Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তেলেঙ্গানার আইএএস অফিসারের মন্তব্যে তোলপাড়

বিলকিস বানোর ধর্ষকদের দায়মুক্তি প্রসঙ্গ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিলকিস বানো মামলায় দোষীদের মুক্তির বিষয়ে বিতর্কের পারদ বেড়েই চলেছে। গুজরাটের বিলকিস বানো ধর্ষণ মামলায় ১১ আসামির মুক্তির বিষয়ে তেলেঙ্গানায় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও-এর সচিব এবং সিনিয়র আইএএঅফিসার স্মিতা সবরওয়ালের একটি টুইট বার্তা। তিনি বিলকিস বানোর একটি বিবৃতি পোস্ট করেছেন যাতে তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুজরাট সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়। এতে কেউ কেউ কথা বলার জন্য তার সাহসিকতার প্রশংসা করলেও অন্যরা তাকে ‘নির্বাচিত’ এবং ‘রাজনীতিবিদ’-এর মতো কথা বলার জন্য তাকে ট্রোল করেছে।

স্মিতা সবরওয়াল টুইটারে বলেন, ‘খবরটা পড়ার সময় বিশ্বাস হচ্ছিল না। একজন মহিলা ও একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে খবরটা পড়ে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমরা আবার ভয় ছাড়া শ্বাস নেওয়ার অধিকার হারাতে চাই না। এ ধরনের ঘটনায় নিজেদের একটি স্বাধীন জাতি বলে মনে করতে পারছি না। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিলকিস বানোর জন্য ন্যায়বিচার দাবি করেন। ২০০১ ব্যাচের আইএএস অফিসার একটি কার্টুন ও পুনঃটুইট করেন যা দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর টুইটকে খোঁচা দিয়েছিল যে, ধর্ষণের দোষীদের মালা পরানো এবং উদযাপনের মিষ্টি বিতরণ ‘ভারতের জন্য বিশ্বব্যাপী লজ্জার বিষয়’। আইএএস অফিসার কথা বলার জন্য অনেকের সমর্থন পেয়েছিলেন।

১৯৮৫ ব্যাচের আইএএস অফিসার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারত সরকারের প্রাক্তন সচিব সঞ্জীব গুপ্ত তার প্রশংসা করেছেন। তিনি টুইট করেছেন, ‘আপনার মনের কথা খোলাখুলি এবং স্পষ্টভাবে বলার জন্য ধন্যবাদ। একজন আমলা তার মতামত প্রকাশ করতে পারেন, কারণ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিগত স্থান। এমনকি চাকরিতে থাকাকালীন, আমি নিয়মের সপক্ষে আমার মনের কথা বলেছিলাম। এখন, আমি বিলকিস বানো কেসে অনেক আইনি সমস্যা উত্থাপন করেছি’। তিনি আরো বলেন, সাভারওয়ালের মন্তব্যে অন্যরা দোষ খুঁজে পেয়েছেন। সমালোচকরা চেয়েছিলেন তিনি হায়দ্রাবাদে সম্প্রতি একটি নাবালিকাকে গণধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তদের মুক্তির বিষয়ে কথা বলুক।
একজন টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, তাকে এআইএমআইএম বিধায়কের ছেলে সম্পর্কে কথা বলতে হবে, যে কিনা হায়দ্রাবাদে একটি মেয়েকে ধর্ষণের জন্য জামিন পেয়েছে। বিজেপি তার এ প্রতিক্রিয়াকে নির্বাচনী বলে অভিহিত করেছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বেশ কয়েকটি ঘটনায় তার নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এমন আরো কয়েকজন ছিলেন যারা চাকরিরত আইএএস অফিসার হওয়া সত্ত্বেও তার মতামত প্রকাশ করার জন্য সবরওয়ালকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আইএএস অফিসার কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিস (আচরণ) বিধি ১৯৬৪-এর ৯ নং বিধিতে উল্লিখিত হিসাবে সরকারী কর্মচারীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা উল্লেখ করেছেন, যার উপধারা (র) বলে যে, কোনো সরকারি কর্মচারী যোগাযোগের কোনো ফর্মে সত্য বা মতামতের কোনো বিবৃতি দিতে পারবেন না। যা কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকারের বর্তমান বা সাম্প্রতিক নীতি বা পদক্ষেপের বিরূপ সমালোচনার প্রভাব ফেলে।
তেলেঙ্গানার শাসক দল টিআরএস ইতোমধ্যেই বিলকিস বানো মামলায় দোষীদের মুক্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তেলেঙ্গানা বিধান পরিষদের সদস্য কালভাকুন্তলা কবিতা শুক্রবার ভারতের প্রধান বিচারপতি এনভি রমনাকে চিঠি লিখেছেন, বিলকিস বানো মামলায় ১১ আসামির মুক্তি অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জন্য তাকে অনুরোধ জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী কে. চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা কবিতা লিখেছেন, ‘ধর্ষণ এর মতো অপরাধ আমাদের সামাজিক বিবেকের একেবারে মূল অংশকে নাড়া দেয় এবং দোষী সাব্যস্ত ধর্ষকদের অবাধে চলাফেরা করতে দেখে প্রতিটি নারীর মেরুদণ্ড এবং প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি নাগরিকের মেরুদণ্ড কেঁপে ওঠে যারা দেশের বিচার ব্যবস্থা এবং আইনের প্রতি তাদের বিশ্বাস রাখে। প্রসঙ্গত, বিলকিস বানো ২১ বছর বয়সী যিনি ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সময় ধর্ষণের শিকার হন এবং তখন তিনি গর্ভবতী ছিলেন। ১৫ আগস্ট গুজরাট সরকার ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত ১১ জনকে মুক্তি দেয়। সূত্র : সিয়াসাত ডেইলি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ