পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, জোয়ার-ভাটা এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপক‚লীয় এলাকার স্বাভাবিক ঘটনা। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের ফলে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েই চলছে। এসব দুর্যোগের কবল থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করতে বেড়িবাঁধ এবং বনায়নের মাধ্যমে সবুজ বেস্টনি গড়ে তোলা হয়। তবে ৩০ বছর আগের বেড়িবাঁধ নানান দুর্যোগে আজ ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। অসাধু ব্যক্তিরা বনায়নের গাছ কেটে চিংড়ি ঘের তৈরি করেছে। সব মিলিয়ে উপকূল এখনও অরক্ষিত। আকাশে কাল মেঘ ও সাগরের নিম্নচাপ দেখলেই উপক‚লবাসীর বুক ভয়ে কেঁপে উঠে। দেশের সাগর তীরবর্তী অর্থাৎ উপক‚লীয় ২১টি জেলায় লাখ লাখ মানুষের বসবাস। কিন্তু এই বিস্তীর্ণ উপকূলের যথাযথ সুরক্ষা নেই। উপকূলের রক্ষাকবচ বেড়িবাঁধ সর্বত্রই ভাঙাচোরা ক্ষতবিক্ষত। অনেক জায়গায় বাঁধের চিহ্নও নেই। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে তছনছ উপক‚লীয় এলাকার বেড়িবাঁধ। এতে করে প্রতি বছর এসব এলাকার বসতভিটা, ফল-ফসলি জমি, ফাউন্দি ক্ষেত, খামার, লবণের মাঠ, চিংড়িসহ মাছের ঘের, মিঠাপানির উৎস পুকুর-কুয়া-নলকূপ, হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে একাকার। হাজার হাজার একর জমি লবণাক্ত হয়ে চাষের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। এসব এলাকায় উঁচু বাঁধ নির্মাণে পরিকল্পনা থাকলেও বাঁধ নির্মাণে নজর নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের। ভাঙা বাঁধ মেরামতে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও তাতে রক্ষা হয় না উপক‚ল। অথচ টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে সমুদ্রবন্দর, পোতাশ্রয়, বিমানবন্দর, শিল্প-কারখানা, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদসহ অপার সম্ভাবনা এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাগর পাড়ের বাঁধগুলো উঁচুকরণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্টদের খুব একটা গুরুত্ব ও নজর না থাকার কারণে জোয়ারে পানিতে প্রতি বছরই উপক‚লীয় এলাকা ডুবে-ভাসে। গতবছর দীর্ঘস্থায়ী জোয়ারে সাগর পাড়ের লাখ লাখ মানুষ ছিল পানিবন্দি। বর্তমানে অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে উপক‚লের অনেক এলাকা। দেশের দক্ষিণ-পূর্বে টেকনাফ-কুতুবদিয়া, বাঁশখালী-স›দ্বীপ, ল²ীপুর থেকে দক্ষিণের দ্বীপজেলা ভোলা, বরিশাল, খুলনা হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাগেরহাট-সাতক্ষীরা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে বিস্তীর্ণ উপকূল-চর-দ্বীপাঞ্চলে শুধুই ভাঙন। এসব এলাকার কয়েক লাখ বাসিন্দা এবং সেখানকার জনবসতি, অবকাঠামো অরক্ষিত। অনিশ্চিত জীবন-জীবিকা। তাইতো উপকূলবাসী কাফনের কাপড় পরে ভাঙা বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে দাবি জানায় ‘ত্রাণ চাই না, টেকসই বেড়ি বাঁধ চাই’।
গত সপ্তাহেও খুলনা-সাতক্ষীরা ও সংলগ্ন দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নিম্নচাপ অবস্থান করে। এর ফলে অতিবৃষ্টি ও প্রবল জোয়ারে গোটা উপক‚লভাগ, নদ-নদী, খাল-বিলসহ ফুলে-ফুঁসে উঠেছে। সতর্ক সঙ্কেত না থাকলেও গতকাল রোববার পর্যন্ত সমুদ্র ছিল উত্তাল। অস্বাভাবিক জোয়ারে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। লোকালয় পানিতে সয়লাব। আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে জানা গেছে, চলতি আগস্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র) মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দু’টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরফলে উপক‚লজুড়ে ভারি বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারে একই ধরনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দেশের উপকূলীয় এলাকার ৮ হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালে আইলার পর উপকূল এলাকার বাঁধের অনেক জায়গা ভেঙে যায়, অনেক জায়গা বানের তোড়ে ভেসে যায়। কিন্তু তার বড় অংশ এখনো যথাযথভাবে মেরামত করা হয়নি। এতে করে গোটা উপক‚লীয় এলাকা এখন অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। গত বছর আম্পানে উপক‚লীয় জেলার ১৫২টি স্থানে ৫০ দশমিক ৪৭৮ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে বিলীন হয়েছে। ৫৮৩টি স্থানে ২০৯ দশমিক ৬৭৮ কিলোমিটার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৮টি নদীর তীর ভাঙনে ১৩ দশমিক ২০৮ কিলোমিটার বিলীন হয়েছে এবং ৩৭টি নদীর তীর সংরক্ষণ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ক্ষতি হয়েছে ১২ দশমিক ৮০০ কিলোটার। এই বিধস্ত উপক‚লকে এখনো মেরামত করা হয়নি। ফলে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ও টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভাসছে উপকূলের জেলাগুলো।
বিশিষ্ট জলবায়ু ও পানি বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, আইলা-সিডর-আম্ফান ও দীর্ঘ বন্যায় দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এবার সমুদ্রে সৃষ্ট লঘুচাপের ফলে জোয়ারে পানিতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এসব প্রাকতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে বর্তমানে বাঁধের উচ্চতা সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে ১৫ ফুট, ভেতরের দিকে ১৪ কিংবা ১২ ফুট। এগুলো যদি সবল থাকে তাহলে ১৪-১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস ঠেকিয়ে দেবে। কিন্তু বাস্তবে এসব বাঁধও ভাঙা-বিধস্ত। এ ছাড়া বর্তমানে ১৭-১৮ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত জোয়ারের পানি উঠছে। তাই এসব বিবেচনা করে উপক‚লের বেড়িবাঁধগুলো টেকসইভাবে নির্মাণ করতে হবে। অন্যথায় প্রতি বছর বাঁধ ভাঙবে আর এসব ভাঙা মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হবে। উপকূলবাসীর দুর্ভোগ তাতে দূর হবে না।
উপক‚লীয় এলাকার বর্তামন অবস্থা আমাদের সংবাদদাতারা তাদের রিপোর্টে তুলে ধরেছেন। সে আলোকে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড়ের মুখে প্রাণ হাতে নিয়ে উপক‚লবাসীর বসবাস। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটাছুটি। যখন ঘূর্ণিঝড় হয় না তখনও প্রবল জোয়ার ভাটায় লোনা পানি এপাশ-ওপাশ খেলছে। এতে করে বসতভিটা, ফল-ফসলি জমি, ফাউন্দি ক্ষেত, খামার, লবণের মাঠ, চিংড়িসহ মাছের ঘের, মিঠাপানির উৎস পুকুর-কুয়া-নলক‚প, হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে একাকার। অথচ বেড়িবাঁধ অবহেলিতই রয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বদ্বীপ এবং বঙ্গোপসাগরের কোলে ফানেল বা চোঙ্গা আকৃতির অবস্থানে বাংলাদেশ। ভ‚প্রাকৃতিক কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে দুর্যোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। সুদূর অতীত থেকে এ যাবত বছরে একাধিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। তাছাড়া জলবায়ুর বৈরি আচরণে ফুলে-ফুঁসে উঠা সমুদ্রের অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে অনেক এলাকা। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ‘নাভি’ আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, হালিশহর এবং দেশের প্রধান ‘সওদাগরী বাণিজ্য পাড়া’ চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ সামুদ্রিক জোয়ারে ডুব-ভাসি করছে। ঢলের পানিতে থৈ থৈ সড়কে সাম্প্রতিক সময়ে নৌকাযোগে অফিসে গেছেন সরকারি কর্মকর্তারা। সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্র, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, গুদাম-আড়ত, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, সরকারি কমার্স কলেজসহ অধিকাংশ স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, হাসপাতাল, সড়ক অলিগলিতে জোয়ারে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে করে ক্ষয়ক্ষতি কোটি কোটি টাকার। ইতোমধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন অনেকেই। অথচ চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধ আজও অধরা।
আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। যা উপক‚লজুড়ে ‘সাইলেন্ট দুর্যোগে’ রূপ নিয়েছে। অথচ যুগের প্রয়োজনে লাগসই প্রযুক্তিতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেই। মীরসরাই-সীতাকুন্ড-সোনাগাজীতে নির্মাণাধীন দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পজোন ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর’ থেকে চট্টগ্রাম মহানগরী, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া হয়ে কক্সবাজার উপকূলভাগ পর্যন্ত ‘সুপার ডাইক’ অর্থাৎ সুউচ্চ বেড়িবাঁধ-কাম-সড়ক নির্মাণের প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। তবে এখনও তার বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়নি। নেদারল্যান্ডস ও বিশ্বের সমুদ্রবেষ্টিত বিভিন্ন দেশ আধুনিক হাইড্রোলজি প্রযুক্তির বেড়িবাঁধ, রিং-বাঁধ ও আঁড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করে সমুদ্র ও উপক‚লভাগে বিশাল আয়তনের ভূমি জাগিয়ে তুলছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সমুদ্রের করাল গ্রাসে অসহায়ভাবে প্রতিনিয়ত হারাচ্ছে ব্যাপক হারে মূল্যবান ভূমি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের দ্বীপাঞ্চল, চর ও উপকূলে ৩৫ শতাংশ স্থানে বেড়িবাঁধের চিহ্ন প্রায় মুছে গেছে। প্রায় ৫০ ভাগ বেড়িবাঁধ ক্ষত-বিক্ষত, কম-বেশি বিধ্বস্ত, জরাজীর্ণ, নড়বড়ে। বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও জোড়াতালির মেরামতের নামে নয়-ছয় করেই সারাবছর চলে যথেচ্ছ অনিয়ম-দুর্নীতি। এর পেছনে পাউবোর একশ্রেণির অসৎ প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী-ঠিকাদার মিলে সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে উঠেছে। ভাঙাচোরা বেড়িবাঁধ উপকূলবাসীর মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বেড়িবাঁধ সংস্কার, জোড়াতালি মেরামত কাজের মান নিয়ে উপযুক্ত তদারকি, যাচাই, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার বালাই নেই। মানসম্মত কাজ না হওয়ায় বেড়িবাঁধ টিকছে না। বালির বাঁধের মতোই বিলীন হয়ে যাচ্ছে সাগরের পেটে। বেড়িবাঁধ ধসে যায়, আসে নতুন কাজ। নামে মাত্র কাজ করেই বিলের মোটা অঙ্কের টাকা তুলে নিয়ে সটকে পড়ে ঠিকাদাররা।
তাছাড়া বেড়িবাঁধ যথেষ্ট উঁচু করে নির্মিত হয় না। সামুদ্রিক জোয়ারের সমান উঁচু করে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার না করায় জোয়ারের পানি বেড়িবাঁধ টপকে ফসলি জমি, লবণ মাঠ ও লোকালয় ভাসিয়ে দিচ্ছে। অনেক জায়গায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে বেড়িবাঁধ। নড়বড়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় কোনোমতে টিকে আছে বেড়িবাঁধ। উপকূলীয় অনেক জনপদে বেড়িবাঁধ ব্যবহৃত হয় স্থানীয় যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে। কিন্তু বাঁধ ক্ষত-বিক্ষত থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় জিওব্যাগ তছনছ হয়ে গেছে সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে আনোয়ারা, বাঁশখালী, সীতাকুন্ড, স›দ্বীপ, পতেঙ্গা, কাট্টলী, হালিশহরে উপক‚লীয় বেড়িবাঁধের বর্তমানে নাজুকদশা। নিয়মিত জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল শতাব্দীর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণি, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল, ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও সর্বশেষ এ বছর ২৬ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। প্রতিবছর এক বা একাধিক ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় বেড়িবাঁধের ভাঙাচোরা অববাঠামো আরও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে করে উপক‚লবাসী জীবন-জীবিকা এবং মূল্যবান অবকাঠামো হুমকির মুখে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, ‘সুপার ডাইক’ অথবা অন্যান্য উন্নত হাইড্রোলজি প্রযুক্তির স্থায়ী বেড়িবাঁধ কাম সড়ক নির্মাণ এখন জরুরি। সেকেলে বেড়িবাঁধ টিকছে না। সমুদ্রবন্দর, পোতাশ্রয়, বিমানবন্দর, শিল্প-কারখানা, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদসহ অপার সম্ভাবনার ধারক উপকূল অরক্ষিত রয়ে গেছে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল, খুলনা, বরগুনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরায় সাগরের সাথে লাগোয়া দ্বীপ ও চরাঞ্চল ক্রমেই লোনা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। লোনার আগ্রাসন বিস্তারের সাথে সাথে সর্বনাশ হচ্ছে ফল-ফসলি জমির। কৃষি-খামার, পর্যটন, বিনিয়োগ, শিল্পায়নসহ চর-উপকূল-দ্বীপাঞ্চল সুরক্ষা, উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান প্রসারের জন্য মজবুত টেকসই বাঁধের বিকল্প নেই। এরফলে উপক‚লীয় অঞ্চলের বহুমুখী অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ হবে দেশ।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি প্রবীণ অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক এলাকা আগ্রাবাদ, চাক্তাই খাতুনগঞ্জে জোয়ারের সমস্যার স্থায়ী সমাধান জরুরি। এর জন্য দীর্ঘদিনের নাগরিক দাবি চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধ মজবুত এবং জোয়ারের তুলনায় যথেষ্ট উঁচু করে নির্মাণ করা প্রয়োজন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এ জে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, উপক‚লে বাঁধের ভাঙনস্থলে বালুর বস্তা ও কংক্রিটের ব্লক ফেলে সমাধান হবে না। উপক‚ল সুরক্ষায় স্থায়ী সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। উন্নত ও নতুন প্রযুক্তির বেড়িবাঁধের কলাকৌশল কাজে লাগাতে হবে। এর জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ প্রয়োজন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল এবং সমুদ্রের জোয়ারের চেয়ে অনেক বেশি উচ্চতার সুপার ডাইক, সড়কসহ বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। তবে বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত থাকা চাই।
কক্সবাজার থেকে শামসুল হক শারেক জানান, সাগরে লঘুচাপের সপ্তাহব্যাপী ভারি বর্ষণে কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি হয়েছে তিন লাখেরও বেশি মানুষ। জেলার দুই প্রধান নদী বাঁকখালী ও মাতামুহুরি নদীতে ঢলের পানির তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে ডুবে গেছে চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, ঈদগাঁও, কক্সবাজার সদরের বিস্তীর্ণ জনপদ। পানিবন্দি এসব মানুষের সুপেয় পানিও খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এদিকে বৃষ্টির পানিতে নতুন করে ডুবে গেছে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। বেড়িবাঁধ ভেঙে নাফ নদীর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত একর চিংড়ি ঘের, ঘরবাড়ি ও রাস্তা ঘাট। মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ি ও কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল এলাকায় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে চলছে সাগরের লোনা পানির জোয়ার ভাটা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মতে বন্যায় প্রায় ৪৫টি ইউনিয়নের সাড়ে ৫ শত গ্রামের আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।
জানা গেছে, কক্সবাজার উপক‚লে টেকনাফ থেকে কুতুবদিয়া ও পেকুয়া পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপক‚লীয় বেড়িবাঁধ আছে ৫৯৫ কিমি.। আর পানি নিষ্কাশনের জন্য সøুইস গেট আছে ২৫৩টি। উপক‚লে প্রচুর সবুজ বন তৈরি হলেও বনদস্যুরা তা কেটে চিংড়ি ঘের করে। কয়েক শত সাইক্লোন শেল্টার পড়ে আছে অরক্ষিত। আর টেকসই বেড়িবাঁধ যেন অধরা স্বপ্ন। বেড়িবাঁধ নির্মাণ নিয়ে চলে আসছে লুটপাটের মহোৎসব।
কক্সবাজার কুতুবদিয়া থেকে হাছান কুতুবী জানান, দেশের সম্ভাবনাময় দ্বীপ-উপজেলা কুতুবদিয়া। এই দ্বীপরক্ষাবাঁধ নির্মাণে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার অর্থ বরাদ্দ করে সরকার। কিন্তু আধুনিক ডিজাইনমতে কাজ না হওয়ায় টেকানো যাচ্ছে না কুতুবদিয়া রক্ষাবাঁধ। এতে করে প্রতি বর্ষায় অমাবস্যা-পূর্ণিমাসহ স্বাভাবিক জোয়ারেও সামুদ্রিক নোনা পানিতে সয়লাব হওয়ায় দ্বীপটির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। বঙ্গোপসাগরের অব্যাহত ভাঙনের মুখে দ্বীপটি দ্রæত ছোট হয়ে যাওয়াসহ সহায়-সম্পদের নিরাপত্তা না থাকায় প্রতি বছর কুতুবদিয়া ছাড়ছে অসংখ্য লোক। ষাটের দশকে কুতুবদিয়ার আয়তন ছিল ১২০ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে দ্বীপের আয়তন ৪০ বর্গকিলোমিটারে ঠেকেছে। দ্বীপের চতুর্দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ থাকলেও তার মধ্যে প্রায় ১৯ কিলোমিটার ভাঙা। ওই ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে দ্বীপের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ভাঙছে নতুন নতুন এলাকা। এতে দ্বীপের আয়তন ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। কিন্তু দ্বীপটি রক্ষার স্থায়ী বেড়িবাঁধ নিয়ে কারও যেন মাথাব্যথা নেই। বর্তমানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ-সংস্কার কাজে বরাদ্দকৃত ১২০ কোটি টাকার চলমান কাজেও ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
নোয়াখালী থেকে আনোয়ারুল হক আনোয়ার জানান, জেলার উপক‚লীয় ও দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোনো সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আবারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে দ্বীপবাসী। উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, ফণি, আইলা ও আম্ফানে বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এ অঞ্চলে। এতে করে জনসাধারণের মধ্যে আবারও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
খুলনা থেকে ডিএম রেজা সোহাগ জানান, সিডর পরবর্তী সময়ে যে কোনো দুর্যোগে পাউবোর বাঁধ ভেঙে সহায়-সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে বরাদ্দ দিতে সরকারের আগ্রহের কমতি নেই। কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থের অপচয় এবং দুর্নীতি বন্ধ না হওয়ায় উপক‚লের মানুষের নায্য দাবি পূরণ হয়নি আজও। প্রতিবছর বাঁধ ভেঙে যায়, কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু দুর্নীতি লুটপাটের কারণে বাঁধ যথাযথভাবে মেরামত হয় না।
খুলনা কয়রা থেকে মোস্তফা শফিক জানান, গত সাতদিন যাবৎ অবিরাম বৃষ্টির ফলে সমগ্র কয়রা উপজেলা এখন হাঁটুপানির নিচে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কয়রা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়ন প্রবল বর্ষণের ফলে শত শত চিংড়ি ঘের, পুকুরের মাছ, আমন বীজতলাসহ প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে।
বাগেরহাট থেকে এস এম সামছুর রহমান জানান, জেলার শরণখোলায় নির্মাণাধীন ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধ খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে বলেশ্বর নদীর হঠাৎ কয়েক দফা ভাঙনের ফলে কয়েক বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাত ও সর্বশেষ গত ৩ দিনের টানা বর্ষণে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় উপক‚লীয় এলাকার বসতিদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বর্ষাকাল হওয়ায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
বরগুনা থেকে জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা জানান, বেড়িবাঁধের সংস্কার বা উন্নয়ন দীর্ঘ ৬১ বছরের না ঘটায় অব্যাহত ভাঙনে প্রতিনিয়তই চরম দুশ্চিন্তায় জীবনযাপন করছে বরগুনাবাসী। শুধুমাত্র যে দুর্যোগ এলে উপক‚লবাসীর মনে প্লাবিত হওয়ার আতঙ্ক থাকে এরকম নয়, সব সময়ই বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্ক নিয়ে থাকছে এ উপক‚লের মানুষ। বরগুনা জেলার ৮০৫ কিলোমিটারজুড়ে বেড়িবাঁধ নির্মিত হলেও সিংহভাগ রয়েছে চরম নাজুক অবস্থায়। সাম্প্রতিককালের ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে দীর্ঘ এ বেড়িবাঁধের অর্ধশতাধিক স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত করে ফেলে এলাকার আবাদি ফসল, মাছের ঘের ও পুকুর।
ফেনী থেকে মো. ওমর ফারুক জানান, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষজনকে বর্ষামৌসুম এবং বিভিন্ন দুর্যোগকালীন সময়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। প্রতিবছর ভরা পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় সাগর ও নদ-নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। তখন সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয় ওইসব উপক‚লীয় এলাকা। বড় ফেনী নদী ও ছোট ফেনী নদীর কূলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার অংশে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। বেড়িবাঁধ না থাকায় নদীতে জোয়ার সৃষ্টির ফলে জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় এসব এলাকার মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলের খেত ও মৎস্য ঘের।
লক্ষীপুর থেকে এস এম বাবুল (বাবর) জানান, রামগতি-কমলনগর উপজেলায় ৩১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ না থাকায় মেঘনার আকস্মিক জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় উপক‚লীয় এলাকা। বেড়িবাঁধ না থাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন, শস্য উৎপাদন ও লবণাক্ত পানিপ্রবাহ রোধ করা যাচ্ছে না। একটু জোয়ার হলেই পানিতে সব তলিয়ে যায়। এতে রাস্তাঘাট, ফসল, মৎস্য সম্পদসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদহানি ঘটে। ফসলি জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে ফসল উৎপাদন। সর্বশেষ গত ২৩ জুলাই শুক্রবার দুপুরে পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে রামগতি ও কমলনগরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ডুবে গেছে চরাঞ্চলের ফসলের মাঠ, ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের। এতে দুই উপজেলার অন্তত ১৫ গ্রাম ডুবে পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ১২ হাজার মানুষ।
ভোলা থেকে মো. জহিরুল হক জানান, জলার প্রমত্তা তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে ভেদুরিয়া ইউনিয়ন। গত এক মাসে ওই ইউনিয়নের চর ভেদুরিয়া ও মধ্য ভেদুরিয়া গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এতে তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ব্যাংকের হাটের টেক্সটাইল কলেজসহ গ্যাস ক‚পটিও।
পটুয়াখালী থেকে মো. জাকির হোসেন জানান, জেলার ৪১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে নিজামপুর, লালুয়া, চালিতা বুনিয়া, চরআন্ডা, লতারচর, চর মোন্তাজ। এই ৪১ কিলোমিটারের মধ্যে চরমোন্তাজ, চালিতাবুনিয়, চরআন্ডার প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘদিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ খোলা অবস্থায় রয়েছে, এই এলাকাগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। গলাচিপার আলাইপুর লঞ্চঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধ অতিক্রম করে পানি ভেতরে প্রবেশ করে।
সাতক্ষীরা থেকে আবদুল ওয়াজেদ কচি জানান, টানা ভারি বর্ষণে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও আমন ধানের বীজতলা। ২৭ জুলাই সন্ধ্যা থেকে ২৯ জুলাই রাত পর্যন্ত টানা বর্ষণে জেলাজুড়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, টানা বর্ষণে জেলার তালা, কলারোয়া, আশাশোনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ, শ্যামনগর ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন হাজারো পরিবার।
বাগেরহাট শরণখোলা থেকে সান্তানুর রহমান খোকন জানান, বাগেরহাটের শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুইস গেট এখন এলাকাবাসীর মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ২৭ জুলাই থেকে টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে উপজেলার ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফসলের ক্ষেত, মাঠ, পুকুর, রাস্তা-ঘাট, এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত সুইস গেটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।