নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের কথা আসলে, প্রথমেই স্মরণ করতে হবে ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে ব্রাজিলের দুর্দান্ত জয়। যদিও মেক্সিকোর এই বিখ্যাত অঙ্গনে ‘পার্টিডো দেল সিগলো’ অর্থাৎ শতাব্দীর সেরা খেলা নামে একটি স্মারক আছে। তবে এই দুর্দান্ত শিরোনামটি এমন একটি ম্যাচের জন্য দেওয়া হয়েছে যেখানে পেলে, কার্লোস আলবার্তো এবং অন্যান্য ব্রাজিলিয়ানদের দেখা যায়নি। এই স্বারকটি ম‚লত ইতালীয় এবং পশ্চিম জার্মানির মধ্যকার ১৯৭০ বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালের স্মরণে বানানো হইয়েছে। যা অ্যাজটেকা স্টেডিয়ামের চত্বরে অবস্থিত। যার মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করে, সাত গোলের একটি মহারণকে সম্মান জানানো হয়েছে।
অবশ্যই এই ম্যাচ ও স্মারকের সঙ্গে জড়িত সবাই এটিকে আনন্দের সাথে স্মরণ করে না। সুখ কিংবা আনন্দের স্মৃতিটুকু ইতালিরই বেশি। এই বিখ্যাত ম্যাচে জার্মানির হয়ে অতিরিক্ত সময়ে দুটি গোল করেছিলেন প্রয়াত জার্ড মুলার। এই ম্যাচের ব্যাপারে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি পরে জানান, ‘সেই ম্যাচটি আমাদের কেউ ভুলে যাইনি। এই ম্যাচের ব্যাপারে ভাবলে আমি এখনও উন্মাদ হয়ে যাই। আমি আজ পর্যন্ত এই দুঃসহ স্মৃতি থেকে মুক্তি পাইনি।’
সেই ম্যাচে ইতালি রবার্তো বোনিনসেগনার ম্যাচ শুরুর অষ্টম মিনিটেই গোল করেন। সেই গোল একদম ৯০ মিনিটে পশ্চিম জার্মানি গোল করলে খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়। অতিরিক্ত সময়ের খেলা শুরু হলে ৯৪ মিনিটের সময় মুলার এগিয়ে দেন জার্মানদের। এরপর যথাক্রমে ৯৮ ও ১০৪ মিনিটে দুই গোল করে এগিয়ে যায় ইতালিয়নরা। তবে জার্মানরা এতসহজে হার মানতে চায় না। ম্যাচের ১১০ মিনিটের সময় যখন মুলার সমতায় ফেরান দলকে। তবে ঠিক এক মিনিট পরই আজ্জুরিদের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন জিয়ান্নি রিভেরা। এতসব নাটকের মাঝে ম্যাচটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে।
এবার আসা যাক জার্মানীর নির্ধারিত সময়ে করা সমতা সুচক গোলটির দিকে। এটি এমন কোন গোল স্কোরারের কাছ থেকে আসে নি যিনি নিয়মিত গোল করতেন। গোলটি করেছিলেন ডিফেন্ডার কার্ল-হেনজ স্নেলিঙ্গার। যিনি তার ক্লাব ক্যারিয়ারের প্রায় গোটাটাই খেলেছিলেন ইতালিতে। এই ডিফেন্ডার বিশ্বকাপের আগে এসি মিলানের হয়ে ২২২টি ম্যাচে একবারও জন্যো জালের ঠিকানা পাননি। কিন্তু জার্মানি যখন নির্ধারিত সময়ের খেলায় হেরে যাচ্ছিল তখন তিনি একদম নিজস্ব প্রচেষ্টায় ইতালির বিপক্ষে গোলটি করেছিলেন। এরপরই জার্মান ভাষ্যকার আর্নস্ট হুবার্টির সেই বিখ্যাত চিৎকার ও কান্না করে বলেছিলেন, “স্নেলিংগার!”, অসগেনেইশনাট! অর্থাৎ স্নেলিংগারই সর্বেসর্বা!
এই ম্যাচে ইতালির কোচ ফেরুসিও ভালকারেগি স্যান্ড্রো মাজোলার পরিবর্তে নামান আরও পরিশ্রমী রিভেরাকে। ভালকারেগির এই পদ্ধতিকে ‘স্টাফেটা’ বলা হতো। যা খুবই বিতর্কিত ছিল। কিন্তু আজ্জুরি ম্যানেজার সেটা বজায় রেখেছিলেন। যেখানে প্রচুর দৌড়াতে হয়। কিছুটা বর্তমান প্রেসিং ফুটবলের মত, তবে সেটা কেবল আক্রমণের জন্য। আগের বছরই বর্ষসেরা বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জেতা রিভোরা ছিলেন অত্যন্ত ক্ষীপ্র। এই ফুটবলারকে ভালকারেগি সবচেয়ে কার্যকর বলে মনে করেতেন তখনই, প্রতিপক্ষের রক্ষণ যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও হাইভোল্টেজ ম্যাচ খেলা জার্মানির সেমিতে একটা নির্ধারিত সময়ের পর ক্লান হয়ে যাবেন এমনটাই ধারণা ছিল আজ্জুরি কোচের। ভালকারেগি বলেন, ‘আমি ভুল করেছিলাম। জার্মান্দের স্টেমিনা অসাধারন ছিল।’
প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিম জার্মানীর অধিনায়ক ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার তার আহত বাহু নিয়ে খেললেও, জার্মানরা তাদের স্টেমিনা ও হার না মানা মনোভাব দিয়ে অতিরিক্ত সময়ে এগিয়ে যায়। চার মিনিট পরে তারসিসিও বুর্গনিচের গোলে সমতায় ফেরার পর লুইগি রিভা তাদের ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় অ্যাজটেকার দর্শকরা তখন মুলারকে আসরের দশম গোলের মালিক হতে দেখেন। ম্যাচে সমতা আসে আবারও। তখন পোস্টের পাহারায় ছিলেন রিভেরা।
ইতালির গোলরক্ষক এনরিকো আলবার্তোসি তখন তাদের ‘গোল্ডেন বয়’কে (রিভেরা) রীতিমত বকাঝকা করেন। কারণ এই মিডফিল্ডার খুবই সেøা ছিলেন মুলারের বিপক্ষে। তিরস্কৃত হবার পর ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে, ভিলেন থেকে আজ্জুরিদের নায়ক হয়ে গেলেন রিভেরো। গোল করে কেবল ইতালিকেই জেতাননি, বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে নাটকীয় ম্যাচগুলির একটির স্বীকৃতি ও নিয়ে এসেছিলেন নিজের দেশের জন্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।