Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মধ্যবর্তী নির্বাচন ও আ’লীগের কাউন্সিলের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই শেখ হাসিনা

ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৬ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : মধ্যবর্তী নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিলের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। তৃণমূল থেকে প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলায় দলের কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হবে এবং কাউন্সিলররা নেতৃত্বের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, নির্বাচন সময় মতো অনুষ্ঠিত হবে এবং এ নির্বাচনের সঙ্গে দলের কাউন্সিলের কোন সম্পর্ক নেই। এটা আমাদের রুটিন কাজ এবং প্রতি ৩ বছরে দলীয় কাউন্সিল হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা বাতিল করে দেন। তিনি বলেন, এমন কি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে যে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের
খবর কি যমুনা নদীর স্্েরাতে ভেসে এসেছে। এমন কি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে যে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জরুরি অবস্থায় এবং সামরিক শাসনামলে দলের কাউন্সিল হয়নি। কিন্তু অন্য সময় আমরা নিয়মিত দলীয় কাউন্সিল করার চেষ্টা করেছি এবং আমরা সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছি। দেশে এখন সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ বলবৎ থাকার কথা পুনরুল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমান গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যাতে কোন মধ্যবর্তী নির্বাচন হতে হবে।
সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে বিএনপি ও কতিপয় অন্য দলের বিরোধিতা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীদলের প্রবণতা হচ্ছে প্রতিটি কাজের বিরোধিতা করা এবং এ ব্যাপারে ভয়ের কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, সংসদে বিরোধীদল যথাযথভাবে তাদের ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু বিশেষ করে যারা সংসদে নেই এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, গত সাধারণ নির্বাচন বানচাল করতে যারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে, ভোট কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে এবং একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে হত্যা করেছে, বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও ট্রাকে আগুন দিয়েছে, আপনি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু আশা করতে পারেন না।
শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, গত নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত করেছে। কিন্তু গত নির্বাচন বানচালে তারা তাদের প্রচেষ্টায় সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে এবং যারা মানুষ পুড়িয়ে মারায় বিশ্বাসী তাদের কাছ থেকে আপনি ভালো কিছু আশা করতে পারেন না।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এবারে তার সাধারণ পরিষদের ‘৭১তম অধিবেশনে অংশগ্রহণকে সফল এবং ফলপ্রসূ উল্লেখ করে এই অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমর্যাদাকে আরও উজ্জ্বল করেছে বলে মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামগ্রিকভাবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে আমরা বাংলাদেশের এজেন্ডাগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। বিভিন্ন ফোরামে আমাদের সক্রিয় এবং ফলপ্রসূ অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করেছে বলে আমার বিশ্বাস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকটি কারণে এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যার মধ্যে-প্রথমত, ইউরোপে চলমান শরণার্থী সঙ্কট ও অভিভাসন সমস্যাসহ যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোর লাখ লাখ আশ্রয় প্রতাশীদের সমস্যা। দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্যে আইএসসহ বিশ্বব্যাপী সহিংস জঙ্গি তৎপরতার উত্থান এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকা। তৃতীয়ত, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ‘প্যারিস ক্লাইমেট ডিল’ অনুসমর্থনের বিষয়টি এবং চতুর্থত, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সম্বলিত ‘২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টে’র চূড়ান্ত অনুমোদনসহ আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুসমর্থনের বিষয়াবলী সংশ্লিষ্ট থাকা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে বিভিন্ন বৈঠক এবং বিশ্বনেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়েও বিস্তারিত তুলে ধরেন।
সাধারণ অধিবেশনে নিজের দেয়া বক্তৃতা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণ পরিষদের বিতর্ক অধিবেশনে আমি প্রতিবারের মত এবারেও মাতৃভাষা বাংলায় বক্তব্য রাখি। তিনি বলেন, আমার বক্তব্যে সাম্প্রতিক সময়ে অভিভাসন সংকট, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানকে জোরালোভাবে তুলে ধরি।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমার সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পুনর্ব্যক্ত করি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসীদের পরামর্শদাতা, মূল পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা, পৃষ্ঠপোষক, অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারী এবং প্রশিক্ষকদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।
এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ বিভিন্ন খাতে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিশ্রুত দেশগুলোর কাছে সহায়তার আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে অত্যন্ত জোরালো বলে আখ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী।
কানাডায় পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনায় তার সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং নিউইয়র্কে নিজস্ব কনস্যুলেট ভবন নির্মাণে সরকারের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে বলেও প্রশ্নের জাবাবে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নিজের আত্মজীবনী লেখার বিষয়ে আপাতত কোন চিন্তা-ভাবনা নেই উল্লেখ করে তিনি নিজেকে জাতির পিতার কন্যা এবং ‘ফাদার্স ডটার’ হিসেবেই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চান এবং এটাকেই জীবনের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলেও উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। এ সময় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গীরাও উপস্থিত ছিলেন।
ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে ৫ দিনের ব্যস্ত সফর শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সড়কপথে ওয়াশিংটন পৌঁছেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহ্সানুল করিম বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বর দেশের উদ্দেশে রওনা দেয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী সপ্তাহান্তের দুই দিন ওয়াশিংটনে অবস্থান করবেন। প্রধানমন্ত্রী দুবাই হয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর বিকালে ঢাকায় পৌঁছবেন।
ওয়াশিংটনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী গতকাল নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন অফিসে সংবাদ সম্মেলন করেন। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে তার এই সফর সম্পর্কে অবহিত করতে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পরে তিনি ভয়েস অব আমেরিকাকেও সাক্ষাৎকার দেন।



 

Show all comments
  • মামুন ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১:৩০ পিএম says : 0
    কাউন্সিলে তো বিশেষ কোন পরিবর্তন নেই
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদা ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১:৫৫ পিএম says : 0
    কাউন্সিলে ত্যাগী নেতাদের যেন প্রাধান্য দেয়া হয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মধ্যবর্তী নির্বাচন ও আ’লীগের কাউন্সিলের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই শেখ হাসিনা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ