Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এবার দেশের বাইরে ভালো খেলার চ্যালেঞ্জ

| প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : বিদেশের মাটিতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলার মিশনে মাশরাফিরা। সময়ের হিসেবে টেস্টে ২৭ মাস। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর ওয়ানডেতে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ অবতীর্ণ হচ্ছে ২১ মাস পর। টি-২০ বিশ্বকাপের পর সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে ফিরতে সেখানে অপেক্ষা ৯ মাসের। ২০১৪’র সেপ্টেম্বরে সেন্ট লুসিয়া টেস্টের পর ঘরের মাঠে বাংলাদেশ খেলেছে ১০ টেস্ট। যে ১০টি টেস্টের মধ্যে ৪টিতে জয়, ৪টিতে ড্র’Ñহার সেখানে মাত্র ২টি। ওয়ানডে ক্রিকেটে র‌্যাংঙ্কিংয়ে ৯ থেকে লাফিয়ে ৭ এ ওঠার গল্পটাও গত ২১ মাসে ঘরের মাঠের সাফল্যে। যে পর্বে ১৮টি ওয়ানডে ম্যাচে ১৩টিতে হেসেছে বাংলাদেশ, মাশরাফির নেতৃত্বে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ জিতেছে এই সময়ে টানা ৫টি সিরিজ। হোমে লম্বা সময়ে ধারাবাহিক পারফরমেন্সের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা বাংলাদেশ দলকে এখন নিতে হচ্ছে বিদেশের মাটিতে কঠিন চ্যালেঞ্জ। নিউজিল্যান্ডের মাটি থেকে কখনোই কোন ভার্সনের ক্রিকেটে জয়ের অতীত নেই বাংলাদেশ দলের। সেই অতীত মুছে নুতন ইতিহাস রচনার প্রত্যয় নিয়ে আজ মাশরাফির নেতৃত্বে ১২ ক্রিকেটার ছাড়ছেন ঢাকা। যাবার প্রাক্কালে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অ্যাওয়ে সিরিজের কঠিন চ্যালেঞ্জের কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন ওয়ানডে এবং টি-২০ অধিনায়ক মাশরাফিÑ ‘গত বছর থেকে অধিকাংশ ম্যাচই আমরা হোমে খেলেছি। অধিকাংশ ম্যাচও আমরা জিতেছি। আমরা দেড়-দুই বছর আগে টার্গেট করেছিলাম, হোমে অন্তত: ৮০ ভাগ ম্যাচ জিততে চাই। এখন হোমের বাইরে খেলার চ্যালেঞ্জ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে খেলা অনেক প্রতিষ্ঠিত দলের জন্যও চ্যালেঞ্জিং। আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জটা আরো বেশি।’
তবে ভিন্ন কন্ডিশনে আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারলে ভাল কিছু করা সম্ভব, এই দর্শনেই নিউজিল্যান্ড সফরে খেলতে চান মাশরাফিÑ ‘নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ভিন্ন। আত্মবিশ্বাস নিয়ে যেভাবে খেলেছি আমরা, তা থেকে যদি আমরা ওখানে ছন্দ তাহলে ভিন্ন কন্ডিশনেও ভাল ফল করা সম্ভব।’ নিউজিল্যান্ড সফরে কন্ডিশনের সঙ্গে দ্রæত খাপ খাইয়ে নেয়াটাও মাশরাফির জন্য চ্যালেঞ্জÑ ‘ওই রকম পরিস্থিতিতে এখনও আমরা নতুন। তাই দ্রæত খাপ খাইয়ে নিতে হবে। আমাদের মাইন্ড সেট আপ এখন আগের চেয়ে ভিন্ন। কারণ, আমরা যেখানেই খেলি না কেন, সেখানেই জিততে হবে, এখন এটাই মানুষের প্রত্যাশা। আমরা যখন যাব তখন আমাদের জন্য কঠিন। সব কিছুই আলাদা। তারপরও আমরা চাইব ম্যাক্সিম ম্যাচ জিততে। তবে এটা বলাও যেমন কঠিন করাও ততটাই কঠিন।’
বাংলাদেশ দল খেলবে নিউজিল্যান্ডে, অথচ এই সিরিজ পূর্ব কন্ডিশনিং ক্যাম্প করবে বাংলাদেশ দল অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে। তবে সিডনীতে কন্ডিশনিং ক্যাম্পের উদ্যোগকে প্রশংসা করেছেন মাশরাফিÑ ‘শুনেছি নিউজিল্যান্ডে ওই সময়ে অনুশীলন ক্যাম্পের সুযোগ পাওয়া যায়নি। তাই অস্ট্রেলিয়ায় কন্ডিশনিং ক্যাম্প করা হচ্ছে। তবে উদ্যোগটা খুবই ভালো। অন্তত: আমরা কাছাকাছি কোথাও চেষ্টা করছি। নিউজিল্যান্ড আগে-ভাগে যেতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু এই সময়ে যদি ওদের সুযোগ-সুবিধাগুলো আমাদেরকে দিতে না পারে, তখন আসলে কিছু করার থাকবে না।’ ২০১৫ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ব্রিসবেনে ১৫ দিনের ক্যাম্পে উপকৃত হয়েছে বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য সাফল্যের পেছনে ওই ক্যাম্পই এসেছে উঠে। এবার সিডনীর ক্যাম্প থেকেও বাংলাদেশ দল উপকৃত হবে, এমনটাই প্রত্যাশা মাশরাফিরÑ ‘ওখানে পুরো টিম থাকব পরিবারের মত। একসঙ্গে থাকব, অনুশীলন করব। কার কি সমস্যা হচ্ছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব। সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া যাবে। সমস্যাগুলো শেয়ার করা যাবে। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপের আগে ১৫ দিনের একটা ক্যাম্প হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। ওটা কিন্তু আমাদের কাজে দিয়েছে। একমাত্র অনুশীলন ম্যাচে আমরা হেরেছিলাম। তারপর সর্বশেষ বিশ্বকাপে আমরা প্রথম রাউন্ডে ভালো খেলেছি। দ্বিতীয় রাউন্ডেও ভালো করার সুযোগ ছিল।’
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সিরিজ চলছে এখন, সিরিজের ম্যাচগুলোর ভিডিও দেখে তা পর্যালোচনা করে প্রস্তুতি নিতে চান মাশরাফিÑ ‘অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের খেলা দেখছি। হয়তো বা ওখানে গিয়ে এগুলো আরও রিভিউ করা হবে। নিউজিল্যান্ডের নির্দিষ্ট ব্যাটসম্যান, বোলারদের সম্পর্কে আরো বেশি বেশি ধারণা নিতে পারব।’
বিপিএলের ২ পারফরমার পেস বোলার শহীদ এবং শফিউলের ইনজুরি ভাবাচ্ছে মাশরাফিকে। পাশাপাশি ফিট সাকিব, তামীমকে পেয়ে স্বস্তিতে নিউজিল্যান্ড সফর করবেন বলে ভরসা পাচ্ছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে এবং টি-২০ অধিনায়কÑ ‘এখন প্রায়ই শুনি যে আমাদের ব্যাকআপ প্লেয়ার অনেক। আমি কিন্তু ব্যাকআপ প্লেয়ার দেখছি না। সাকিবের সঙ্গে কাউকে রিপ্লেস করার মতো প্লেয়ার নাই। সাকিব বিশ্ব ক্রিকেটের টপ লেভেলের ক্রিকেটার, এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ও সবসময় নিজেকে সঠিক সময়ে প্রæভ করেছে। আর জাতীয় দলে সে সব সময়ই সেরা। তামিমের রিপ্লেস করা কঠিন। শফিউল অনেক ভালো ফর্মে ছিলো। এই মুহূর্তে তাদের ইনজুরিগুলো অবশ্যই কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে। ইনজুরির কারণে ইংল্যান্ড সিরিজে আমরা মুস্তাফিজুরকে পাইনি। তাতে কিছু না কিছু ক্ষতি হয়েছে। মুস্তাফিজ থাকলে আমরা হয়তো দুইটা টেস্টই জিততে পারতাম, তাকে পেলে হয়তো বা ওয়ানডে সিরিজটিও জিততে পারতাম। মুস্তাফিজ এখনো ফিটের পথে, পুরোপুরি বোলিং শুরু করেছে। আমার সাথে কালকে (বৃহস্পতিবার) কথা হয়েছে। এখনও কিছু সময় আছে।’
বিপিএলের আবিষ্কার মেহেদী মারুফ আজ যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ায়। মাশরাফিদের সঙ্গে সিডনীতে অনুশীলন ক্যাম্পে থাকবেন বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটস ওপেনার মেহেদী মারুফ। সেখান থেকে নাজমুল হোসেন শান্ত, এবাদতদের সাথে ফিরে আসবেন ঢাকায়। তবে মারুফ সম্পর্কে যতোটা না উচ্চাশা, তার চেয়ে মাশরাফির প্রত্যাশা বেশি শান্তকে ঘিরেÑ ‘নাজমুল খুব সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার। ওর মধ্যে অন্যরকম একটা স্পিড আছে, যা কাছ থেকে দেখেছি আমি। তরুণদের মধ্যে যে ক’জন ক্রিকেটার দেখেছি, তার মধ্যে শান্তকেই আমার সবচেয়ে সম্ভাবনাময়ী মনে হয়েছে। মারুফের সাথে আমি কখনও খেলিনি। কিন্তু বিপিএলে ও অনেক ভালো খেলছে। সে হিসেবে ও যাচ্ছে। আশা করছি, নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে পারলে অবশ্যই ও ভালো করবে।’
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ইনজুরিতে পড়ার পর লম্বা স্পেলে বল করা নিষেধ বলে দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচে খেলা থেকে নিয়েছেন নির্বাসন টেস্টেও ফেরার কথা ভাবছেন না মাশরাফি। টেস্টে ফেরার আগে দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে চান মাশরাফিÑ ‘নিউজিল্যান্ড সফরে টেস্টে ফেরার সম্ভাবনা জিরো পারসেন্ট। আমাকে কিছু ফোর ডে ম্যাচ খেলা উচিত। নিজের কাছেও বুঝতে হবে কেমন করছি না করছি। এসব না হওয়া পর্যন্ত আমি বলতে পারি না যে খেলতে চাই। সেটা অন্যায়ও হবে।’
নিউজিল্যান্ড সফরে রেজাল্টের কথা মাথায় না রেখে ইতিবাচক খেলার কথাই ভাবছেন মাশরাফিÑ ‘অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের নাম্বার ওয়ান দল। তাদের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড হারছে আর আমরা নিউজিল্যান্ডের সাথে খেলতে যাচ্ছি; এটা ভেবে লাভ নেই। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের হারানো অনেক কঠিন। অনেক বড় বড় দলও পারে না। তবে আমরা বলছি না আমরাও পারবো না। ভালো খেলতে পারলে সেটা সম্ভব। কিন্তু কাজটা অনেক কঠিন, সেটাও ঠিক। ৩০০-৩৫০ স্কোর থাকবে, করতে হবে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড-সাউথ আফ্রিকা মানে সিমিং কন্ডিশন; এই ধারণা পুরোপুরি ভুল। টেস্টে কিছুটা থাকতে পারে। নিউজিল্যান্ডে বাতাস অ্যাডজাস্ট করতে পারাটা আমাদের জন্য হবে চ্যালেঞ্জ।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চ্যালেঞ্জ

২৪ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ