পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত অতি সম্ভনাময় তিন উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট। বঙ্গোপসাগর এবং সুন্দরনের কোল ঘেঁষে অবস্থিত এই তিন জেলার মুষ্টিমেয় মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস সুন্দরবনকেন্দ্রিক এবং সেই সাথে লোনা পানিতে মৎস্য চাষ বা নদীতে মাছ ধরে তাদের দিন চলে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী হওয়ায় এখানকার জনগণ বাধ্য হয়ে এ ধরনের পেশাকে বেছে নিয়েছে। অনেকের চাষাবাদযোগ্য জমি থাকলেও বছরের অধিকাংশ সময়ে মাটি লবণাক্ত থাকায় সেখানে ফসল ফলানো দুঃসাধ্য। তাই অনেকেই বেছে নেয় লবণাক্ত সহনশীল অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন ফসল উৎপাদনের পদ্ধতিকে।
দক্ষিণাঞ্চলের ওই জেলাগুলোতে বসবাসকৃত মানুষ জীবিকার তাগিদে নিজের জমিতে বা অন্যের থেকে লিজ নেওয়া জমিতে অক্লান্ত পরিশ্রমে উৎপাদন করে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি, কাঁকড়া, কুঁচিয়াসহ হরেক প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। দেশের বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সেগুলোর বিদেশের বাজারেও বেশ কদর রয়েছে। রপ্তানি বাণিজ্যে উজ্জ্বল সম্ভবনাময় এসব মৎস্যসম্পদ বিদেশে রপ্তানি করে প্রতি বছর সরকারি কোষাগারে জমা হয় মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা, যার ভিতর দেশের ‘হোয়াইট গোল্ড’ খ্যাত চিংড়ি সবার আগে প্রাধান্য পায়। রপ্তানি বাণিজ্যে বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ আসে বাইরের দেশগুলোতে এই চিংড়ি রপ্তানি করে। এছাড়া সম্প্রতি দেশের কাঁকড়া ও কুঁচিয়া বিদেশিদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যেগুলো অদূর ভবিষ্যতে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য খাত সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশের মানুষের মৎস্য চাহিদা মিটিয়ে সরকারি কোষাগারে বৈদেশিক অর্থ যোগানে যে এলাকার মানুষগুলোর ভূমিকা অপরিসীম, তাদের জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটে গৃহহীন, অনাহারে ও অর্ধাহারে। গলা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে, দিন রাত একাকার করে, গবাদি পশু, ছাগল, ভেড়াসহ সকল সহায়-সম্বল বানের পানিতে ছেড়ে দিয়ে নিজেরা খুঁজতে থাকে নিরাপদ আশ্রয়। সেই আশ্রয়টুকুও তাদের কাছে অপ্রতুল। এমনকি বছরের প্রায় ছয়মাসেরও বেশি সময় তাদের ঠাঁই হয় নিজেদের বসত ভিটা ছেড়ে রাস্তার উপরে কোন রকমে টঙ বেঁধে। পরিবারের সবাইকে দিনের পর দিন পার পার করতে হয় না খেয়ে। সমুদ্রের ন্যায় সীমাহীন জলরাশির জোয়ার ভাটায় তাদের সব কিছুকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। যেখানে লজ্জা নিবারণে নিজেদের পরনের কাপড়টুকুকে টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে আগুন ধরিয়ে কিছু রান্না করে নিজেদের উদর পূর্ণ করবে সেই ভাবনা যে বড্ড বেমানান।
এসব কথা একটি বার যে কেউ অন্তর দিয়ে অনুভব করলে গায়ের লোম শিউরে ওঠাটাই স্বাভাবিক। এটাই হচ্ছে দেশীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নিত্যকার জীবনযুদ্ধের চিত্র। উপক‚লীয় এলাকায় বাড়ি হওয়ায় খুব ছোট হতেই অনুভব করে এসেছি মানুষের বানের পানিতে সর্বস্ব বিসর্জন দেওয়া সেসব সংগ্রামী মানুষের দুর্বিষহ জীবন। ধনী-গরীব, নিন্মবিত্ত-মধ্যবিত্ত, ছোট-বড় সকলের হাহাকারে আকাশ বাতাস কম্পিত হতে শুনেছি। অনেকটা খাপ খাইয়ে নিয়েছি আর নিজেদের মনকে বুঝিয়েছি, হয়তো উপক‚লীয় আমাদের মতো দিশেহারা এসব মানুষের জন্মই হয়েছে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার জন্য। যদিও আমার মতো অনেকেই সেই ধারণা মাথায় নিয়েই চলে। একটু বৈরী আবহাওয়াতে উপক‚লের মানুষ প্রহর গুনতে থাকে গৃহ হারানোর ভয়ে, বসত ভিটা হারানোর ভয়ে। তিল তিল করে নিজেদের হাতে গড়ে তোলা সংসারের প্রতিটি প্রিয় জিনিস হারানোর ভয়ে। সন্তান-সন্তুতি, প্রিয়জন হারানোর ভয়ে। সংসারের খরচে সামান্য সহায়তার জন্য বহু আদরে গবাদি পশুসহ গৃহপালিত অন্যান্য প্রাণী হারানোর ভয়ে। দুর্যোগকালীন সময়ে যেখানে নিজেদের জীবনকে টিকিয়ে রাখা দুস্কর সেখানে ওসবের আশা করা যে একেবারে ভিত্তিহীন সেগুলো তারা মনকে বুঝিয়েই চলে। তাইতো গলা পানিতে নেমে, নিজেদের আদরের ধনকে বুকে সজোরে আটকে রেখে পাড়ি দেয় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।
তাদের সেই নিরাপদ আশ্রয়টুকুও জুটবে কিনা সেটা নিয়েও থাকে সংশয়। কেননা, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে বানানো সাইক্লোন সেন্টারগুলোও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বহুকষ্টে সেখানে আশ্রয় পাওয়ারা গাদাগাদি করে গবাদি পশুর সঙ্গে কোন রকমে দিনাতিপাত করে। আর এভাবে গাদাগাদি করে থাকতে থাকতে শুরু হয় ডায়েরিয়া, কলেরা, আমাশয়, সর্দি, কাশি, জ্বর সহ নানান ধরনের রোগ। যেখানে নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। নেই শুকনো কাপড়ের ব্যবস্থা। নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক শৌচাগারের ব্যবস্থা। সাথে যুক্ত হয় নিত্যদিনের খাবারের সংকট। যদিও জীবন যেখানে বিপন্ন সেখানে তাদের সুযোগ-সুবিধার আশা অনেকটা যুক্তিহীন। তারপরেও মানবেতর জীবনযাপনের এসব চিত্র স্বচক্ষে দেখলে যেকোন বিবেকবান ব্যক্তির মনে হবে, এ যেন এক নতুন মহামারী। নিজেদের বসত বাড়ি, ভিটেমাটি, সহায়-সম্বল, আপনজন জলাঞ্জলি দিয়ে সবাই বাধ্য হয়ে অস্তিত্ব টেকানোর সংগ্রামে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শুরু হয় টিকে থাকার সংগ্রাম। জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম। এই সংগ্রামে অনেকেই হেরে যায় আবার অনেকেই জিতে যায়। এই টিকে থাকার সংগ্রামে যারা হেরে যায় তারা হয়তো হেরে গিয়েই বেঁচে গেছে এমনটাই মনে হয়। আর জিতে যাওয়া মানুষগুলো আবারো প্রহর গুনতে থাকে পরবর্তী সংগ্রামের। কেননা, ক্ষত শুকানোর আগেই প্রকৃতি আবারো তার প্রলয়ংকরী সাজে আবির্ভূত হয়ে ধেয়ে আসে সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিতে। বিগত বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া সিডর, আইলা, বুলবুল, নার্গিস, ফনি, আম্ফান তারই উপযুক্ত স্বাক্ষর বহন করে।
প্রতি বছরেই একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপক‚লীয় মানুষের দুর্দশা এত গুণে বাড়িয়ে দেয়, সেটা দুর্যোগ পরবর্তী ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিভিন্ন সংবাদে আমরা দেখতে পাই। দুর্যোগ ঘটে যাওয়ার কিছুদিন পর্যন্ত চলে এই মহড়া যেটা সপ্তাহ পেরোতেই থেমে যায়। আর মিডিয়া সংবাদ প্রচার বন্ধ করা মানেই এসব মানুষের দুর্দশা আবারো আগের মতই সুপ্ত থেকে যাওয়া। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা কতটা দুর্বিষহ সেটা যারা স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা জানেন। অন্যদিকে দুর্যোগ পরবর্তী সরকারের ত্রাণ তহবিল থেকে বরাদ্দকৃত অর্থের খুব সামান্য পরিমাণ পৌঁছায় এসব দুর্দশাগ্রস্তের কাছে। সে সাহায্য ও সহযোগিতা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সরকার থেকে জনপ্রতি বরাদ্দের অর্থ বিভিন্ন জনের হাত বদলে ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তার পরিমাণ কমতে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিমাণ পুরোপুরি শূন্যের কোটায়ও পৌঁছায়। এ বিষয়গুলো আমাদের সবারই ভালো জানা। কেননা, যাদের মাধ্যমে বরাদ্দ ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছায় তাদের প্রায় সবার কাছেই এটি একটি অতি লাভজনক এবং পুঁজিহীন সফল ব্যবসা। তাই সকলেই এই ব্যবসায় মেতে ওঠে। রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে। কোন রকম বিনিয়োগ ছাড়া গরীব-মেহনতি জনগণের মাথা বিক্রি করে সরকারি বরাদ্দের অর্থ দিয়েই জনপ্রতিনিধিসহ অনেকের সম্পদের পাল্লা ভারী করার রেকর্ড আমরা অনেক ক্ষেত্রেই অহরহ দেখতে পাই।
আর সেই সাথে ভারী হয় তাৎক্ষণিকভাবে জনদরদী বনে যাওয়া ব্যক্তিবর্গের ফটোসেশনের পাল্লা। ফোটোসেশনের মাধ্যমে এসব জনদরদীর অনেকেই জাহির করতে চান তার নিজের বাবার টাকার সম্পদ বিক্রি করে বানভাসি মানুষের সাহায্য করছেন। ফটোসেশনের আগে তাদের ভেবে দেখা উচিৎ, নিজে ব্যক্তিগতভাবে কী দিয়েছেন। তা না হলে সরকারি বরাদ্দের অর্থ দিয়ে বানভাসি মানুষের সাহায্য করে সেটা গণমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে দেয়া তাদের ছোট মন মানসিকতা প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা জনগণের ট্যাক্সের টাকা এবং জনগণেরই প্রাপ্য। তাদের দায়িত্ব ভালোভাবে তা ভুক্তভোগী জনগণকে বুঝিয়ে দেওয়া। তাই এগুলো প্রদানের সময়, ফটোসেশন করে নিজেদের ক্রেডিট নেওয়ায় যেমন কোন কৃতিত্ব নেই, তেমনি ওই অর্থের কোনো অংশ ব্যক্তিগত কাজে লাগানোর অধিকারও কারো নেই। এগুলো জনসমক্ষে হীনমন্যতা, নীচ মন মানসিকতার পরিচয় বহন করা ব্যতীত আর কিছুই প্রকাশ করে না।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি নৈমিত্তিক ঘটনা এবং মাঝেমধ্যে প্রকৃতিতে সেটার উপস্থিতি স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু দুর্যোগকে মোকাবেলা করার মতো যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে দেশের একটা বড় অংশের মানুষ, তাদের বসত ভিটা, তাদের সংস্কৃতি আস্তে আস্তে বিলীনের পথে এগিয়ে যাবে, যার ইঙ্গিত আমরা বহুবার পেয়েছি। নদীমাতৃক দেশে সাগরের সাথে সংযুক্ত নদীসমূহতে খরস্রোত থাকবে সেটাও স্বাভাবিক। কংক্রিটের টেঁকসই বাঁধ ছাড়া এসব খরাস্রোতা নদীকে কোনভাবেই সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। যেখানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দরকার। দরকার টেঁকসই বেড়িবাঁধের। বার বার অর্থ বরাদ্দের চেয়ে একেবারে মোটা অঙ্কের বাজেট দিয়ে সরকারের কোন বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য বিশেষ বাহিনী দিয়ে এই টেঁকসই বাঁধের কাজ করা যেতে পারে। এতে করে জনগণের টাকার জনগণের কল্যাণে সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
দুর্যোগ পরবর্তী বাঁধ মেরামতের জন্য সরকার প্রতিবছর মোটা টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। কিন্তু সেই বাজেটের বেশিরভাগ অংশই চলে যায় বিভিন্ন ঠিকাদার বা ওই সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত ব্যক্তিদের পকেটে। আবার যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে তখন দেখা যায়, পূর্বের যাবতীয় বরাদ্দ বা সরকারি সাহায্য আবারো জলে ভেসে শেষমেশ জনগণের একই দুর্দশার পুনিরাবৃতি ঘটে। যেটা স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার ব্যর্থতা বলে মনে হয়। সরকারের উচিৎ বিষয়টিকে অতীব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে টেকসই বেড়িবাঁধের যাবতীয় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে দুর্যোগ পূর্ববর্তী যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া। সেইসাথে সুন্দরবনকে আগামী দিনের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার মেগা প্রকল্প নেয়ার বিষয়টিও সরকার ভেবে দেখতে পারে। পৃথিবীর দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত খ্যাত কক্সবাজারের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। সুন্দরবনকে উপযুক্ত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুললে সরকারি কোষাগার যেমন সমৃদ্ধ হবে, সেইসাথে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নও বাস্তবায়িত হবে।
পাশেই বঙ্গোপসাগর, তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সাথে নিয়েই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চলতে হবে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই বলে প্রতিবার ঘটে যাওয়া দুর্যোগে এই সীমাহীন দুর্ভোগ মেনে নেওয়া যায় না। সম্প্রতি ‘ইয়াস’র প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস তাদের সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে। আগামীতে আরও ভয়ানক কিছু তাদের সামনে অপেক্ষা করছে সেটা ভাবতেই সবাই শিউরে উঠছে। যে এলাকার মানুষ দেশের রাজস্ব খাতে বেশ বড় একটা অবদান রাখে তাদের এই দুর্দশা স্বচক্ষে অবলোকন করা অনেক কষ্টকর। একমাত্র টেকসই বেড়িবাঁধই তাদের এই দুর্দিন থেকে রক্ষা করতে পারে। তা না হলে এভাবে চলতে থাকবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম, বছরের পর বছর। আর মাঝ দিয়ে রাঘব বোয়ালেরা ঠিকই তাদের সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবে। তাই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সকলের আজ প্রাণের দাবি ‘সরকারি ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই’।
প্রতিবারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে যাওয়ার পরে তাদের দুঃখ দুর্দশা দেখলে চোখের পানি আটকে রাখা দায় হয়ে দাঁড়ায়। তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন, অনুগ্রহ করে এসব সহায় সম্বলহীন মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাগবে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হোক। খরস্রোতা নদীর কাছে মাটির রাস্তা কোনভাবেই টেকসই নয়, যেটা বহু পূর্বে প্রমাণিত হয়েছে। বাইরের দেশগুলোতে দেখা যায়, সেখানে নদী অনেক ছোট কিন্তু নদীর দুইপাশের বাঁধগুলো সবই কংক্রিটের গাঁথুনি, যে গাঁথুনি হাজার বছরেও কিছু হওয়ার নয়। আমাদের উপক‚লবর্তী নদীর স্রোত অনেক বেশি। নিন্মচাপ শুরু হওয়ার সাথে সাথে অস্বাভাবিক আকারে জলোচ্ছ্বাস মাটির বাঁধ ভেঙে বা উপছে ভিতরে প্রবেশ করা খুবই সহজ। অনেক সময়ে দেখা যায়, কোন রকম নিন্মচাপ ছাড়াই অমাবস্যা বা পূর্ণিমার তিথিতে ভরা জোয়ারে এসব নদীর বাঁধ ভেঙে বা উপছে প্রায়ই ওইসব এলাকা প্লাবিত হয়।
পরিশেষে এটুকু বলতে চাই, যেকোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে যাওয়ার পরে ভুক্তভোগীদের সাহায্য-সহযোগিতার চেয়ে দুর্যোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ জানমালের সুরক্ষার নিশ্চয়তা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার। আর এই সবগুলোরই বেশ অভাব দক্ষিণাঞ্চলের দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষের। তাদের কাছে নিরাপদ মাথা গোঁজার ঠাঁই, দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের নিশ্চয়তা, সন্তানের লেখাপড়ার নিশ্চয়তা, অনেকটা রূপকথার গল্পের মতো। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমাদের দেশ। সেইসাথে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ বাংলাদেশের এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই মুহূর্তে দেশের জনগণের এমন দুর্দশা সত্যিই বেমানান। সরকারি নীতি নির্ধারকরা বিষয়টিকে অতীব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করি।
লেখক: গবেষক,ফুজিয়ান এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি, ফুজো, ফুজিয়ান, চীন।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।