বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নাসিক নির্বাচন নিয়ে খালেদা জিয়ার অভিযোগের প্রমাণ চান ওবায়দুল কাদের
স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অভিযোগ প্রমাণ করার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে ওই নির্বাচনে সরকার দলের ষড়যন্ত্র প্রমাণ করতে না পারলে বিএনপি নেত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডির প্রিয়াংকা কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ দাবি জানান। ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের সমাবেশ সফল করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের (ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর জেলা, গাজীপুর মহানগর, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, দলীয় মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানদের নিয়ে ওই মতবিনিময় সভা করে আওয়ামী লীগ।
প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে পৌনে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। তবে ওই নির্বাচন ‘ফেয়ার’ হয়নি অভিযোগ করে গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বড় দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, বাইরে হলো সব ফিটফাট, ভেতরে হলো কী? বুঝতে পারছেন যে, ভেতরে যত রকমের দুনিয়ার ষড়যন্ত্র আর বাইরে থেকে সব ফিটফাট দেখায়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বেগম জিয়াকে অনুরোধ করবো ষড়যন্ত্র জাতির সামনে প্রমাণ করুন। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন নিয়ে মির্জা ফখরুল, রিজভী সাহেবরা মনগড়া অনেক কথা বলেছেন। শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়া বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে নাকি ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমি বেগম জিয়াকে অনুরোধ করবো ষড়যন্ত্র জাতির সামনে প্রমাণ করুন। আর প্রমাণ করতে না পারলে, আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করুন। বুধবার দেশের ৬১ জেলায় অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আরেক নালিশ মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন জেলা পরিষদ নির্বাচন নাকি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এরপর ফখরুল সাহেবও ওনার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন।
তিনি বলেন, কোন সংবিধানের বলে জিয়াউর রহমান এদেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, আমরা জানতে চাই। সংবিধানের কথা বলবেন না। আপনারাই সংবিধান রক্তাক্ত ও পদদলিত করেছেন। আপনাদের মুখে সংবিধানের কথা শুনলে ভুতের মুখে রামরামের মতো শোনায়।
কাদের বলেন, ২০০০ সালে আমরা সরকারে থাকার সময় জেলা পরিষদের আইন হয়েছে। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক থাকলে, আপনারা সংশোধন করেননি, কেন বাতিল করেননি ? এখানে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু নেই।
সভায় সকল নেতাকর্মীদের ১০ জানুয়ারির সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, সোহরাওয়ার্দী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের সমাবেশ করবো আমরা। এই সমাবেশকে সফল করতে হবে। তাছাড়া ৫ জানুয়ারীতে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশে সকল জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ করবেন। তাছাড়া ৫ জানুয়ারী ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ‘রাসেল স্কয়ারে’ এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে সমাবেশ করবে বলে জানান কাদের।
যৌথ সভায় জেলার নেতাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপুমনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
সামনের বিপদের দিনে শাকিলের মত কলমযোদ্ধার দরকার ছিল
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের স্মরণ সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের সামনে বিপদের কালো ছায়া। এ সময়ে শাকিলের মত একজন শক্তিশালী কলমযোদ্ধা, সাহসী কবির খুব প্রয়োজন ছিল। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পকে উপড়ে ফেলতে তার মত কলমযোদ্ধার দরকার ছিল। আমরা এখনও হলি আর্টিজান, শোলাকিয়ার লড়াই থেকে বের হতে পারি নাই। এ লড়াইয়ে শাকিলের দরকার ছিল।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ আয়োজিত স্মরণ সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, শাকিলের লেখা আমাকে মুগ্ধ করে। প্রধানমন্ত্রী তার গুরুত্বপূর্ণ খসড়া শাকিলকে দিয়ে তৈরি করাতেন। আমাদের দলে অনেক বিখ্যাত লেখক আছেন কিন্তু শাকিল ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দের। সে সহজ সরল ভাষায় যুক্তির সাহায্যে কঠিন আক্রমণ করতে পারত। অসাধারণ ছিল তার লেখার হাত।
সেতুমন্ত্রী বলেন, তার কষ্ট ছিল। ছাত্রলীগেই তার কষ্ট ছিল। আমি তাকে একটি প্রবাদ শুনাতাম ‘তোমার সময়ের আগে নয়, তোমার ভাগ্যের চেয়েও বেশি নয়’। সে খুবই স্মৃতিকাতর ও আবেগপ্রবণ ছিল। প্রধানমন্ত্রী তাকে ছেলের মত স্নেহ করত।
সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, কিছু কিছু মৃত্যু আছে পারদের মত হালকা। আবার কিছু কিছু মৃত্যু আছে পাহাড়ের মত ভারী। জীবনের মধ্য গগন থেকে উদীয়মান যে তারা কক্ষচ্যুত হয়ে হঠাৎ হারিয়ে গেল। তার মৃত্যু আমাদের কাছে পাহাড়ের মত ভারী।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ১/১১ এর সময়ে শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলেন। তার সঙ্গে অনেকেই গ্রেফতার হলেন। তখন তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখে যান। সেই সময়ে শাকিল সেই চিঠিটি ছাপিয়ে সারাদেশে প্রচার করেন। তার যে দায়িত্ব পালনে শাকিলের যে নিষ্ঠা ছিল তা আশ্চর্যজনক। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে লেখালেখি করলেও সাহিত্য অঙ্গনে সে সকলের ভালবাসা পেয়েছিল। সে যে কতটা আবেগপ্রবণ ছিল তার বহু প্রমাণ দিয়ে গেছেন। ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হলে বিদায় নিতে এসে সে অঝোরে কেঁদেছিলেন।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস সামাদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক, একেএম এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।