পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি দক্ষ, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের তাকিদ দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গত মঙ্গলবার ব্রাসেলসে ইইউ এবং বাংলাদেশের সুশাসন ও মানবাধিকার বিষয়ক সাব্্ গ্রুপের বৈঠকে এ তাগিদ দেয়া হয়েছে। বৈঠকের পর ইইউ সদর দফতর থেকে প্রচারিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, মৃত্যুদ-, মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব এবং সামগ্রিকভাবে নাগরিক সমাজের কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ ছাড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, শিশুশ্রম এবং পারিবারিক সহিংসতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশে এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, তাতে সন্দেহ নেই। ২০১২ সালে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। এর মেয়াদকাল আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়ে যাবে। তার আগেই গঠন করতে হবে নতুন নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচন কমিশন যাতে দক্ষ, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন হয় তার দাবি দেশের বিভিন্ন মহল থেকে উঠেছে। এ দাবি উত্থাপনের কারণ, বর্তমান নির্বাচন কমিশন তার দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা প্রদর্শন করতে পারেনি। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে যত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার একটিও দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বিনাভোটে ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি ‘কালচার’ সৃষ্টি করেছে এই নির্বাচন কমিশন। এই প্রেক্ষাপটে ইইউ’র তাকিদটি যে যথার্থ ও সময়োচিত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
গণতন্ত্রে জনগণের ভোটে জনগণের ইচ্ছানুগ সরকার গঠনে নির্বাচনের বিকল্প নেই। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের প্রকৃতি ও তাৎপর্যকেই পাল্টে দিয়েছে। জনগণের অধিকার হরণ করে নিয়েছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার সুযোগ ও ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের থাকলেও নির্বাচন কমিশন সরকারের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করে ভোটবিহীন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন এক ‘আজব’ নির্বাচন উপহার থেকে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশন একই প্রবণতা ও ধারা অনুসরণ করে নির্বাচন ব্যবস্থাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি প্রভাবশালী দেশ ওই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং অবিলম্বে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার কথা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করে। সরকারও ওই রকম নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও আজ অবধি সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে বলেছেন, তিনি কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে চান না। তার এ বক্তব্যে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন যে প্রশ্নাতীত হয় নি তা তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। এই সঙ্গে তিনি এই সদিচ্ছাও ব্যক্ত করেছেন যে, আগামী সংসদ নির্বাচন প্রশ্নাতীত ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে; সেটা তিনি কামনা করেন, প্রত্যাশা করেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রশ্নাতীত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অন্যতম প্রধান পূর্বশর্ত হলো, এমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা, যে নির্বাচন কমিশন হবে দক্ষ, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন।
দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দক্ষ, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। সকলেই এ অভিমত দিয়েছে যে, যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠনের সাংবিধানিক এখতিয়ার প্রেসিডেন্টের, সেহেতু কাক্সিক্ষত নির্বাচন কমিশন গঠনে তিনিই পালন করতে পারেন যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা। রাজনৈতিক ও জনঅভিমতের প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট মোঃ আব্দুল হামিদ ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত যে ক’টি দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তা ইতিবাচক বলে প্রতিভাত হয়েছে। আসলে উদ্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য ও সহযোগিতা খুবই জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের তরফে আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে, প্রেসিডেন্ট যে প্রক্রিয়ায় বা যেভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন তা মেনে নেয়া হবে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সরকার বা ক্ষমতাসীন দল যদি প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা না করে তাহলে প্রেসিডেন্টের পক্ষে শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন অসম্ভব হবে না। দেশবাসী এখন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান আলোচনার ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, যদি কোনো সরকার অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় না আসে, তাহলে ওই সরকার নানা রকমের দুর্বলতায় ভোগে। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য দলীয় পেশীশক্তি সহ প্রশাসন ও পুলিশের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ে। স্বভাবতই এ ধরনের সরকারের আমলে সুশাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। বর্তমান সরকারের আমলেও আমরা সেটা প্রত্যক্ষ করছি। সরকারকে রাজনৈতিকভাবে ও জনগণের শক্তিতে শক্তিশালী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। শক্তিশালী সরকারই কেবল সুশাসন, ন্যায়বিচারপ্রাপ্তি ও মানবাধিকারের সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে পারে। ইইউ যে সব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, সেই বিষয়গুলো, সুশাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমরা আশা করবো, রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সমঝোতার ভিত্তিতে একটি দক্ষ, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভবপর হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।