মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেনে এখন চলছে শীতকাল। মাটি বরফে ঢাকা, স্যাঁতসেতে নরম – যা ট্যাংকের মত ভারী সামরিক যান চলার উপযোগী নয়। কিন্তু মার্চ মাস থেকে ইউরোপে বসন্তকালের শুরু – তখন আবহাওয়া পাল্টাতে শুরু করবে এবং সেসময়ই রাশিয়া নতুন উদ্যমে তাদের ‘স্প্রিং অফেন্সিভ’ শুরু করবে – এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।
সমর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৩ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এটাই হবে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। রাশিয়া ইতোমধ্যেই তাদের নতুন নিয়োগ করা ৫০,০০০ সৈন্যকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়েছে, আরও প্রায় ২৫০,০০০ সৈন্যকে প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধের জন্য তৈরি করার কাজ শেষ করে এনেছে। তাদের এ অভিযান ঠেকাতে ইউক্রেনের দরকার উন্নতমানের ট্যাংক। শুধু ট্যাংক নয়, তার সাথে দরকার হবে কামান ও গোলাবারুদ, সেনা বহনকারী সাঁজোয়া যান এবং যুদ্ধ বিমান – যা আকাশ থেকে ট্যাংক বহরের অগ্রযাত্রাকে সুরক্ষা দেবে।
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক বিজ্ঞানী ও বিশ্লেষক আন্দ্রেই পিওন্তকোভস্কি বিবিসিকে বলেছেন, ‘এ যুদ্ধে ইউক্রেনের বিজয় নির্ভর করবে কত দ্রুতগতিতে নেটো ট্যাংক, বিমান ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাতে পারে তার ওপর।’ আধুনিক স্থলযুদ্ধে ট্যাংক এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কারণ এটা শত্রুপক্ষের অবস্থান বা রক্ষণব্যূহ ভেদ করে সামনে এগুতে এবং জায়গা পুনর্দখল করতে বড় ভুমিকা রাখে। ট্যাংক চলার জন্য রাস্তা দরকার নেই, অসমান, উঁচু-নিচু, খানাখন্দে ভরা মাটির ওপর দিয়েও তা চলতে পারে। একই সাথে ট্যাংক হচ্ছে এক চলন্ত কামান, যা যুদ্ধরত বাহিনীকে শত্রুর প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেঙে সামনে এগুনোর এবং গোলাবর্ষণের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
সমর-বিশেষজ্ঞ এবং কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলি বলছেন, ‘ট্যাংক হচ্ছে সাঁজোয়া যান। এর গায়ে বর্ম থাকে - যা ভেদ করতে হলে বিশেষ ধরনের অস্ত্র দরকার যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সবার কাছে তা থাকে না।’ ‘ট্যাংকের প্রধান যে কামান তা ১২৫ মিলিমিটার ক্যালিবার পর্যন্ত হতে পারে – যা দিয়ে শত্রুপক্ষের ট্যাংক, সৈন্য, যানবাহন, দালানকোঠা এবং বাংকার এগুলো ধ্বংস করা যায়। ‘আর এটা যেহেতু সচল অস্ত্র তাই বেশ কিছু ট্যাংকের বহর যখন একদিকে অভিযান শুরু করে তখন তা ঠেকানো বেশ কঠিন।’
তবে ট্যাংক একাই কোন যুদ্ধ জেতার জন্য যথেষ্ট নয়। তার সাথে দরকার ভারী কামানের গোলাবর্ষণ – যা শত্রুর প্রতিরক্ষাব্যূহকে দুর্বল করতে পারে এবং তা ছাড়া পুনর্দখল করা জায়গা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের পদাতিক বাহিনীর সাহায্যও দরকার। একই সাথে ট্যাংক বহরের মাথার ওপর যুদ্ধ বিমানের সুরক্ষাও দরকার - আকাশপথে আক্রমণ ঠেকানোর জন্য, বলছেন সৈয়দ মাহমুদ আলি।
ট্যাংক বহরকে বিমান বহর আকাশে সুরক্ষা না দেয়া পর্যন্ত ট্যাংকগুলো বিপদের মুখে থাকবে। যুদ্ধের প্রথম দিকে রুশদের ঠিক এ কারণেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ‘ইউক্রেনের বিমান বহর খুব একটা শক্তিশালী নয়। এগুলো দিয়ে পশ্চিমা ট্যাংক বহরকে কতটা কার্যকরী রাখা যাবে তা বলা কঠিন। সে কারণেই ইউক্রেন আমেরিকান এফ সিক্সটিন এবং সুইডেনের গ্রিপেনের মত অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান চেয়েছে।’
সৈয়দ মাহমুদ আলি বলছিলেন, ‘ইউক্রেনের আশংকা - আগামী দু-এক মাসের মধ্যেই তাপমাত্রা যখন আরেকটু ওপরে উঠবে, বরফ গলে যাবে, মাটি শক্ত হবে - তখন রাশিয়া নতুন করে অভিযান শুরু করবে। তা প্রতিহত করার জন্য, এবং ইউক্রেনের পূর্ব দিকে ডনবাস আর দক্ষিণের যেসব জায়গা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে - সেগুলো পুনর্দখল করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব পাশ্চাত্যের আধুনিক ট্যাংক দিয়ে আক্রমণ চালাতে চাইছে ইউক্রেন।’
ইউক্রেন নেটোর কাছে অন্তত তিনশ' ট্যাংক চেয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত জার্মানি ১৪টি লেপার্ড-টু ট্যাংক, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩০টি এম-ওয়ান আব্রামস ট্যাংক দেওয়ার কথা বলেছে। তা ছাড়া যুক্তরাজ্য দিচ্ছে চ্যালেঞ্জার ট্যাংক। পোল্যান্ডও ইউক্রেনকে ট্যাংক পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির সিদ্ধান্তের পর হয়তো আরো কিছু দেশ যেমন ফ্রান্সও কিছু ট্যাংক দেবে বলে জানা যাচ্ছে।
এর সাথে ইউক্রেন আরো পাবে ব্রিটেনের তৈরি কামান, মাইনরোধী যান, সেতু-নির্মাণের যান, এবং ব্রিটিশ, মার্কিন ও জার্মান সাঁজোয়া যান। ফলে অনেক বিশ্লেষকই বলেছেন এটি এক 'গেমচেঞ্জার' ঘোষণা। কিন্তু এটার ফলে ইউক্রেন প্রকৃতপক্ষ কতটা সুবিধা পাবে? এই শ'তিনেক ট্যাংক কি ইউক্রেনের যুদ্ধে জেতার জন্য যথেষ্ট হবে?
সৈয়দ মাহমুদ আলি বলছেন, ‘ইউক্রেন ভাবছে, পূর্বদিকের ডনবাস অঞ্চলে যেখানে নদী-নালা কম, মজবুত সেতু আছে - যেখানে বরফ গলে যাবার পর মাটি শক্ত, শুকনো, যেখানে ৭০-৮০ টন ওজনের ট্যাংক চলতে পারবে, সেখানে ট্যাংক ব্যবহার করা যাবে। কারণ যুদ্ধে তাদের একটা লক্ষ্য হচ্ছে হারানো এলাকাগুলো পুনরুদ্ধার। এজন্য তারা চাইছে যাকে বলা হয় কনসেন্ট্রেশন অব ফায়ার - একই জায়গায় অনেক ট্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ গোলাবর্ষণ করে শত্রুর ব্যুহ ভেঙে দেয়া। এধরনের একটা চিন্তা তাদের রয়েছে।’
কথা হচ্ছে, ট্যাংক তো রাশিয়ারও আছে। তারা কি ইউক্রেনের এসব ট্যাংক মোকাবিলা করতে পারবে না? বিশ্লেষকরা বলছেন, রুশ সশস্ত্র বাহিনীর হাতে হাজার হাজার ট্যাংক থাকলেও নেটো জোটের কাছ থেকে ইউক্রেন যেসব ট্যাংক পাবে - তা বেশি দ্রুতগামী ও উন্নত। বিশ্লেষক স্টিফেন ডিয়েল বলছেন, এটা ঠিক যে কোন ট্যাংকই পুরোপুরি দুর্ভেদ্য নয় তবে রাশিয়ার সবচেয়ে আধুনিক ট্যাংক টি-১৪এর চাইতেও নেটো জোটের ট্যাংকগুলো উন্নত। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, অন্যসব ট্যাংকের মত এগুলোও আগুনে পুড়বে। তার কথায় - ইউক্রেনকে নেটোর ট্যাংক দেয়াটা এক ‘ব্যর্থ পরিকল্পনা’ এবং এতে কিয়েভের বাহিনী কত সুবিধা পাবে তা ‘বাড়িয়ে বলা হচ্ছে।’
ইউক্রেনকে নেটোর ট্যাংক সরবরাহের সাথে দুটি বিষয় জড়িত - যা এ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নেটো বনাম রাশিয়ার মধ্যে যে উত্তেজনা চলছে, তাকে আরো একধাপ বাড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আমেরিকান এ্যাব্রামস ও জার্মানির লেপার্ড জাতীয় ট্যাংকে ব্যবহৃত বিশেষ এক ধরনের গোলা - যা দিয়ে শত্রুপক্ষের ট্যাংক ও কংক্রিটের বাংকার ধ্বংস করা যায়।
ড. আলি বলছেন, এসব গোলায় ডিপ্লিটেড বা 'নিম্ন-মাত্রার' ইউরেনিয়াম ব্যবহৃত হয় এবং তা বিস্ফোরিত হলে বাতাসে তেজষ্ক্রিয় ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। ‘রুশ কর্তৃপক্ষ বলেছে যদি এধরনের গোলা তাদের এলাকায় বা তাদের সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয় তাহলে একে পারমাণবিক অস্ত্র-সমতুল্য বলে তারা ধরে নেবেন এবং প্রয়োজনীয় পাল্টা ব্যবস্থা নেবেন। অর্থাৎ তাহলে যুদ্ধের মাত্রা একধাপ ওপরে উঠে যাবে এবং সেটা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে,’ বলছেন ড. আলি।
ইউক্রেনকে ট্যাংক সরবরাহের জন্য নেটোর ঘোষণার পরপরই কথা উঠেছে এই সঙ্গে তাদেরকে এফ-১৬র মত অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানও দেয়া হবে কিনা। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি নেটোর কাছ থেকে ট্যাংকের সরবরাহ পেতে না পেতেই যুদ্ধবিমানের কথা বলতে শুরু করেছেন। ব্রিটেন ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পার্লামেন্টের বক্তৃতায় জোর দিয়ে যুদ্ধবিমান দেবার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। সৈয়দ মাহমুদ আলির কথায়, যুদ্ধের সময় ট্যাংক বহরকে কার্যকর হতে হলে আকাশ থেকে যুদ্ধবিমানের সুরক্ষা দরকার।
তবে তিনি বলছেন, নেটো এফ-১৬ বা এ জাতীয় অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ইউক্রেনকে দিলে তা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে। রাশিয়া হয়তো তখন নেটোর বিরুদ্ধেও কোন পাল্টা পদক্ষেপের দিকে যেতে পারে। এতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যেতে পারে বা রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে - এমন আশংকা প্রকাশ করেছিলেন অনেক বিশ্লেষকই।
সৈয়দ মাহমুদ আলি বলছেন, নেটো কখনোই চাইবে না রাশিয়ার সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে - যা হবে ‘ভয়াবহ বিপজ্জনক’। তাই সেটা এড়িয়ে যাবার জন্য দুপক্ষই চেষ্টা করবে। রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি কয়েকবারই দিয়েছে কিন্তু তেমন কিছু করেনি, ফলে পশ্চিমা নেতারা সম্ভবত একে তেমন বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছেন না। কিন্তু এধরনের একটা হুমকি রয়ে গেছে।
‘আমরা দেখছি যে পর্যায়ক্রমে ইউক্রেনকে দেয়া সাহায্যের পরিমাণ এবং গুণগত মান বেড়ে চলেছে। এখন ইউক্রেন যদি এফ-সিক্সটিন বিমান পায় এবং ইউক্রেন যদি সেগুলো দিয়ে রুশ নিয়ন্ত্রিত বা রুশ দাবিকৃত এলাকার ওপর হামলা চালায় তাহলে রাশিয়া হয়তো একধাপ এগিয়ে যাবে এমন আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায়না,’ বলছেন সৈয়দ মাহমুদ আলি। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।