Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদ্যুৎ চাহিদা শতভাগ পূরণের লক্ষ্য

| প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নকে একটি অগ্রাধিকার সেক্টর হিসেবে গণ্য করে এ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ভিশন ২০২১’এর আওতায় বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে যে সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তা’ নিয়ে অনেক সমালোচনা ও লুটপাটের অভিযোগ থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের সাফল্য অকিঞ্চিৎকর নয়। সম্প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সাফল্য সেলিব্রেট করা হয়েছে। আর চলমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ উদযাপনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে গত বুধবার রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সকল ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ২০২১ সালের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে বলে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি লোডশেডিং পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত নাজুক। তবে সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার ভিত্তিক খাত হিসেবে নানা ধরনের বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করলেও এ খাতে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এখনো দৃশ্যমান হয়নি। বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি ও কয়েকগুণ বেশী মূল্যে বেসরকারী রেন্টাল ও কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনলেও পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ওভারহোলিং ও সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সাফল্য এখনো নাগালের বাইরে।
জরুরী চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কুইকরেন্টাল বা রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। তবে বৃহদাকৃতির নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে পুরনো রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামত, সক্ষমতাবৃদ্ধির উদ্যোগই ছিল সঙ্গত। রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন খরচের তুলনায় ৮-১০ গুণ বেশী দামে বেসরকারী রেন্টাল খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনার ভার জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়ার বাস্তবতা গ্রহণযোগ্য নয়। এর ফলে বার বার বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে দেশের সাধারণ মানুষের উপর বাড়তি বোঝা চাপানো হচ্ছে। বর্তমান সরকার দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পরও রেন্টালকুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সাথে সরকারের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি বিদ্যুৎ খাতে টেকসই উন্নয়ন না হওয়ার চিত্রই ফুটে ওঠে। তবে অনেক দেরিতে হলেও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে তা’ টেকসই সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। বিশেষত: বড় আকারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে অনেক বেশী দাম দিয়ে রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার উদ্যোগ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বড় ধরনের প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। একইভাবে আমদানি নির্ভর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্প গ্রহণের আগে নিজস্ব উৎস থেকে কয়লা আহরণের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উপর জোর দেয়া আবশ্যক। উচ্চসুদে বৈদেশিক ঋণে লক্ষকোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েও নানা ধরনের বিতর্ক রয়েছে। পক্ষান্তরে গ্রীন এনার্জি বা পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগও খুব অপ্রতুল। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে শতকরা ৫ ভাগ রিনিউয়্যাবল এনার্জি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও সেই ষাটের দশকে প্রতিষ্ঠিত কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়া গত অর্ধ শত বছরে এ খাতে তেমন কোন অগ্রগতি নেই। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে লাখ লাখ সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপিত হলেও এ খাতে এ যাবৎ উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ১০০ মেগাওয়াটের কম। অথচ সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে কয়েক হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত। তবে দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ মেগা বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ধীরগতি ও অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি কাক্সিক্ষত নয়। বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে সুন্দরবনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত। সেই সাথে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি একটি সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হলেও বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে এটি কোন স্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য সমাধান নয়। বিদ্যুৎখাতে ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ বিকল্প পরিহার করে যত দ্রুত সম্ভব সুলভ ও স্থায়ী উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশ্বে যখন ফসিল জ¦ালানির মূল্য কমে অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে, তখন আমাদের দেশে এড-হক ভিত্তিক বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে বার বার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। মূল্য না বাড়িয়ে দুর্নীতি ও সিস্টেম লস কমিয়ে লোকসান কমানোর সম্ভাবনাকে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

২০ জুন, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন