মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ঐকমত্যের লড়াই করছেন, তা মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনের এবং ইউরোপের শীতকে সামনে রেখে ক্রমেই ¤্রয়িমান হয়ে পড়ছে। বাইডেনের উপদেষ্টারা উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, ইউক্রেনীয় নেতারা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনায় বসতে রাজি নন। তবে, শেষ পর্যন্ত যে আলোচনা ঘটার সম্ভবনা রয়েছে, সেখানে আমেরিকানরা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সমর্থন দেবে এবং তার অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এই নরম সুর বলে দিচ্ছে যে, মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি কঠিন এবং নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের কৌশলগত যোগাযোগ সমন্বয়কারী জন এফ কিরবি বুধবার জোর দিয়ে বলেন, ‘যদি এবং যখন আলোচনার টেবিলে বসতে হয়, জনাব জেলেনস্কি নির্ধারণ করবেন তা কখন; তিনি সাফল্য দেখতে কেমন হবে, তা নির্ধারণ করবেন এবং তিনি রাশিয়ানদের সাথে কী বা কী আলোচনা করতে ইচ্ছুক হবেন, তা নির্ধারণ করবেন। কিন্তু আমরা এখনো সেখানে আসিনি।’ ডেমোক্রেটদের একটি প্রগতিশীলদের দল ইউক্রেন কৌশল সংশোধন করার আহŸান এবং বিরোধ সমাধানের জন্য রাশিয়ার সাথে সরাসরি আলোচনার সম্ভাবনাকে পর্যালোচনার আহŸান জানিয়ে বাইডেনের কাছে দেয়া একটি চিঠি প্রত্যাহারের একদিন পর কিরবি এ মন্তব্য করেন। তবে, আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি প্রত্যাহার করে নিলেও ইউক্রেন ইস্যুতে মত পার্থক্য বাড়ছে ডেমোক্রেটদের মধ্যে।
বাইডেনের মিত্ররা বলেছে যে, প্রগতিশীলরা তাদের চিঠি প্রত্যাহার করে নিলেও বাইডেনকে জনসাধারণের কাছে তার কৌশল এবং তাদের স্বার্থ জড়িত থাকার বিষয়টি ব্যাখ্যা করার আহŸান জানিয়েছেন। ৩২ শতাংশ রিপাবলিকান যখন বলেছেন যে, ইউক্রেন নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে। ১১ শতাংশ ডেমোক্র্যাটও একই মত প্রকাশ করেছেন। প্রায় ৪৬ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সঠিক পন্থায় বা যথেষ্ট কাজ করছে না। এবিষয়েও রিপালিকানদের সাথে একমত হয়েছেন ৬৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট। এর আগে, ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিনিধি কেভিন ম্যাক্কার্থি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প এবং ফক্স নিউজ হোস্ট টাকার কার্লসনের সাথে একমত হয়ে গত সপ্তাহে ইউক্রেনের ভবিষ্যত সহায়তা রোধ করার হুমকি দিয়েছেন।
কিন্তু, ইউক্রেনকে দেয়া বø্যাঙ্ক চেক প্রতিরোধ করার প্রতিশ্রæতি দিয়ে ম্যাকার্থির বিবৃতি দেওয়ার আগেও, মে মাসে হাউসে ৫৭ জন রিপাবলিকান এবং সিনেটে ১১ জন দেশটিকে ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন এবং নির্বাচনী প্রচারাভিযানে বেশিরভাগ রিপাবলিকান প্রার্থী ইউক্রেনকে আরও দেয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রত্যাশিত হিসাবে রিপাবলিকানরা কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে, ম্যাক্কর্থি নতুন স্পিকার হবেন এবং ইউক্রেনের ভবিষ্যত সহায়তা প্যাকেজ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। ফলে বাইডেনের জন্য আগামী কয়েক সপ্তাহ গুরুত্বপ‚র্ণ।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্ররা প্রকট শীতের শুরুতে রাশিয়ার সাথে সঙ্ঘাতের ভবিষ্যত পরিণতিকে ভিন্ন উপায়ে দেখতে শুরু করেছেন। ক্রিমিয়া সহ প‚র্ব ইউরোপের কিছু প্রাক্তন সোভিয়েত দেশ চায় যে, রাশিয়া চরমভাবে পরাজিত হোক। কিন্তু জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইতালির মতো দেশগুলি বিশ্বাস করে যে, এই ধরনের প‚র্ণমাত্রার বিজয় অবাস্তব। এবং তারা উদ্বেগে রয়েছে যে, কীভাবে এই যুদ্ধ শেষ হতে পারে, ওয়াশিংটন সে সম্পর্কে স্পষ্টভাবে ভাবছে না। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একই ধরনের মনোভাব পোষণ করে, এমন মিত্রদের মধ্যেও জ¦ালানী ও প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে। বুধবার গ্যাসের দামের উপর ফ্রান্স-সমর্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল্য আরোপ নিয়ে তাদের মতপার্থক্য নিয়ে আলোচনা করতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এবং জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শল্জ প্যারিসে সাক্ষাত করেছেন।
ইউরোপে উদ্বেগ রয়েছে যে, ইউক্রেন রাশিয়াকে মরিয়া করে তুলবে যে, যা ওয়াশিংটনের অজানা নয়। ইউরোপীয় নেতাদের আশঙ্কা যে, রাশিয়ার জন্য খুব বড় ক্ষতি পুতিনকে পারমাণবিক অস্ত্র বা তেজস্ক্রিয় উপাদান সম্বলিত বিস্ফোরক ‘ডার্টি বোম› ব্যবহার করতে বাধ্য করবে। এটি একটি প্রধান কারণ যে, জার্মানি এবং ফ্রান্স তাদের ইউক্রেনে পাঠানো অস্ত্রের পরিমাণ সাবধানে নির্ধারণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং পোল্যান্ডের সরবরাহ করা অস্ত্রের বন্যা এবং বাকি ইউরোপ যা সরবরাহ করছে, তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বৈষম্য রয়েছে। এটি ক্রমাগত প্রশ্ন উত্থাপন করছে যে, কিছু দেশ যুদ্ধটিকে সংক্ষিপ্ত করে আনতে এবং দ্রæত আলোচনায় বসানোর জন্য ধীর গতিতে অস্ত্র সরবরাহের কৌশল অবলম্বন করছে কিনা। জার্মান পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক উলরিখ স্পেক বলেন, ‘কোন দেশ পাঠায় এবং কত ধীরে ধীরে পাঠায়, তা পশ্চিমা দেশগুলোর যুদ্ধের লক্ষ্য সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছু বলে দেয়। এবং এটি এখন আরও গুরুত্বপ‚র্ণ হয়ে উঠেছে কারণ ইউক্রেন পশ্চিমা অস্ত্রের উপর বেশি নির্ভরশীল।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।