Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিশুদের মানসিক বিকাশে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে

ড. অজয় কান্তি মন্ডল | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে অভিভাবকদের। নিজের পরিবারের কথা দিয়েই শুরু করি। আমার মেয়ে ‘অন্তু’ সবে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে। সকালের স্কুল এবং স্কুলে যাওয়া আসা মিলিয়ে ঘণ্টা তিনেক সময় তার ব্যয় হয়। এরপর তার এক রকমের গৃহবন্দী দিন শুরু হয়। সারাটা দিন খাওয়া দাওয়ার বাইরে তার কাজ হলো মোবাইল বা ল্যাপটপ দেখা। যে সময়টাতে তার বাইরে খেলাধুলা, কাদামাটি মেখে বড় হওয়ার কথা, সেখানে সারাটা দিন সে মোবাইলের পেছনে ছুটতে থাকে। খাওয়ার সময় তার প্রধান শর্ত হলো মোবাইল দেখতে দিতে হবে, না হলে সে খাবে না। ঘুমানোর আগে মোবাইল, ঘুম থেকে উঠে মোবাইল, সারাটা দিন ঘাড় গুঁজে তার দৃষ্টি আটকে থাকে মোবাইল ফোনের কার্টুন ও বিভিন্ন গেমে। এই মোবাইল দেখার কারণে মাঝেমধ্যে মা বাবার বকাবকিও খাচ্ছে। কিন্তু তার মাথা থেকে মোবাইলের চিন্তা কিছুতেই সে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। কোনো অনুষ্ঠানে গেলে লোকজনের মধ্যেও সে খুঁজতে থাকে মোবাইল। অন্তুর মতো সমস্যা অনেক শিশুর ভিতর আমি দেখেছি। মোবাইলের জগৎ এসব শিশুদের এমনভাবে পেয়ে বসেছে যেখানে খাওয়া, ঘুম, খেলাধুলা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মোবাইল দিলেই তারা খুশি। খেয়াল করেছি, ঝামেলা এড়াতে অনেক অভিভাবক শিশুর আবদার পূরণের এই সহজ পথটি বেছে নেয়। চাওয়া মাত্র মোবাইল দিয়ে দেয়। এতে করে শিশুও ঠান্ডা, আবার অভিভাবক সহজে তার দরকারি হাতের কাজ সেরে নিতে পারে।

কিন্তু আমরা কখনো অন্তুর মাত্রারিক্ত মোবাইল দেখাকে ভালোভাবে নিইনি। তাই মাঝেমধ্যে চড়াও হয়েছি, আবার ঠান্ডা মাথায় বিকল্প উপায়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। যেমন, মোবাইলবিহীন সময় কাটানোর জন্য আমরা বেশ কিছু পথ অবলম্বন করেছি। তার মধ্যে অন্যতম, বাসায় আমরা উভয়ই সচারাচার কম মোবাইল ধরি, যাতে করে সে যেন আমাদের থেকে মোবাইল দেখার কোনরকম উৎসাহ না পায়। তাকে বেশ কিছু খেলনা কিনে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর প্রতিটি নিয়ে সে খেলে, যাতে করে মোবাইল থেকে সামান্য হলেও সে দূরে থাকে। এছাড়া তাকে নিয়ে প্রতিদিন বিকেলে বাইরে বের হচ্ছি। এসবের মধ্যেও নানাবিধ সমস্যা এসে হাজির হচ্ছে। যেমন, রাস্তাঘাটে মানুষ এবং রিক্সা, গাড়ির যে চাপ সেখানে বড়রা চলতে হিমিশিম খায়, বাচ্চাদের কথা না হয় বাদ দিলাম। সেইসাথে ধুলাবালি, গাড়ির উচ্চ শব্দের হাইড্রোলিক হর্ন, ইঞ্জিনের শব্দ তো আছেই। আর এসব নানান প্রতিবন্ধকতার কারণে বাইরে যাওয়ার কথা বললে অন্তু সরাসরি বলে দেয় ‘ওই ধুলো আর গাড়ির শব্দের মধ্যে আমি যাব না’। অনেক সময় জোর জবরদস্তি করে নিয়েও যাই। কিন্তু সে বাইরে গিয়ে মনমরা হয়ে থাকে। তার কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলে ‘পাপা বাসায় চল, এত ধুলা ময়লার ভিতরে আমার ভালো লাগছে না’। আমি কিছুই বলতে পারি না। সে বারবার আমাকে চীনের কথা বলে। আমাকে বলে ‘চীনে যেমন সুন্দর জায়গায় হাঁটতে, খেলতে নিয়ে যেতে সেরকম জায়গায় চল। আমাদের দেশ এত নোংরা কেন? এত গাড়ির আওয়াজ কেন? এখানে কোনো পার্ক নেই কেন? বাচ্চাদের খেলার জায়গা নেই কেন’? এরকম হাজারো প্রশ্ন অন্তুর, যেগুলোর কোন উপযুক্ত উত্তর আমার জানা নেই। অন্তুর সমস্যাগুলো অন্তর দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি। ভাবতে থাকি সত্যিই তো এই নিষ্পাপ শিশুগুলোর তো কোন দোষ নেই। দোষ তো আমাদের মত বুঝো মানুষদের। মুহূর্তের মধ্যে ভিতর থেকে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস বের হয়ে আসে।

সাভারের ক্যান্টমেন্ট এলাকার পাশেই আমাদের বাসা। এখানে থাকাকালীন আশপাশে কোনো নিরিবিলি হাঁটার জায়গা আছে কিনা সেটা জানার জন্য বহুদিন গুগলে সার্চ করেছি। কিন্তু কোনো হাঁটার জায়গা, শিশুদের কোনো খেলার পার্ক বা বিনোদনের জায়গার হদিস পাইনি। কোনদিন মেলাতে পারিনি একটু সমান পিচ ঢালাই করা রাস্তা, যেখানে একটু হলেও হাঁটা চলা করা যায়। আশপাশের যে হাঁটা চলার রাস্তাগুলো আছে সেগুলোর বেহাল দশা স্বচক্ষে অবলোকন ব্যতীত কারো পক্ষে প্রকৃত বাস্তবতা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তারপরেও অনেকটা নিরুপায় হয়ে অন্তুকে নিয়ে বের হই। কিন্তু ফুটপাতবিহীন রাস্তার দুরাবস্থা সেইসাথে রিক্সা, ইজিবাইক, প্রাইভেটকার, ট্রাকের চলাচলে মানুষের পায়ে হেঁটে চলার কোন পরিবেশ এসকল রাস্তায় নেই। পরে ছোট গলি ধরে এপথে ওপথে কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে আসি।

এই যাওয়া আসার মাঝে বারবার মুখে আওড়াতে থাকি চীনের প্রবাস জীবনের কথা। আমাদের চোখের সামনে তখন ভেসে ওঠে চীনে কাটানো সময়গুলো। আমরা ভুলতে পারি না সেখানকার রাস্তাঘাট, ফুটপাতের চাকচিক্য। সেখানকার বসবাসের কমিউনিটিগুলোর সার্বিক সুযোগ সুবিধা। যেগুলো দেখলে যে কারও মন ভরে যায়। যেখানে বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সকলের সুবিধার কথা চিন্তা করে কর্তৃপক্ষ সকল ব্যবস্থা করে রেখেছে। প্রতিটি কমিউনিটির সাথে শিশুদের খেলার জায়গা তো আছেই, সেইসাথে খুব অল্প দূরত্ব পরপর আছে বাচ্চাদের পার্ক ও বিনোদনের জায়গা, যেসব জায়গাতে শিশুদের নিয়ে শুধু ছেড়ে দেওয়ার দরকার। এরপর নিজেরা সমস্ত জায়গা ঘোরে, রাইড চড়ে, হৈ হুল্লোড় করে গায়ে ধুলোবালি মেখে দিনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করে। চীনে থাকাকালীন অন্তু প্রতিদিন সকাল বিকাল তার পড়ালেখার কাজ সেরে একাই খেলতে চলে যেত কমিউনিটির পার্কগুলোতে। আবার সময় মত বাসায় ফিরত। প্রতিদিন বিকাল বা সন্ধ্যায় আবারো অন্তু আমাদের সাথে বের হতো। আমি ও আমার স্ত্রী অন্তুকে খেলতে দিয়ে নদীর পাড় ধরে ২/৩ কিলোমিটার হেঁটে আসতাম। চীনের প্রতিটি নদীর ধারে এভাবে শিশুদের খেলার জায়গা এবং বড়দের হাঁটার পথ তৈরি করা আছে। কোথাও কোথাও ব্যায়াম করার সরঞ্জামাদিও আছে। যেগুলোতে বড়রা ভোরে বা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করে নিজেদেরকে শারীরিকভাবে ফিট রাখে।

একটি আদর্শ নগর গঠনে সার্বিক দিক বিবেচনার পাশাপাশি শিশুদের মেধা বিকাশ, তাদের অবাধ বিচরণের জন্য যথাপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা অতীব জরুরি। চীনাদের ভিতরে সেটা সচারাচার সবারই চোখে পড়বে। চীনে শিশুদের বিনোদনের জন্য আলাদাভাবে কোনো শিশু পার্ক আছে কিনা আমি জানতে পারিনি। তবে সেখানে অহরহ, যেমন: নদীর পাড়, রাস্তার পাশে, বড় বড় পার্কগুলোতে শিশুদের বিনোদনের জন্য সার্বিক ব্যবস্থা করা আছে। সেসব স্থানে শিশুদের খেলার যাবতীয় সরঞ্জামাদি দেওয়া আছে, সেসব জায়গাতে তিন বছরের বাচ্চা থেকে শুরু করে ১০-১২ বছরের বয়স পর্যন্ত শিশুরা খেলতে যায়। ঐসব বিনোদন কেন্দ্রের ভিতরে কোনো রকমের হকার্স বা খাবার বিক্রেতাকে কখনো দেখা যায় না। যার ফলে শিশুরা যখন তখন অস্বাস্থ্যকর কোনো খাবার খাওয়ার ও সুযোগ পায় না। তবে বিনোদনকেন্দ্রগুলোর প্রবেশ পথের নির্দিষ্ট স্থানে শিশুদের খেলনার কিছু কিছু সরঞ্জাম, যেমন: ঘুড়ি, ছোট ছোট বালতি, বেলচা ইত্যাদি চোখে পড়ে।

কাদামাটি শিশুদের অনেক প্রিয়। তাই চীনা কর্তৃপক্ষ ঐসকল খেলার স্থানগুলোর একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বালি ভরাট করে মাঠ করে রেখেছে। ঐসব স্থানে শিশুরা আপন মনে বালিতে বেলচা দিয়ে গর্ত করে বা বালি উঁচু করে নিজেদের মতো ইচ্ছামত খেলতে থাকে। খেলা শেষে পাশেই কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা করা পানির ট্যাবে সবাই হাত পা ধুয়ে যার যার বাসায় ফেরে। চীনের সব লোকালয়ে এটা চিরাচরিত একটা দৃশ্য। এছাড়াও সামান্য এদিক সেদিক হয়ে শিশুদের উক্ত বিনোদনের প্রায় সব স্থানেই একই রকমের খেলার সামগ্রী চোখে পড়ে। এরকম বিনোদন কেন্দ্রগুলো চীনাদের বসবাসের অধিকাংশ কমিউনিটির ভিতরেও আছে। বাবা মা কাজে ব্যস্ত থাকায় সাধারণত পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিরা, যেমন দাদা-দাদীদের সাথে প্রতিদিন শিশুরা ঐসকল স্থানে খেলতে যায়। শিশুদের প্রতিদিনকার রুটিন এটি। বিনা পয়সায় এসব খেলার স্থান সবাই ব্যবহারের সুযোগ পায়। এছাড়াও চীনের সকল কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে শিশুদের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিস্তর মাঠে বিভিন্ন খেলার সামগ্রী, রাইডের ব্যবস্থা করা আছে। যেগুলো শিশুদের খেলার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানে উত্তম সহায়ক।

চীনের অভিভাবকরা তাদের শিশুদের যতদূর সম্ভব বাসার বাইরে খেলায় ব্যস্ত রাখে। এরফলে শিশুদের ভিতর মোবাইল ফোন দেখার প্রবণতা একেবারে নেই বললেই চলে। একটা শিশুর ঘরের কোণে বসে সারাক্ষণ মোবাইল বা কম্পিউটারের গেমে ব্যস্ত থাকাটা কখনো তার জন্য স্বাভাবিক বিনোদন হতে পারেনা। কেননা ভার্চুয়াল এসব গেমে তাদের মেধার বিকাশ তো ঘটেই না পক্ষান্তরে এগুলো শিশুদের জন্য অনেক ক্ষতিকর কারন হতে পারে। একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে হলে শিশুদের খেলার মাঠের কোনো বিকল্প নেই। অন্যান্য শিশুর সঙ্গে মিশতে দিয়ে তাদের সঠিক বিকাশের সুযোগ দেওয়াটাই উত্তম। সেইসাথে বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিনোদন যেমন কবিতা, গান, বিতর্কসহ অন্যান্য বিনোদনে যুক্ত হওয়া শিশুদের একান্ত কাম্য। কেননা, শিশুদের এসব বিনোদনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক রয়েছে। যেমন: শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ, ব্রেন ডেভেলপমেন্টসহ নানান বিষয় বিনোদনের সাথে জড়িত। বাইরে খেলাধুলা ও বিনোদনের মধ্য দিয়ে শিশুরা তাদের নানান বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটায়। সেইসাথে শিশুদের সঠিক বৃদ্ধি, শরীর গঠন ও সামাজিকতা বৃদ্ধি করতে বাসার বাইরে খেলাধুলোর কোন বিকল্প নেই। সমীক্ষায় দেখা গেছে, একটি শিশুর শৈশবের শুরুতে সবচেয়ে দ্রæত বিকাশ হয়। শিশুদের জন্মের পর থেকে এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকে প্রায় আট বছর বয়স পর্যন্ত। কেননা, শিশুর ছয় মাস বয়সের মধ্যেই তার মস্তিষ্কের অর্ধেক গঠিত হয় এবং আট বছরের মধ্যে তৈরি হয় প্রায় ৯০ শতাংশ। অর্থাৎ একটি শিশুর জন্য এই আট বছর বয়স পর্যন্ত বিশেষ করে তার বুদ্ধিবৃত্তি, আবেগ, সামাজিক যোগাযোগ ও শারীরিক সম্ভাবনা বিকাশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু স্মার্টফোন ও নানা গ্যাজেটনির্ভরতার কারণে শিশুদের মানসিক বিকাশ ও সৃজনশীলতা তৈরিতে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে পাল্টে যাওয়া সামাজিক ও পারিবারিক বাস্তবতায় সেই সঙ্গে নাগরিক জীবনের যাতাকলে পড়ে শিশুদের অসহায়ত্বকে আলাদাভাবে নিরূপণ করাও কঠিনতর হয়ে পড়েছে। শিশুদের নিজের জগৎ দিনকে দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে। ভার্চুয়াল জগতের বাইরে একটি শিশু কিছুই ভাবতে পারছেনা। এসব শিশুদের সঠিক মানসিক বিকাশে একটি খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র বা একটি শিশুপার্ক বড় ভূমিকা রাখতে পারত। কিন্তু সেটিও এখন অনেকটা দুরহ হয়ে উঠেছে। ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত রাজধানীর সবচেয়ে বড় শিশুপার্কটি সংস্কারের নামে বন্ধ আছে দীর্ঘদিন। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ শিশুপার্কের সামনে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে এটি বন্ধ ঘোষণা করে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শিশুপার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন থাকায় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। একই সময়ের মধ্যে শিশুপার্কেরও সংস্কারকাজ শেষে এটি খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে বরাদ্দ নিয়ে জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত পার্কের কাজ শুরুই হয়নি। অন্যদিকে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে।

পুরো ঢাকাসহ আশপাশের এলাকার শিশু-কিশোরদের জন্য একমাত্র বিনোদনকেন্দ্র শাহবাগের এই শিশুপার্ক। তাই শিশুপার্কটি বন্ধ করার আগেই, কবে নাগাদ এটি চালু করা যেতে পারে সেটার সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল। দিনকে দিন যেহেতু ঢাকায় অবসর কাটানোর জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে, সেহেতু বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কর্তৃপক্ষের দ্রæত কাজ শেষ করে এটি চালু করা উচিত। বেশিরভাগ শিশুপার্ক বা শিশুদের বিনোদনের যে সরকারী ব্যবস্থাপনা আছে কোন একটি ওছিলায় একবার বন্ধ হলে আর খোলার নাম থাকেনা। বহু প্রতীক্ষার পর খুললে দেখা যায় খোলার পরের অবস্থা পূর্বের চেয়েও খারাপ হয়েছে। অর্থাৎ সংস্কারের আগে ও পরে তেমন কোন ফারাক তো বোঝায় যায়না বরং অবস্থা আরও বেহাল হয়ে যায়। কিছুদিন আগে জাতীয় এক দৈনিকে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে জানতে পারলাম, খুলনার মুজগুন্নীতে অবস্থিত শিশুপার্কটি সংস্কারের নামে চার বছর ধরে বন্ধ ছিল। এরপর যখন শিশুপার্কটির সংস্কার কাজ শেষ হয় তখন সেটির অবস্থা পূর্বের চেয়ে আরও করুণ হয়ে গেছে। ঘাস-লতাপাতা-গুল্মে এতটাই ছেয়ে গেছে যে পার্কটি দেখে কারও বোঝার উপায় নেই সেটি একটি শিশুপার্ক।

নগরায়নের ফলে দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে মুক্ত এলাকা, বয়স্কদের হাঁটার জায়গা, শিশুদের খেলার মাঠ ও বিনোদন কেন্দ্র। কিন্তু সেগুলোর ব্যপ্তি আধুনিক নগরায়নের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে আরও বৃহৎ পরিসরে হওয়া উচিৎ ছিল বলে মনে হয়। বাস্তবে এমন সব কর্মকাÐ দেখে আমাদের হতাশ হতে হয়। কোনরকম পূর্বপরিকল্পনা ও সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা ছাড়াই একের পর গড়ে উঠছে বেহিসাবি স্থাপনা। নগরবিদদের বিষয়গুলো আরও গুরুত্ব সহকারে ভাবা উচিৎ। শিশুপার্কে শিশুরা খেলবে দৌড়াবে, আনন্দে মাতবে এটাই সবার প্রত্যাশা। সময়ের সাথে সাথে অবশ্যই সবকিছুর সংস্কার বা আধুনিকায়নের প্রয়োজন আছে। কিন্তু সেই সংস্কার বা আধুনিকায়নে যদি লাগামহীন সময়ের প্রয়োজন পড়ে তাহলে নীতি নির্ধারকদের অবশ্যই শিশুদের মানসিক বিকাশের বিষয়াদি মাথায় রেখে তাদের বিনোদনের বিকল্প ব্যবস্থা করে দিয়ে কাজে হাত দেওয়া সমীচীন হবে। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে প্রতিটি শিশুর খুবই খারাপ পরিস্থিতির স্বীকার হতে হবে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানসিক

৩ ডিসেম্বর, ২০২১
২২ আগস্ট, ২০২১
বিয়ের পর থেকেই দেখে আসছি আমার স্বামী তার পরিবারের কথায় আমাকে মিথ্যা অপবাদ দেয়, অযথা সন্দেহ করে, আজ ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো পরিবর্তন হয়নি, বরং বেড়েছে। সে নিজে নামাজ পড়ে না কিন্তু আমার নামাজ নিয়ে খোটা দেয়। গালমন্দ করে, বাচ্চাদের নামাজ, আরবি শিখাতে গেলেও টিটকারি করে। আমাকে বাবার বাড়ি যেতে দেয় না, কিন্তু সে নিজে যায়। আজেবাজে বন্ধুদের সাথে বেশি মিশে কিন্তু আমাকে কোনো আত্মীয় বা বান্ধবীর বাসায় যেতে দেয় না। সংসারে কোনো উন্নতি নেই, কিন্তু এগুলা নিয়ে কিছু বলতে গেলে বাপ মা তুলে গালি দেয়। লোভী বলে, ভাতের খোটা দেয়। আমার নামাজ হয় না বলে তিরস্কার করে, চরিত্র তুলে কথা বলে। প্রতি ঈদ বা দাওয়াত এর আগে হটাৎ ছোটো খাটো জিনিস নিয়ে ঝগড়া শুরু করে এবং পরবর্তী তিন চার মাস পর্যন্ত মুখ কালো করে থাকে ও আলাদা ঘরে ঘুমায়। সে একদিন রাগ করে কুরআন পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলেছে। আমি একজন শিক্ষিত মেয়ে কিন্তু চাকরিও করতে দেয় না। এই মানসিক অত্যাচার এর মধ্যে থাকতে থাকতে আমি বাচ্চাদের নিয়ে অতিষ্ট হয়ে গেছি। কিন্তু সে সংসার ভাঙতে চায় না। এমতাবস্থায় আমি তাকে ডিভোর্স দিতে চাই, নিজে বাঁচার জন্য, গুনাহ হবে কি?

আরও
আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->