পুনরায় যমুনা ব্যাংকের এমডি হলেন মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন আহমেদ
যমুনা ব্যাংক লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে আরও ৫ বছরের জন্য পুনরায় নিয়োগ পেয়েছেন মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে পুনঃনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন নতুন তিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। গতকাল রোববার সোনালী ব্যাংকে মো. আফজাল করিম, রূপালী ব্যাংকে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর এবং অগ্রণী ব্যাংকে মো. মুরশেদুল কবীর এমডি ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব নেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, তা যথাসময়ে ফিরিয়ে আনাই হবে নতুন তিন এমডির মূল লক্ষ্য। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা আর ফিরিয়ে না দেয়ায় দিন দিন বাড়ছে খেলাপির অঙ্ক। নানা কৌশলে তা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ আছে, কিন্তু শতভাগ অর্থ ফিরে পাওয়া যাচ্ছে না। বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারিতে আটকে গেছে অর্থ।
ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণ প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা, যার বেশির ভাগই বিতরণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংক। মূলত অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করায় বেড়েছে খেলাপি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হিসাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫৫ হাজার ৪২৮ কোটিরও বেশি, যা বিতরণ করা ঋণের প্রায় ২২ শতাংশ। এ অর্থ আদায়কেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন নিয়োগ পাওয়া নতুন এমডিরা। চলতি বছরের জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের ঋণ ৬৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। জুন শেষে অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ ৬৮ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১০ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। রূপালী ব্যাংকের ঋণ ৩৭ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৬ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এর মূল কারণ সুশাসনের অভাব। অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দেয়ায় পরবর্তী সময়ে সেই অর্থ ফিরে পাওয়া যায় না।
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তদারকি বাড়ানোর দিকে জোর দেয়ার চাপ আছে, কিন্তু তারপরও ঋণের ক্ষেত্রে মানা হয় না নিয়ম-কানুন। এমন অবস্থায় নতুন এমডিদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এছাড়া প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংক। এই খাতে অর্থ বিনিয়োগে কৃচ্ছ্রতায় লঙ্ঘিত হচ্ছে গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা। ব্যক্তি খাতের ব্যাংকগুলো প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাইবার নিরাপত্তা ঠেকাতে এই খাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন। এ খাতে বিনিয়োগসহ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পরিধি বৃদ্ধি, গ্রাম পর্যায়ে ই-ব্যাংকিং চালু, গ্রাহকের অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আরও মনোযোগ দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নবনিযুক্ত এমডিরা।
তিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জানিয়েছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কাজের পরিধি অনেক বড়। তাই চ্যালেঞ্জও বড়। এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো ঠিক করে তা মোকাবিলা করা হবে। তারা জানান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে প্রান্তিক পর্যায়ে আরও সক্রিয় হবে তিন ব্যাংক।
সোনালী ব্যাংকের এমডি মো. আফজাল করিম বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণে জোর দেবে সোনালী ব্যাংক। তার ভাষ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ আছে। সেই সব চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে তার সুরাহা করাই হবে মূল লক্ষ্য। সোনালী ব্যাংকের অবস্থা নিয়ে আফজাল করিম বলেন, এই মুহূর্তে সোনালী ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি নেই। এ ক্ষেত্রে সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। নিবিড়ভাবে তদারকির মাধ্যমে ব্যাংকের সার্বিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকের মূল কাজ আমানত গ্রহণ এবং তা বিনিয়োগ করা। সেই কাজটিই করার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হবে।
অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মুরশেদুল কবীর বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দেবে অগ্রণী ব্যাংক। একটি আদর্শ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে নগর এবং গ্রামের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠা করা হবে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে এই ব্যাংক।
রূপালী ব্যাংকের নতুন এমডি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর দায়িত্ব গ্রহণ করে বলেন, রূপালী ব্যাংক ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প ঋণে পিছিয়ে আছে। যারা এখনও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি, তাদের এই বছরের মধ্যে তা পূরণ করতে হবে। তিনি বলেন, মূলধন ঘাটতি আছে। তা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। বড় বড় ঋণ দেয়া হয়েছে অনেক, এখন এসএমই ঋণ বিতরণে জোর দেবে রূপালী ব্যাংক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।