২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
সুস্থ শরীর ছাড়া যেমন সুস্থ মন সম্ভব নয়, তেমনি সুস্থ মন ছাড়া সুস্থ শরীর ও সুস্থ জীবন কিছুতেই সম্ভব নয়। ১০ অক্টোবর প্রতি বছর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে, “মেন্টার হেলথ্ ইন এন আনইকুয়াল ওয়াল্ড”। পাওয়া আর না পাওয়ার মধ্যে দুরত্ব কমিয়ে আনার উপরই সকলের দৃষ্টি। সারা বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সমাজের অংশগ্রহনের উদেশ্যে প্রতিবছর এ দিবসটি পালন করা হয়। করনার এই অতিমারিতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যেভাবে মানুষ ফোকাস করছে তা আগে কখনওই দেখা যায়নি। ছোট থেকে বড়, ধনী থেকে গরীব সবাই এই অতিমারিতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। আর চেষ্টা করতে বলা হচ্ছে “নিউ নরমাল জীবন” কে মেনে নিতে। যে যতটা মানিয়ে নিতে পারছে, সে তত তাড়াতাড়ি আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারছে। যে মানিয়ে নিতে পারল না তার ভবিষ্যত দিন দিন খারাপের দিকে যাবে, এতে কোন সন্দেহ নাই।
১৯৯২ সাল থেকে পৃথিবী ব্যাপী বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যয় বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়েছে। তবে কিছু দেশে একে মানসিক রোগ সচেতনতা সপ্তাহের অংশ হিসেবেও পালন করা হয়।
মানসিক স্বাস্থ্য বলতে মানসিকভাবে ব্যক্তির সুস্থতাকে বোঝায়। একজন ব্যক্তি যখন চারপাশের সকল সুশৃঙ্গলতা বা বিশৃঙ্গলতা দেখার পর নিজেকে সুন্দর, সুস্থ ও দেশের সুনাগরিক হিসেবে পরিচিত করাতে পারে তখন তাকে আমরা একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে গন্য করি। যখন একজন মানুষ সুস্থ থাকে তখন পারিবারিক সামাজিক ও কর্মক্ষেত্রে সে ব্যক্তিগত সন্তুষ্টির সাথে সাথে সকলের সন্তষ্টি অর্জন করতে পারে এবং সকলের আস্থাভাজন হতে পারে। অর্থাৎ মানসিক স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক ও নৈতিক এই গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলোর মিথসক্রিয়ার আত্মোন্নয়ন মূলক জীবনের প্রতিশ্রুতি হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের ব্যাপারটি সৃষ্টি হয় পরিবার থেকে। কারন একটি শিশুর প্রথম বিকাশ শুরু তার পরিবারে। অতি আদর, অবহেলা, অতিশাসন শিশুর স্বাভাবিক বিকাশকে যেমন ব্যহত করে তেমনি পরিমিত আদর, ভালবাসা, শাসন, মর্যাদা ও কাজের স্বীকৃতি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করে। সুতরাং পরিবার গুলোকে সুসংগঠিত হতে হবে আন্তরিকতায় সাথে।
যারা মানসিক রোগে আক্রান্ত, তাদের অনেকেই সময়ের আগেই মৃত্যু বরন করে। বিষন্নতা হচ্ছে অন্যতম একটি মানসিক সমস্যা যেটাতে বিশ্বের অনেক অনেক মানুষ আক্রান্ত। এই করোনাকালে ও এর পরবর্তিতে এই সংখ্যা যে অনেক অনেক বাড়বে তাতে কোন সন্দেহ নাই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের মৃত্যুর ২য় প্রধান কারন হল আত্মহত্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে সারাবিশ্বে কেউনা কেউ আত্মহত্যার মাধ্যমে প্রাণ হারান। আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। অধিকাংশ ব্যক্তিই আত্মহত্যার সময় কোন না কোন মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকেন। সাধারণত সেটা গুরুত্ব দেয়া হয় না বা মানসিক রোগ নিশ্চিত হলেও যথাযথ চিকিৎসা করা হয় না বলেই আত্মহত্যা বেড়ে যাচ্ছে। তবে মানসিক স্বাস্থ্যের মাধ্যমে আত্মহত্যার হার কমিয়ে আনা সম্ভব।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনিস্টিটিউট, ঢাকা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষনায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৬ভাগ ও শিশু কিশোরদের শতকরা ১৮ ভাগ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। বিপুল এ জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ অনেক সময় প্রচলিত ভ্রান্ত ধারনা, কুসংস্কার ও চিকিৎসা প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এতে কর্মক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যা জাতীয় অগ্রগতির উন্নয়নের পথে বড় বাঁধা। মানসিক রোগে আক্রান্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাক্তিগত,পারিবারিক ও সামাজিক অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার। এর প্রধান কারন মানসিক স্বাস্থ্য রোগ ও এর চিকিৎসার প্রতি জনগনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। মানসিক রোগ ও এর চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সমাজে মর্যাদাবোধের অভাব লক্ষ্য করা যায়। এজন্য অনেকে মানসিক রোগের চিকিৎসা নেওয়াকে সামাজিক ভাবে লজ্জাকর মনে করেন, যেটি শারীরিক রোগের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। কিছু সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও অনেক সময় রোগী ও পারিবারের সদস্যগন খারাপ আচরনের শিকার হন। এজন্য পারিবারিক শ্রদ্ধা বোধ বজায় রাখা জরুরী।
মানসিক স্বাস্থ্যে মর্যাদাবোধ বিষয়টি শুধুমাত্র রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও নিরাময় প্রক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর অর্থ ব্যাপক। মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যতীত জোরপূর্বক আটকে রাখা মর্যাদাহানি, নিম্নমানের সেবা, সঠিক সময়ে চিকিৎসা যা পাওয়া এসব বিষয় মর্যাদার সংঙ্গে জড়িত। এ বিষয়টি খেয়াল করে মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দ্রুত রোগ নির্ণয় করে তাকে বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব।
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুিদ্দন আহমেদ
উপাচার্য
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।