৩৩টি কেল্লার মধ্যে ৩টি বিভিন্ন সময়ে নদীর ভাঙনে বিলিন হলেও অবশিষ্ট ৩০টি কেল্লা বর্তমানে বেদখলে। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি জেলা ইউনিট এসব কেল্লা দেখভাল করার কথা থাকলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের লোকজনের মধ্যে তা লিজ দিয়ে দেয়। তবে লিজ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে রেডক্রিসেন্ট দায় দিচ্ছেন সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে। আর বন্দোবস্ত বিষয়টি জানা নেই বলছেন স্থানীয় প্রশাসন।
রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি নোয়াখালী জেলা ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন আশ্রয়স্থল হিসেবে দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের জন্য আশ্রয়ণ কেন্দ্র আর পশুপাখির জন্য নির্মিত হয় মাটির কেল্লা। যখন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষের সংকুলান হয় না তখন সাধারণ মানুষ ওই কেল্লাতে আশ্রয় নেয়। পুরো দেশের উপকূলীয় এলাকার ন্যয় জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ৪৫-৫০ ফুট উচ্চতার ১৮টি এবং সুবর্ণচরে ১৫টি মাটির কেল্লা নির্মাণ করা হয়। প্রত্যেকটি কেল্লার অনুকূলে ৫একর জমি বরাদ্দ, কেল্লা নির্মাণের জন্য কাটা হয় ২টি করে পুকুর। নির্মাণ শেষ হলে এসব কেল্লাগুলো তত্ত্বাবধান, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন পশু পাখির আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহারের জন্য রেড ক্রিসেন্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুবর্ণচরের মোহাম্মদপুর ও চরজব্বার ইউনিয়নে নির্মিত কেল্লাটিতে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছের ঘের করা হয়েছে। জামাল ব্যাপারী ও আবুল কাশেমসহ স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী কেল্লাগুলো দখল করে রেখেছে।
কেটে ফেলা হয়েছে অসংখ্য গাছ। একই অবস্থা চর আমান উল্যাহর কাটা বুনিয়া গ্রামের কেল্লাটি কেটে বাণিজ্যিকভাবে মুরগি, মাছ ও গরুর খামার গড়ে তোলা হয়েছে। বাউন্ডারী ওয়াল তোলা হয়েছে কেল্লার তিন পাশে, দেওয়া হয়েছে লোহার গেইট।
সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী প্রধান রফিক উল্যাহ সুমন জানান, উপকূলের এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে গবাদি পশু রয়েছে। দখলের কারণে বর্তমানে কেল্লাগুলো তার প্রকৃৃত আকার হারিয়ে ফেলেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে কেল্লাগুলোর অস্তিত্ব খুুঁজে পাওয়া যাবে না। এতে করে এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকি বাড়বে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে মানুষ ও তাদের পালনকৃত গবাদি পশুগুলো প্রাণ রক্ষার জন্য নিরাপদ স্থান পাবে না। তাই কেল্লাগুলো প্রভাবশালীদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করে সোসাইটির দখলে নেয়ার জোর দাবী জানান তিনি।
মোহাম্মদপুর সিপিবি ইউনিয়ন লিডার মো. নূর নবী জানান, নিয়ম না থাকলেও সোসাইটির জেলা ইউনিটের কর্মকর্তাদের নিজস্ব লোকজনকে লিজ দেওয়া হয়। কোথাও কোথাও বন্দোবস্ত দিয়েছে ভূমি প্রশাসন। ফলে কোন কেল্লার গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে, কোথাও সমতলে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে নির্মিত হয়েছে গরু, মুরগির খামার ও বসতি। দখলের বিষয়টি সোসাইটির বার্ষরিক সাধারণ সভায় জেলা ইউনিটের কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হয়েছে, কিন্তু এ বিষয়ে এখনও কোন ব্যবস্থা নেননি কর্তৃপক্ষ।
সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৈতী সর্ববিদ্যা জানান, মুজিব কেল্লা বন্দোবস্ত ও বেদখলের বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমে যেহেতু বিষয়টি জানতে পেরেছি এ বিষয়ে খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।