নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ভোগান্তি চলছে বছরের পর বছর ধরেই। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে পারফরম্যান্স কেবল তলানির দিকেই যাচ্ছে। সবশেষ ১৫ ম্যাচে জয় কেবল দুটি। ‘স্কিল হিটিং’, ‘ফিয়ারলেস ক্রিকেট’, ‘বাংলাদেশি ব্র্যান্ড’, নানা সময়ে আলোচনা হয়েছে এমন অনেক কিছু নিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে এখনও পর্যন্ত কোনো ঘরানা গড়ে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার এশিয়া কাপের আগেও যথারীতি চলছে গবেষণা। সাম্প্রতিক বিবর্ণ পারফরম্যান্সের পর টি-টোয়েন্টির কোচিং থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে রাসেল ডমিঙ্গোকে। ‘সব’ দায়িত্ব দিয়ে টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট করে আনা হয়েছে শ্রীধরন শ্রীরামকে। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব উঠেছে দলের সবচাইতে বড় তারকা সাকিব আল হাসানের কাঁধে। সব মিলিয়ে নতুন এক দল নিয়েই এবারের এশিয়া কাপ মিশনে বাংলাদেশ। দলের সঙ্গে থাকা নির্বাচক হাবিবুল বাশার জানালেন, কীভাবে খেলা উচিত, তা নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে দলের মধ্যে। তা নিয়েই লিখেছেন ইমরান মাহমুদ
দলের মাইন্ডসেট, মাইন্ডরিডার শ্রীরাম
সংযুক্ত আরব আমিরাতে গতকালই শুরু হয়ে গেছে এবারের এশিয়া কাপ। তবে বাংলাদেশের এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মিশন শুরু হবে আগামীকাল থেকে। এদিন সাকিব-মুশফিকদের প্রতিপক্ষ নতুন শক্তি আফগানিস্তান। ঢাকা থেকে বাংলাদেশ দল দুবাইয়ের উড়ান ধরার মাত্র একদিন আগেই দলের সঙ্গে যোগ দেন শ্রীরাম। মূলত তিনিই এখন টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্ব সামলাবেন। পরিকল্পনা করবেন, বাস্তবায়নের পথ দেখাবেন এবং খেলোয়াড়দের সেভাবে তৈরি করবেন।
টুর্নামেন্টের প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় পাননি শ্রীরাম। তার কোচিংয়ের সঙ্গে সেভাবে পরিচিত না বাংলাদেশের কেউই। তাই স্বাভাবিকভাবেই সময় প্রয়োজন, যা নেই খুব একটা। তবে এরই মধ্যে তার সজাগ দৃষ্টি নজরে পড়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের। বাশার বললেন, ‘টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট নতুন এসেছেন। তবে তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানেন। কারণ, তিনি আগে যখন অন্য দলের সঙ্গে কাজ করেছেন, তখন বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা হয়েছিল। দলের শক্তির জায়গা কোনটা, কোন জায়গাটা নিয়ে কাজ করতে হবে এটা জানা, একজন কোচের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটা তিনি খুব ভালো করে জানেন, এটা নিয়েই তিনি কাজ করছেন। ভালো হোম ওয়ার্ক করে এসেছিলেন বাংলাদেশে আসার আগে। যেহেতু অল্প সময় পেয়েছেন, মোটামুটি পরিষ্কার একটা ধারণা নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আশা করছি এর একটা ফল পাব আমরা ম্যাচে।’
টালমাটাল ওপেনিংয়ে নাঈম!
কোচ-নির্বাচকরা তো আর মাঠের খেলা খেলে দিবেন না, তারা কর্তব্য ঠিক করে দেবেন। মাঠে খেলতে হবে সাকিব-মুশফিকদেরই। তবে এই জায়গাটায় সবচাইতে ভঙ্গুর দশা দলের টপঅর্ডার ব্যাটিংয়ে। বিশেষ করে অনেক দিন ধরেই যুৎসই কোনো ওপেনিং জুটি পাচ্ছেনা বাংলাদেশ। তাতে ম্যাচের কঙ্কাল বেড়িয়ে যাচ্ছে শুরুতেই, দলও সেই চাপ উৎরে উঠতে পারছে না। এবারের এশিয়া কাপ যেহেতু আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ‘পরীক্ষাক্ষেত্র’ সেই হিসেবে ওপেনিং নিয়ে তাই চলছে নতুন বীজ বোনা।
আগে থেকেই ছিলেন এনামুল হক বিজয় আর পারভেজ হোসেন ইমন। শেষ মুহূর্তে নুরুল হাসান সোহানের চোটে নাঈম শেখ যোগ দেয়ায় দলে স্বীকৃত ওপেনার এখন তিনজন। তবে প্রায়ই বিসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘প্রয়োজনে সাকিব-মুশফিকও ওপেন করবে’। সেটা কথার কথা ধরে নিয়েই কি-না গতকাল অনুশীলনে যেমন ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে শুরুতেই দায়িত্ব দেয়া হলো নাঈমকে। পরে বাশার জানালেন আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের বার্তা দিয়েই তাকে ওপেনিংয়ের জন্য তৈরি করা হচ্ছে, ‘(এনামুল) বিজয় অবশ্যই খেলবে। তার সঙ্গী কে হবে, আমরা দ্রুতই ঠিক করে ফেলব। আমাদের মাথায় তো আছেই সেট আপ, দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী করি। নাঈমকে ওপেনিংয়ে খেলানোর ভাবনা আছে আমাদের। আমরা সম্ভাবনাটা খোলা রাখছি। এখনও ঠিক করিনি কে ওপেন করবে। তবে অবশ্যই নাঈম একটা অপশন। কারণ, এর আগেও সে টি-টোয়েন্টিতে ওপেন করেছে। আমরা এখন (টি-টোয়েন্টিতে) ভিন্ন ক্রিকেট খেলতে চাচ্ছি। যেটা নিয়ে আমরা অনেক কথা বলেছি। নাঈমকেও সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে। যদি নাঈম খেলে, অবশ্যই সে সেভাবে খেলার চেষ্টা করবে। আমরা আসলে ঠিক করিনি ওপেন কে করবে।’
সুপার ফোরের পিলার মুস্তাফিজ
বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের মূল অস্ত্র মুস্তাফিজুর রহমান। অধিনায়ক সাকিব ছাড়া আর কেবল এই বাঁহাতি পেসারের আছে বিদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের খেলার বড় অভিজ্ঞতা ও সাফল্য। তবে তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তি মেলেনি প্রায়ই। টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ ১৪টি বোলিং ইনিংসে তার উইকেট স্রেফ ৯টি। চলছে পারফরম্যান্সের উঠা-নামা। সবশেষ ১১ টি-টোয়েন্টির চারটিতে তিনি রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি দশের বেশি। সবশেষ জিম্বাবুয়ে সফরে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৪ ওভারে দিয়েছেন ৫০ রান! এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুটি টি-টোয়েন্টিতে তিনি উইকেটশূন্য ছিলেন খরুচে বোলিং করে। অথচ তার কাছে দলের চাওয়া ম্যাচের নিয়ামক হয়ে ওঠা। পাওয়ার প্লেতে এক-দুই ওভার আর শেষের দিকের বোলিংয়ে তিনিই দলের সবচেয়ে বড় ভরসা। অনেক সময় তার ওভারগুলোই গড়ে দেয় পার্থক্য।
এবার এশিয়া কাপে বাঁহাতি এই পেসারকে সেরা চেহারায় দেখতে চান জাতীয় নির্বাচক। বাশারে মতে, নইলে যে গ্রুপ পর্বের বৈতরণী পার করাই কঠিন হবে দলের জন্য, ‘মুস্তাফিজ অবশ্যই আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন বোলার। ওর পারফরম্যান্স দলের জয়-পরাজয়ে অনেকখানি প্রভাব ফেলে। ওকে ভালো ফর্মে, সেরা ফর্মে পাওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে কিন্তু মুস্তাফিজ অনেক ভালো ম্যাচ খেলেছে আমাদের জন্য। অনেক ভালো বোলিং করেছে। সব সময় তো আর ভালো পারফরম্যান্স হয় না, ওরও বাজে দিন গেছে। যেখানে আমরা ভুগেছি। তবে এটা হতেই পারে। আমি আশা করছি যে, এই টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই আমরা মুস্তাফিজের সেরাটা পাব। যেটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে প্রথম রাউন্ড পার হতে।’
মাথাব্যাথা মিসফিল্ড আর স্পিনভীতি
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতায় বড় দায় ফিল্ডিংয়ের দৃষ্টিকটু সব ভুলত্রুটির। এশিয়া কাপ মিশন শুরুর আগে বাশারও মেনে নিলেন, ফিল্ডিংয়ে এমন ভুল নিয়ে ম্যাচ জেতা কঠিন। সেই সাথে প্রতিপক্ষ দলের লেগ স্পিনারদের নিয়েও উদ্বেগের কথা জানালেও শুনিয়েছেন আশার বাণীও, ‘ফিল্ডিং উদ্বেগের জায়গা, সন্দেহ নেই। আমরা গত কিছু ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ফেলেছি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মিস ফিল্ডিং করেছি। এসব টুর্নামেন্টে জিততে হলে ফিল্ডিং খুব ভালো করতে হবে। ব্যাটিং বোলিংয়ে মাঝেমাঝে খারাপ দিন যাবে, কিন্তু ফিল্ডিং সবসময় ভালো থাকতে হবে। আমি মনে করি আমাদের দলে ভালো ফিল্ডার আছে, তারাও অনেক সময় ভুল করে। এখানে এসব ভুলের সুযোগ নেই, থাকা উচিৎও না। অনুশীলন সবসময়ই করা হয়, বাড়তি সময় দেওয়া হয়। আশা করছি এসব ম্যাচে মিস ফিল্ডিং কম হবে।’
‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের দুই প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা আর আফগানিস্তান দলে আছেন বিশ্বমানের স্পিনাররা। রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার মত স্পিনারদের বিপক্ষে বাংলাদেশ বরাবরই নাজুক। তবে নাজুক দশা কাটাতে চেষ্টারও কমতি নেই। বাংলাদেশ থেকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রিশাদ হোসেনকে। নেটে তার সাথে বল ঘুরাচ্ছেন আরও দুই ভারতীয় স্পিনার। তাই বাশারের আশা, এই স্পিনাররা বাংলাদেশের হুমকি হয়ে উঠবেন না, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। আপনারা দেখেছেন নেটে কিছু স্পিনারও নিয়ে এসেছি। তারা বিশ্বমানের স্পিনার, সব দলের বিপক্ষেই ভালো করে থাকে। ম্যাচ জিততে হলে তো তাদের বিপক্ষে ভালো করতে হবে, রান করতে হবে। পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মাঠে বাস্তবায়ন করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটাই পার্থক্য করে দিবে। এমন নয় যে তাদের বিরুদ্ধে কেউ রান করেনি বা রান করা যাবে না। তারা সবাই ভালো বোলার, কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের বিরুদ্ধে ভালো করতে হবে।’
তবুও নির্ভার খেলার মন্ত্র
এশিয়া কাপের প্রস্তুতি পর্বে দল মাঠে পাচ্ছে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুসকে। এদিন অনুশীলনে ছিলেন সাবেক এই পেসার। টুর্নামেন্ট চলার সময় দলকে উৎসাহ দিতে থাকবেন বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান। তাদের উপস্থিতি উল্টো দলের জন্য চাপ হয়ে যাবে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে। সাবেক অধিনায়ক বাশার উড়িয়ে দিলেন তেমন শঙ্কা, ‘খেলোয়াড়রা যেন খোলা মনে খেলতে পারে। দিন শেষে ব্যাপারটা নির্ভর করে খেলোয়াড়দের উপর। খেলোয়াড়রা কোনো বিষয় নিয়ে ‘ওভার থিংকিং’ যেন না করে থাকে। সবারই কিন্তু সুনির্দিষ্ট ভূমিকা আছে। অনেক কিছু যে করা হয়, তা নয়। যে পরিকল্পনা করা হয়, সেটা বাস্তবায়ন করা, আসলে কী করা উচিত, সেটাই খেলোয়াড়দের বলা হয়। খেলোয়াড়দের সব সময় নির্ভার রাখা হয়। তারা যেন স্বচ্ছন্দে খেলতে পারে।’
দেখা যাক এই পরীক্ষা-নীরিক্ষার ‘শিক্ষা সফর’ থেকে কি শিখতে পারে নতুন বাংলাদেশ!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।