Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পূর্বাচলে পানি সরবরাহ করবে রাজউক

আজ রমনা পার্কসহ ১০টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় পানির সরবরাহ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার তিনি ভার্চুয়ালি এর উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে সংস্থাটির কুড়িল-পূর্বাচল লিঙ্ক রোডের উভয় পাশে ১০০ ফুট খাল খনন ও উন্নয়ন প্রকল্প এবং তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদফতরের নয়টি প্রকল্প একই দিন প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব প্রকল্প উদ্বোধন করবেন সেগুলো হচ্ছে, রাজউকের কুড়িল-পূর্বাচল লিঙ্ক রোডের উভয় পাশে ১০০ ফুট খাল খনন ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১২.৫০ কিমি খাল, ১২ কিমি কুড়িল-পূর্বাচল লিঙ্ক রোড, পাঁচটি অ্যাটগ্রেড ইন্টারসেকশন, ছয়টি ব্রিজ, নয়টি আর্চ ব্রিজ, দুটি আন্ডারপাস, ছয়টি ফুটওভার ব্রিজ, ২ কিমি জিআরপি পাইপলাইন, দুটি ¯øুইস গেট ও পাম্প হাউস। একই সঙ্গে পূর্বাচল পানি সরবরাহ প্রকল্প (প্রথম ফেজ) ও পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্রগতি উচ্চবিদ্যালয় ভবন, পলখান উচ্চবিদ্যালয় এবং পূর্বাচল আদর্শ কলেজ ভবন নির্মাণের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন,রাজধানীর রমনা পার্কের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজসহ ১০টি প্রকল্পের কাজ উদ্ধোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রমনা পার্কের উন্নয়ন কর্মকাÐ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। রমনা পার্কে বেড়াতে আসা জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পার্কে ফেরিওয়ালা প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে।
এ ছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদফতরের নয়টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। সেগুলো হচ্ছে, রাজধানীর আজিমপুরে বিচারকদের জন্য ৯০টি ফ্ল্যাটবিশিষ্ট বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ, ঢাকার তেজগাঁওয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (ছয়টি ১৩ তলা ভবনে ২৮৮টি ফ্ল্যাট), মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ, নোয়াখালী সদরে অফিসার্স কোয়ার্টার ভবন নির্মাণ, ঢাকার রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রমনা লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার লাইব্রেরি ভবন, এনেক্স ভবন ও অডিটোরিয়াম নবায়নসহ আনুষঙ্গিক কাজ, মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ১ হাজার ৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট (স্বপ্ননগর-১) নির্মাণ, মিরপুর ১৫ নম্বর সেকশনে ১৪ তলাবিশিষ্ট ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট আয়তনের ১০০ ফ্ল্যাট নির্মাণ; সিলেটের সুনামগঞ্জে সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা ইনকিলাবকে বলেন, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে চারটি ফেজের মাধ্যমে ১৫টি গভীর নলক‚পের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হবে। এর মধ্যে ফেজ-১-এর কাজ শেষ হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। ইতোমধ্যে তিনটি টিউবওয়েলের কাজ শেষ হয়েছে, যার মধ্যে একটি টিউবওয়েল দিয়ে ফেজ-১-এ পানি সরবরাহ করা হবে। ২০৩৫ সাল পর্যন্ত গভীর নলক‚প থেকে পানি সরবরাহ করা হবে। পরে সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে পূর্বাচলে পানি সরবরাহ করা হবে। তবে রাজউকের লাইনের পানি সরাসরি খেতে পারবেন নাগরিকরা। পুরো লাইনের পানির নিরাপদ থাকবে। পূর্বাচলে আবাসিক স্থাপনার জন্য ১ হাজার লিটার ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বাণিজ্যিক স্থাপনার পানির দাম নির্ধারণ করা হয়নি।
জানা গেছে, রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহরে পানি সরবরাহ করবে না ঢাকা ওয়াসা। ফলে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পানির সংস্থান করতে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫টি গভীর নলক‚প বসিয়ে পানির ব্যবস্থা করা হবে। এসব নলক‚পের গভীরতা হবে ৩০০ মিটার করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে চারটি ধাপে। প্রকল্পের প্রথম ধাপে দুটি নলক‚পের মাধ্যমে চারটি সেক্টরের পানি সরবরাহ করা হবে। সেক্টরগুলো হচ্ছে ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর। এতে প্রায় ৩ হাজার প্লটমালিক পানির আওতায় আসবেন। প্রকল্পের প্রথম ধাপ অর্থাৎ ফেজ-১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে পাঁচটি গভীর নলক‚পের মাধ্যমে আরও ১০টি সেক্টর পানির আওতায় আসবে। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে চারটি করে নলক‚প বসানোর মাধ্যমে বাকি অংশগুলোয় পানি সরবরাহ করা হবে। নলক‚পের মাধ্যমে পানির সংস্থান করা হবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। পরে ঢাকা ওয়াসার করিডর ব্যবহার করে মেঘনা থেকে পানি আনার পরিকল্পনা আছে। পানি শোধন করার জন্য ১২ একর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ২০২১ থেকে ২০২৪। এ প্রকল্পের আওতায় ২০৩৫ সাল পর্যন্ত রাজউক রক্ষণাবেক্ষণ করবে। প্রকল্পে মোট ব্যয় ৫৯২ কোটি টাকা, যার মধ্যে রাজউক ব্যয় করবে প্রায় ৩০০ কোটি। বাকি টাকা প্রাইভেট পার্টনারশিপ বিনিয়োগ করবে। পানি সরবরাহে গ্রাহক পর্যায়ে পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। পূর্বাচলে আবাসিক এলাকায় ইউনিটপ্রতি পানির দাম ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বাণিজ্যিক স্থাপনা না থাকার কারণে আপাতত নির্ধারণ করা হয়নি। এ বিষয়ে পূর্বাচল পানি সরবরাহ প্রকল্প পরিচালক মো. বদিউল আলম ইনকিলাবকে বলেন, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্রথম ফেজের কাজ শেষ। প্রথম ফেজে রাস্তাবরাবর ৪০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর ১, ২, ৩ ও ৪ সেক্টরে গ্রাহকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পানির সংযোগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া পূর্বাচলে আবাসন বাড়লে পানি সরবরাহের জন্য ভূমি উপরিস্থিত পানি ব্যবহার করা হবে। তবে কবেনাগাদ হবে সেটা বলা কঠিন। কিছুদিন সময় লাগবে।
রাজধানীর রমনা পার্কের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ গত ২০১৮ সালে রমনা পার্কের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করে গণপূর্ত বিভাগ। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। তবে এক কোটি ২০ লাখ টাকা সরকারি ফান্ডে ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে গণপূর্ত অধিদফতর থেকে জানা গেছে। প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার সময় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। রমনা পার্কে পুরাতন রাস্তাগুলো সংস্কার, একটি কালভার্ট, পার্কের ভেতরে দু’টি এলইডি স্ক্রিন স্থাপন করা হয়েছে। একটি এলইডি স্ক্রিন মৎস্য ভবন গেট দিয়ে পার্কে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে। হেয়ার রোডের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধার পার্শ্ববর্তী ভিআইপি গেট হয়ে প্রবেশ করলে চোখে পড়ে অপর একটি এলইডি স্ক্রিন। এলইডি স্ক্রিন দু’টিতে রমনা পার্ক এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা তথ্য প্রচার করা হয়ে থাকে। উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে রমনা লেকের পাশে কাঠের ওয়াকওয়ে, মৎস্য ভবন গেট থেকে হোটেল শেরাটনের পেছনের গেট পর্যন্ত সড়কটি পিচ ঢালা করা হয়েছে। রমনা পার্কের ভেতরে ১২০০ লাইট এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। রমনা চাইনিজ রেস্তোরাঁ ভেঙ্গে সংস্কার করে কফি কর্নার নির্মাণ করা হয়েছে। শিশু কর্নারে নতুন সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পার্কে চারটি টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। রমনা পার্কের এসব উন্নয়ন কাজে বাজেট রাখা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। তবে এই বাজেটের চেয়ে কমেই কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। কাজ শেষে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেখ হাসিনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ