Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রেলের উন্নয়নে দক্ষ লোকবল নিয়োগ দিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

রেলে লোকবল সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। পর্যাপ্ত দক্ষ লোকের অভাবে এর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লোকবলের অভাবে রেলের পশ্চিমাঞ্চলে ১৭৫টি স্টেশনের মধ্যে ৫৪টি বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ স্টেশনগুলোতে টিকিট বিক্রি হয় না। ফলে বিনা ভাড়ায় যাত্রীরা রেলে উঠছে। এতে টিটি ও যাত্রীদের মধ্যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনও বলেছেন, লোকবলের অভাবে অনেক স্টেশন বন্ধ রয়েছে। লোকোমটিভ, মাস্টার, কারখানা, সিগন্যাল বেল্ট, ওয়েব্যান সবক্ষেত্রেই বিরাট ঘাটতি চলছে। তিনি বলেন, একজন লোক নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজে লাগানো যায় না। তার প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। দুর্নীতিগ্রস্ত লোকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বিকল্প লোক বসানোর মতো লোক নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, রেলের লোকবল সংকটের এ চিত্র উদ্বেগজনক। লোকবল সংকটের কারণে রেলের মতো নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশগুলো যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে রেলকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আরামদায়ক, নিরাপদ ও দ্রæত গন্তব্য স্থলে পৌঁছানোর মতো এমন ব্যবস্থা স্থলপথে খুব একটা নেই। যাত্রীরাও রেল ভ্রমণে বেশি আগ্রহী। এটি এমন এক ব্যবস্থা যা দুর্গম এলাকা দিয়েও চলাচল করতে পারে। পাহাড়ি অঞ্চল, মরুভূমি, তুষারপ্রবণ এলাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চল এবং পাতালে ঝুঁকিমুক্ত হয়ে চলতে পারে। ফলে বিশ্ব এখন রেল ব্যবস্থার দিকে বেশি ঝুঁকেছে। এমনকি একদেশের সাথে আরেক দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে রেলকে বেছে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। পার্শ্ববর্তী ভারতে রেল ব্যবস্থা এমনই যে, সবচেয়ে বেশি যাত্রী রেলে ভ্রমণ করে। তার রেল ব্যবস্থাও বেশ উন্নত। ট্রেনে একজেলা থেকে আরেক জেলায় গিয়ে কর্মজীবীরা অফিস করছে, শিক্ষার্থীরা ক্লাস করে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। এর বিপরীত চিত্র দেখা যায় আমাদের দেশে। যাত্রীরা রেলকে অগ্রাধিকার দিলেও এর অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি অন্তরায় হয়ে রয়েছে। যাত্রীসেবা বলে কিছু নেই। সরকার বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা রেলে ব্যয় করলেও এর কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এক সময় রেলে দুর্নীতির ‘কালো বিড়াল’-এর বিষয়টি বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছিল। সেই কালো বিড়ালের খপ্পর থেকে রেল এখনো বের হতে পারেনি। সিডিউল বিপর্যয় থেকে শুরু করে রেলের অভ্যন্তরের পরিবেশ নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই। বিশেষ করে ঈদের সময় ঘরমুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে সিডিউল বিপর্যয় এবং টিটিক না পাওয়া নিত্যকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশে সড়ক যোগাযোগ সম্প্রসারিত হলেও এতে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যা লেগে থাকে। কোথাও কোথাও সড়কের বেহালদশার চিত্র পরিলক্ষিত হয়। সড়কে অবৈধ দখল, যানজট ও দুর্ঘটনা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া যাত্রী হয়রানি, ডাকাতিসহ নানা কারণে অনিরাপত্তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় নিরাপদ ব্যবস্থা হিসেবে রেলকে উন্নত করতে পারলে সড়কের ওপর থেকে চাপ অনেকাংশে কমে যাবে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, রেলকে উন্নত করার ক্ষেত্রে যে ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি তা নেয়া হয় না। উন্নত বিশ্ব যেখানে বুলেট ট্রেনের দিকে ছুটছে সেখানে আমরা প্রাচীন পরিস্থিতির মধ্যে রয়ে গেছি। অথচ রেলের উন্নয়নে জনগণের অর্থ ব্যয় হলেও তার কোনো মানসম্পন্ন সুবিধা তারা পাচ্ছে না।

আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে রেল ব্যবস্থার উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। গন্তব্যস্থলে যাত্রী ও মালামাল আরামদায়ক ও দ্রæত পরিবহনের ক্ষেত্রে রেলকে আধুনিক বাহন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও কাক্সিক্ষত মান ও সেবা কেন পাওয়া যাচ্ছে না, তার জবাবদিহিতা প্রয়োজন। লোকবলের যে সংকটের কথা বলা হচ্ছে, তা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এক্ষেত্রে গাফিলতি রয়েছে। এটা ভাবা যায় না, লোকবল সংকটের কারণে স্টেশন বন্ধ হয়ে যাবে। অনেক সিনিয়র কর্মকর্তার অবসর গ্রহণের সময় হয়ে এলেও তার বিকল্প লোকের সংকট দেখা দেয়া এবং যথাসময়ে নিয়োগ না দেয়া চরম উদাসীনতা। রেলকে ঢেলে সাজাতে হলে লোকবল বৃদ্ধিসহ সার্বিক সেবার মান বাড়াতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের দেশে যেকোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি বড় ধরনের সমস্যা হয়ে রয়েছে। দুর্নীতির কারণে অযোগ্য ব্যক্তিদের বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। রেল যেহেতু একটি বিশেষায়িত পরিবহণ ব্যবস্থা এক্ষেত্রে দক্ষ লোকের বিকল্প নেই। লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে যাতে কোনো ধরনের দুর্নীতি না হয় এবং উপযুক্তরা নিয়োগ পায় এ ব্যাপারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। নিয়োগ দেয়ার পর তাদের দক্ষ করে তোলার জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। রেলকে অটোমোশনে রূপান্তরিত করতে হবে। সেবার মান বৃদ্ধি করে যাত্রীদের আকৃষ্ট করে একে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেল

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন