পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে নতুন সময়সূচি অনুযায়ী সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস এবং ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বদলে গেছে প্রশাসনের প্রাণ কেন্দ্র সচিবালয়ের চিরচেনা রূপ। এত দিন সকাল ৯টায় অফিস শুরু হতো। কিন্তু নতুন সময়সূচি অনুযায়ী গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে অফিস শুরু হয়। এ কারণে সকাল ৮টার আগে থেকেই সচিবালয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদচারণ শুরু হয়। সকালেই সচিবালয়ের ফটকের রাস্তার সামনে গাড়ির সারি সারি দেখা যায়। তবে সকালে একসঙ্গে সরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। অফিসে পৌঁছিতে দুর্ভোগে পড়েন অনেক কর্মজীবী মানুষ। তবে অনেকই শিক্ষা প্রতিষ্টানের সময় সূচি পরির্বতনে দাবি জানিয়েছেন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের দপ্তরে এসেছেন। তার অফিসের কর্মকর্তারা জানান, তিনি সম্মেলনকক্ষে সভা করছেন। সেখান থেকে তথ্য অধিদপ্তরে গেলে এক কর্মকর্তা জানালেন, তিনি রাস্তায় যানজটে পড়েছিলেন। সে জন্য পৌঁছতে সামান্য দেরি হয়েছে। আবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব অফিস ত্যাগ করেছেন বিকাল সাড়ে ৫টার পরে। বুধবার সকালে সচিবালয়ে নতুন সময়সূচির প্রথমদিনে মন্ত্রী সচিব থেকে শুরু করে কর্মকর্তা কর্মচারীরা আগে আগে অফিসে হাজির হন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটি এখনকার মতো শুক্র ও শনিবারই থাকবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সময়সূচি অনুযায়ী অফিস চলবে। গত সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ব্যাংকের সময়সূচিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আজ থেকে দেশের সব ব্যাংকের সময়সূচি সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা। তবে লেনদেন-পরবর্তী আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজ করে বিকেল পাঁচটার মধ্যে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস ছাড়বেন।
চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। এসব পদক্ষেপের সুফলও মিলছে খানিক। এরই অংশ হিসেবে কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এ ব্যবস্থা সাময়িক বলে সরকারি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। একই ধারায় সব সময় পৃথিবী চলে না। মহামারির জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু আমাদের মোকাবিলা করতে হলো। মানুষের জীবন-মানের পরিবর্তন এলো। সামনে হয়তো আরও অনেক কিছুই অপেক্ষা করছে। ভালো সময় যাচ্ছে না, তা অন্তত বলতেই পারি বলে জানিয়েছেন ইনকিলাবকে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে একটি জরুরি সময় পার করছে বিশ্ব। এমন ভয়াবহ সংকট পৃথিবীতে আর আসেনি। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানির বাজার অস্থির। আমাদের জন্য জ্বালানির সংকট বড় সমস্যা। সরকার এই সংকট নিরসনে উদ্যোগ নিচ্ছে। সাময়িক সমাধানের দিকেও যেতে হচ্ছে। সরকারের কিছু কিছু উদ্যোগ ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে এরই মধ্যে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বড় ক্ষতি হয়েছে করোনার সময়। এই ধকল কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। সাপ্তাহিক ছুটি দু’দিন করায় খুব ক্ষতি হবে বলে মনে করি না। তবে এক্ষেত্রে নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার। ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার বিকল্প ভাবনাও করতে হবে।
সকাল ৮টার দিকে সচিবালয়ের ফটকের সামনে দেখা যায় অনেক গাড়ির সারি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেকই তাড়াহুড়া করে সচিবালয়ে ঢুকেছিলেন। ফটকের সামনে সাংবাদিকেরা এসব দৃশ্য ধারণ করছিলেন। সকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন দপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসেছেন। অনেকে আসছেন। দু-একজনের চেয়ার ফাঁকা দেখা যায়। মন্ত্রণালয়টির এক চাকুরে জানালেন, তার বাসা মিরপুরে। তিনি সরকারি বাসে আসা-যাওয়া করেন। গতকাল সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে বাস ছাড়ে। সচিবালয়ে এসে পৌঁছান সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজমের দপ্তরে গিয়ে জানা গেল, তিনি অফিস করছেন। মনে হচ্ছে না, সময়মতো অফিসে থাকতে পারব।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি দেখা গেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দিকের দপ্তরে এসেছেন।তিনিও সকাল থেকে অফিস করছেন। অবশ্য সকাল সকাল কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর পৌঁছতে কিছুটা দেরি হওয়ার কথা জানা গেছে।
জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারের নেওয়া নতুন সিদ্ধান্তকে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বাগত জানান। তারা বলেন, সাময়িক কষ্ট হলেও দেশের জন্য তা মানতে রাজি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, সকালে অফিস ধরার চিন্তায় ভোর রাতেই ঘুম ভেঙে গেল। যথা সময়ে আসতে পেরেছি। সরকারের ঘোষিত নতুন সময়সূচি আজ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিসের কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ৮টায়। চলবে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। আর ব্যাংক চলবে সকাল ৯টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার দুই দিন বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এদিকে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় সরকারি অফিস গুলো একই ভাবে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ গুলোর মধ্যে রয়েছে, জাতীয় সংসদ ভবন. বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন,স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, নির্বাচন কমিশন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, তথ্য কমিশন, প্রত্নতত্ত ভবন,ডাক ভবন, বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস,
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ)সহ বিভিন্ন অভিসের সরকারি কর্মকর্তারা অফিস করেছেন।
এদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারি ঘোষণা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সময় পুনঃনির্ধারণে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। সভায় সরকারি উল্লিখিত ঘোষণা ও পত্রের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ সময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার থেকেই নতুন এ সময়সূচি কার্যকর হবে। সভায় অফিস সময়সূচি ছাড়াও আগামী মাস থেকে ই-নথি প্রচলনের জন্য প্রাক-প্রস্তুতি, মাস্টার্সে ভর্তির অভিন্ন ক্যালেন্ডারসহ কয়েকটি একাডেমিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। সভায় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার অমিত রায় চৌধুরী, বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, পরিচালক ও প্রভোস্টরা উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের অফিস সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে। তবে প্রথম দিন হওয়ায় অনেকেই যানজনের কবলে পড়েছিলেন।
গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন সময়সূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সরকারি অফিসে জানালার পর্দা খুলে ফেলতে সিদ্ধান্ত হয়। হাইকোর্ট থেকেও এক পর্যবেক্ষণে এমনটিই বলা হয়েছে। সচিবালয়সহ সরকারি সব দপ্তরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা স্বল্প সময় চালু রাখার কথা বলা হয় মন্ত্রিসভা থেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।