পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জাতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন উৎযাপন করছে। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বের মূল্যায়নে এটি এক মাহেন্দ্রক্ষণ। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় কোনো রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী সর্বজনগ্রাহ্য, দোষ-ত্রæটি বা সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকতে পারেন না। সমকালে যেমন তিনি ইতি-নেতি নানা বিচারের মানদন্ডে আলোচিত-সমালোচিত হন, তেমনি জাতির সুদীর্ঘ ইতিহাসও তাঁকে তাঁর প্রাপ্য স্থান দিতে কসুর করেনা। একজন সফল নেতা রাজনীতি নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের হৃদয় থেকে ইতিহাসের পাতায় সমুজ্জ্বলভাবে স্থান করে নিতে পারেন। গত বছর বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করেছে। জাতির পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে ৪০ বছর ধরে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দানকারী বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচন যেমনই হোক, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার পালাবদল একটি সাধারণ ঘটনা। দেশের ইতিহাসে পরপর তিনবার নিজ দলের নেতৃত্বে ক্ষমতা ধরে রেখে এখানেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘতম সময় ধরে সফলভাবে প্রধানমন্ত্রীত্বের পদ অলঙ্কৃত করার গৌরবময় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তিনি নাম কা ওয়াস্তে প্রধানমন্ত্রীত্বের পদ নিয়ে বসে থাকেননি। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ তৃতীয় বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অগ্রগতির রোল মডেল রূপে আবির্ভুত হয়েছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে গত দেড়যুগ ধরে তিনি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এ সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে, তার সুযোগ্য নির্দেশনায় খাদ্য উৎপাদনে এক প্রকার বিপ্লব সাধিত হয়েছে। কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় অনন্য দৃষ্টান্তের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার হিসেবেও তাঁর নাম ইতিহাসে অত্যুজ্জ্বল হয়ে দেদীপ্যমান থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
চারদশক ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থেকে এ সময়ে স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক জোটের শীর্ষনেতা হিসেবে তিনি যেমন জননেত্রী হিসেবে নিজের স্থান করে নেয়ার মধ্য দিয়েই দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সমুজ্জ্বল অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। একজন রাজনৈতিক নেতার জীবনে এর চেয়ে বড় সাফল্য আর নেই। দেশপ্রেমিক জনগণের কাছে শেখ হাসিনার সবচে’ গৌরবজনক পরিচয় হচ্ছে, তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। এই পরিচয়ে গৌরবান্বিত হওয়ার সৌভাগ্য একমাত্র শেখ হাসিনার। দীর্ঘ দেড়যুগ ধরে ক্ষমতার হাল ধরে অর্থনৈতিকভাবে ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি নানা ক্ষেত্রে অনন্য ভ’মিকা রেখে আন্তর্জাতিক মহলে নিজের জন্য ও জাতির জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের দেড় দশকের মাথায় ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে তিনি পার্বত্য শান্তিচুক্তির মাধ্যমে দেশের পার্বত্যাঞ্চলে শান্তির সুবাতাস ও সম্ভাবনাময় জনপদে রূপান্তরিত করেছেন। এ অবদানের জন্য ইউনেস্কো তাঁকে ‘হুপে বোয়ানি’ শান্তি পুরষ্কারে ভ‚ষিত করে। সেই মেয়াদে ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি তাঁকে সম্মানজনক সেরেস মেডেলে ভূষিত করে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রীসহ দুইবার ‘সাউথ-সাউথ এওয়ার্ড’, এমডিজি এওয়ার্ড, এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরষ্কার, চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ সহ অসংখ্য পুরষ্কার ও সম্মাননা তার ডায়নামিক নেতৃত্বেরই উদাহরণ। একটি জটিল বিশ্ববাস্তবতায় পরস্পর বিরোধী আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরাশক্তি সমুহের সাথে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ধরে রাখার মধ্য দিয়ে ক‚টনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচল দৃঢ়তার সবচেয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, জাইকার ঋণ ও বিনিয়োগ প্রত্যাহার এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মত প্রায় হাজার কোটি ডলারের বিশাল অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে সাফল্য। আমরা আগেই বলেছি, একজন রাজনৈতিক নেতার সব কর্মকান্ড নির্ভুল ও সর্বজন্যগ্রাহ্য হওয়া সম্ভব নয়। কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যবদল ও উন্নয়নের সূচকগুলো নিয়ে মতভেদ বা মতান্তর থাকবেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও প্রধানমন্ত্রীত্বের কাল এখনো শেষ হয়ে যায়নি। অনেক সাফল্যের সাথে সাথে কিছু অপূর্ণতাও থাকে। বাংলাদেশ আজ এক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে আছে। দেশের জন্য এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, স্বচ্ছ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জনপ্রত্যাশা পুরণ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন, বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ড, গুম-খুন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো এখন আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে উঠেছে। দেশের সাধারণ মানুষ এখন জ্বলানি-বিদ্যুৎ ও মূল্যস্ফীতির সংকটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণের সাথে দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনের প্রত্যাশাগুলো এখন বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশীদারদের শর্তের বেড়াজাল তৈরীতে উৎসাহিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই আহবানর জবাবে, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হ্যাস বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রতিবন্ধক হিসেবে গণতন্ত্রহীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচারহীনতার প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। রাষ্ট্রদূতের এই প্রতিক্রিয়া খুব সাধারন ঘটনা নয়। এ নিয়ে নতুন ভাবনার অবকাশ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে যতটুক অর্জন, এসব অভিযোগ ও বাস্তবতায় তা যেন ¤øান হয়ে না যায়, সে প্রত্যাশা আমাদের। প্রধানমন্ত্রীর ৭৬ তম জন্মদিন যতটুকু উজ্জ্বল ও প্রাচুর্যময়, আগামী জন্মদিনগুলো যেন জাতির প্রত্যাশিত আরো অর্জনের মধ্য দিয়ে আরো উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠে। দেশে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন, গুম-খুন ও বিচার বহিভর্’ত হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির ইতিহাসে গৌরবজনক ও স্বর্ণোজ্জ্বল আসনে অধিষ্ঠিত হোন। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সেই সুযোগ তিনি কাজে কাজে লাগাবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। ক্ষমতার মেয়াদ শেষে তিনি জাতিকে কোথায় রেখে যাচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করেই শেখ হাসিনা ইতিহাসে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।