Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাম পরিচয় লুকিয়ে কারারক্ষী পদে চাকুরী করা হলো না তাজুলের ! র‌্যাবের হাতে আটক

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:৫০ পিএম

নিজের নাম তাজুল ইসলাম (৪২)। বাবার নাম মৃত কালা মিয়া ও মায়ের নাম ফিরোজা বেগম। কিন্তু প্রকৃত নাম আড়াল করে দীর্ঘ ২২

বছর ধরে ‘মঈন উদ্দিন খান’ নামে কারারক্ষীর চাকরিতে করছিলেন তিনি। এমন একটি স্পর্শকাতর পদে ভুয়া পরিচয় ও তথ্য গোপন করে চাকরির খবর জানতে পারে কারা কর্তৃপক্ষ। এদিকে তাজুল ইসলামও বিপদ আঁচ করতে পেরে কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। অবশেষে র‌্যাবের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে র‌্যাব-১১ ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-২ কুমিল্লার সদস্যরা প্রতারণার মাধ্যমে কারারক্ষীর চাকরি করা তাজুল ইসলামকে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া বাজার থেকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে তিন সেট কারারক্ষী ইউনিফর্ম, একটি জ্যাকেট, একটি রেইনকোট ও ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জব্দ করা হয়। গতকাল শুক্রবার কুমিল্লার শাকতলা র‌্যাব কোম্পানি দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান এসব তথ্য।

তাজুল ইসলামের বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের দক্ষিণ শশীদল গ্রামে। যে মঈন উদ্দিন খানের পরিচয়ে তাজুল প্রায় দুই যুগ সরকারি চাকরি করেছেন, সেই মঈন উদ্দিন খানের বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর গ্রামে। মঈনের বাবার নাম নুর উদ্দিন খান। আসলে কারারক্ষীর চাকরি পাওয়ার কথা ছিল এই মঈনেরই। ২০০১ সালে কারারক্ষী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে মঈন ও তাজুল দুজনেই আবেদন করেছিলেন। তাজুল পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হন। আর মঈন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে শারীরিক ফিটনেস, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। বলা হয়েছিল, যাঁরা চাকরিতে টিকবেন, তাঁদের নিয়োগপত্র পাঠানো হবে স্থায়ী ঠিকানায়। তাজুল তখন জালিয়াতির মাধ্যমে পরিকল্পনা আঁটেন চাকরির ।

র‌্যাব অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, তাজুল তার দুই সহযোগীকে নিয়ে মঈনের বাড়িতে যান। তারা নিজেদের কারা কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলে দাবি করেন। তাঁরা মঈনের কাছে, দাবি করেন ১০ লাখ টাকা। তখন মঈন বলেন, ঘুষ দিয়ে চাকরি করবেন না তিনি। তাজুল ও তার সহযোগীরা এরপর চলে আসেন।

পরে কুমিল্লার তাজুল ইসলাম হবিগঞ্জের মঈনের নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে কারারক্ষী পদে চাকরি নেন। ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনপ্রাপ্তির জন্য এনআইডির দরকার হয়। তখন তাজুল কারারক্ষী পদে উত্তীর্ণ মঈন খানের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে একটি আইডি কার্ড তৈরি করেন। পরে ২০২০ সালে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে, সিলেট বিভাগে বেআইনিভাবে কাজ করছেন২০০ জন কারারক্ষী। সিলেটের ওই ২০০ জনের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হয়। তখন তথ্য যাচাই করা হয় হবিগঞ্জের মাধবপুরে মঈন উদ্দিন খানের।

একপর্যায়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উপমহাপরিদর্শক মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠি দেন। এতে কারারক্ষী মঈন উদ্দন খান সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা কি না, তা জানতে চান। ইউপি চেয়ারম্যান জবাবে জানান, মঈন উদ্দিন খান কারারক্ষী নন। তিনি তাঁদের এলাকার ছেলে, ওষুধ ব্যবসায়ী। কারা কর্তৃপক্ষের এসব তৎপরতা জানতে পেরে তাজুল ইসলাম ২০২১ সালের ১৫-২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি নেন। এর পর থেকে আর যোগদান করেননি তিনি। এদিকে মঈন উদ্দিন খান তার চাকরি বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর তাকে চাকরি দেওয়ার জন্য আবেদন করেন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। একপর্যায়ে চাকরি না পেয়ে তিন দ্বারস্থ হন আদালতের। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর প্রতারক তাজুল ইসলামকে তদন্ত কমিটি ডাকে। কিন্তু তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হননি তাজুল। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে চাকরি করার অভিযোগে গত ৪ আগস্ট এসএমপির জালালাবাদ থানায় মামলা করে কারা কর্তৃপক্ষ। পরে কারা কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে র‌্যাবের সহযোগিতা কামনা করে। ১২ জানুয়ারি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তাজুলের অবস্থান শনাক্ত করে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আটক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ