নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সময়টা তখন ১৯৭৪। জার্মানি তখন দুই ভাগে বিভক্ত। পশ্চিম জার্মানি সেবার বিশ্বকাপের আয়োজক। স্বাগতিক দল সেবার ব্রাজিল বা নেদারল্যান্ডসকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মত শক্তিশালী ছিল না। তবে কিছুটা রঙ হারালেও, পশ্চিম জার্মানির ছিলেন একজন জার্ড মুলার। যাকে আদর করে জার্মানরা ‘ডার বোম্বার’ নামে অভিহিত করত। সেই বোম্বারে ভর করেই সেবার শিরোপা জেতে স্বাগতিকরা। মজার বিষয় হচ্ছে, আসর শুরুর আগেও আত্মবিশ্বাসের সাথে শিরোপা জয়ের বলতে পারছিল না তারা। অথচ মেক্সিকোতে আগের আসরে, পশ্চিম জার্মানি ছিল শিরোপার বড় দাবিদার। তবে ১৯৭০ সালের আসরে দুর্ভাগ্যবসত ইতালির বিপক্ষে টাই-ব্রেকারে হেরে, বাদ পড়তে হয়েছিল জার্মানদের পশ্চিম অংশের।
১৯৭৪ সালের বিশ্ব আসর শুরু হলে, গ্রæপ পর্বটা একদম মলীন কাটে পশ্চিম জার্মানির। দলের সবচেয়ে বড় তারকা জার্ড মুলার গ্রæপ পর্বে সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েও ৩ ম্যাচে করতে পেরেছিলেন মাত্র ১ গোল। নক আউটে যাওয়ার আগে তারা শেষ ম্যাচটি খেলেছিল পূর্ব জার্মানি বিপক্ষে। সেই ম্যচে সারা বিশ্বকে চমকে দিয়ে জার্মানির পশ্চিম পার্শ্ব হেরে যায়। তখন স্বাগতিকদের ড্রেসিং-রুমের অবস্থা খুবই ভয়াবহ ছিল। যা পরে মুলারের এক আলাপচারিতায় বের হয়ে আসে, ‘সেই হারে টিম ক্যাম্পে নরকের মত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। সবাই ভেঙ্গে পড়েছিল।’
তবে সেই হারকে ভ‚মিকম্পের মত ভয়াবহ দেখালেও, তাতে একটা আশীর্বাদও ছিল। সেকেন্ড রাউন্ডে জার্মানরা ব্রাজিল বা নেদারল্যান্ডসের মত শক্তিশালীদের এড়িয়ে গেল। শেষ ষোলোতে যুগসøাভিয়াকে ২-০ ব্যবধানে হারানোর ম্যাচে মুলার পেলেন এক গোল। কোয়ার্টার-ফাইনালে সুইডেনের বিপক্ষে পশ্চিম জার্মানি জিতল ৪-২ ব্যবধানে সেখানে ‘ডার বোম্বার’ করলেন ৩ এসিস্ট। আর সেমিফাইনালে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ নির্ধারনী একমাত্র গোলটিও করলেন মুলার।
তবে ফাইনালে স্বাগতিকরা মুখোমুখি হয় সেই টুর্নামেন্টে উড়তে থাকা ডাচদের বিপক্ষে। সারা বিশ্বের ফুটবল বোদ্ধাদের ধারণা ছিল, ফাইনালটা হেসে খেলেই জিতবে ইয়হাইন ক্রুইফের নেদারল্যান্ডস। ম্যাচের শুরুতে পেনাল্টি থেকে নিসকেন্সের গোলে এগিয়ে যায় কমলারা। কথায় আছে ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ মানে বিপদ সীমার আগের সংকত। সেই সংকেত যেন পেয়েছিল স্বাগতিকরা। ম্যাচের ২৫তম মিনিটে পল ব্রেইটনার, সেই স্পট কিক থেকেই সমতায় ফেরান জার্মানদের। ডাচরা এরপরই ‘টোটাল ফুটবলের টোটকায়’ আক্রমণের বন্যা বসিয়ে দেয় স্বাগতিকদের উপর। কিন্তু বিরতির মিনিট কয়েক আগে রেইনার বোনহ্যাফ রাইট উইং দিয়ে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দারুণ এক নিচু ক্রস করেন মুলারের কাছে। তিন মার্কারে ঘেরে মুলার সেই বল প্রথম টাচে নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হন, তবে সেই ব্যর্থতার কারণেই ধোকা খায় তিন ডাচ ডিফেন্ডার। এরপর ‘ডার বোম্বার’ দারুণ দক্ষতায় সেই তিন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়েই বলটি পাঠিয়ে দেন নেদারল্যান্ডেসের জালে। আনন্দে ফেটে পরে গোটা মিউনিখ স্টেডিয়াম।
মুলারের সেই বীরত্বেই সেবার ২-১ ব্যবধানে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে শিরোপা জেতে পশ্চিম জার্মানি। সেটা ছিল জার্মানদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা। আর নেদারল্যান্ডসের ১৯৭৪ সালের দলটি ছিল, বিশ্বকাপের কাপের ইতিহাসেই সবচেয়ে শক্তিশালী দল। তবে ‘ডার বোম্বারে’ই ধরাশায়ী হতে হয় ইয়হাইন ক্রুইফের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিশ্বকাপ দলটি।
মুলার শিরোপা জয়ের পরে বলেন ‘বিশ্বকাপ জেতা সত্যিই অসাধারণ। বিশেষ করে শিরোপা নিজের হাতে ছুঁয়ে দেখাটা।’ মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে এই জার্মান স্ট্রাইকার করেছিলেন ১০ গোল। এরপরও সেই টুর্নামেন্ট সেরা হতে পারেনি জার্মানরা। কিন্তু ১৯৭৪ সালে মুলারের মাত্র ৪ গোল ও ৩ এসিস্টই যথেষ্ট ছিল, পশ্চিম জার্মানির শিরোপা জয়ের জন্য। এই ব্যাপারে মুলার ওকেপটে একটি সত্য স্বীকার করেন, ‘আমরা মেক্সিকোর তুলনায় অনেক খারাপ খেলেছিলাম জার্মানি বিশ্বকাপে। বিশেষ করে প্রথম তিনটি খেলা ছিল একদম বাজে। ড্রেসিং রুমেও সমস্যা ছিল।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।