পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিলেট বিভাগে দ্বিধা-বিভক্তিতে চলছে চা শ্রমিকদের টানা আন্দোলন। গত ১১ দিন ধরে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন সারা দেশের চা শ্রমিকরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গতকাল সকাল থেকে বিভাগের সিলেট ও হবিগঞ্জে চা বাগানের সকল শ্রমিক কর্মবিরতি পালন করেন। তবে মৌলভীবাজারে প্রশাসনের অনুরোধে কাজে যোগদান করে শ্রমিকদের একাংশ। তবে গতকাল কাজে যোগদান করেনি সিলেটে কোন চা বাগানের শ্রমিক। সোমবার কাজে একাংশ যোগদান করলেও গতকাল শরিক হন আন্দোলনে। এরমধ্যে গতকাল দুপুরে সিলেটে ২৩ বাগানের পঞ্চায়েত কমিটি বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেন দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার।
এদিকে, মজুরি পূরণের দাবিতে গতকাল বিকেল ৪টায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় স্কুল চৌমহনী রেললাইন অবরোধ করেন চা শ্রমিকরা। এতে বন্ধ হয়ে পড়ে সিলেটের সাথে সারা দেশের রেল যোগাযোগ। এসময় পাহাড়িটা ট্রেন সিলেটের দিকে আসছিলো। অবরোধের কারণে আটকা পড়ে পাহাড়িকা। কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুছ ছালেহ অবরোধের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে ঘটনাস্থলে। রেলপথ অবরোধের কারণে ট্রেন কুলাউড়ায় আটকা পড়েছে বলে জানান সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম।
জানা যায়, আন্দোলনের বিষয়ে দুপুর সোয়া ১২টা থেকে সিলেটের ২৩ বাগানের পঞ্চায়েত কমিটি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে চা শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। গতকাল সকাল থেকে লাক্কাতুড়া, মালিনিছড়া ও তারাপুর বাগানের শ্রমিকরা ৩শ’ টাকা মজুরির দাবি নিয়ে মিছিল করে লাক্কাতুড়া বাগান সংলগ্ন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তায় জড়ো হন। তারা রাস্তার পাশে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে বসে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানান। সিলেটের অন্যান্য বাগানের শ্রমিকরাও কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকেন।
সোমবার লাক্কাতুড়াসহ যেসব বাগানের শ্রমিকদের একাংশ কাজে যোগ দিয়েছিলেন তারা গতকাল সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করেন। বাগানে গিয়ে তারা চা পাতা চয়ন না করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বসে। এক পর্যায়ে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সিলেটের ২৩টি বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির নেতারা লাক্কাতুড়ায় বৈঠকে বসেন। বৈঠকে সব শ্রমিক একযোগে জানান- তারা কাজে যোগ দিবেন না। এসময় তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা।
আন্দোলনরতদের রিতেশ মোদি নামের এক চা শ্রমিক বলেন, আমরা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতেই আন্দোলনে নেমেছিলাম। এখন কিছু সংখ্যক শ্রমিক পিছটান দিলেও আমরা বেশিরভাগ শ্রমিক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। তাই আজকের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। এ বিষয়ে রাজু গোয়ালা বলেন, সকল চা শ্রমিক যেহেতু একটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৩০০ টাকা মজুরি ছাড়া তারা কাজে যোগ দেবেন না, সেহেতু তাদের সঙ্গে একমত আমিও। তারা কাজে যোগ না দিলে তো আর জোর করে কাজ করানো যাবে না।
এদিকে, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অমান্য করে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গতকাল সকাল থেকে ধর্মঘট পালন করেন শ্রমিকেরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলের সব কটি চা বাগানে শ্রমিকেরা বাগানে কাজ করা থেকে বিরত ছিলেন। তবে দুপুরে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভাগীয় শ্রম দফতরের উপপরিচালক নাহিদ আহসান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজীব মাহমুদ কয়েকটি বাগানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা চা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে দেন এবং কাজে ফেরার অনুরোধ জানান। তাদের অনুরোধ ও আশ্বাসে ১২টি বাগানের সব শ্রমিক কাজে যোগ দেন। তবে ৫০টিরও বেশি বাগানে অর্ধেক চা শ্রমিক কাজে যোগ দেন, আর বাকিরা অব্যাহত রাখেন কর্মবিরতি পালন।
কাজে যোগ না দেয়া শ্রমিকদের মধ্যে কয়েকজন বলেন, ‘আমরা এত দিন ধরে আন্দোলন করছি। হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া আমরা কাজে যোগ দেব না। আমাদের শ্রমিকেরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এখন যদি ৩০০ টাকা ঘোষণা দেওয়া হয়, আমরা এখন কাজে যাব।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ‘আমরা রোববার রাতে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে একটা সুন্দর সমাধান করেছিলাম। শ্রমিকেরা প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনতে চাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী কয়েক দিনের ভেতরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা বলে ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শ্রমিকেরা চা বাগানকে ভালোবেসে কাজে ফিরুক। তাদের সব দাবি বিবেচনা করে মানা হবে। গতকাল সকাল থেকে জেলার অনেক চা বাগানে কাজ শুরু হয়েছে। শ্রীমঙ্গলেও চা শ্রমিকেরা কাজ করতে চাচ্ছেন, কিন্তু কিছু দুষ্কৃতকারী তাদের যেতে বাধা দিচ্ছে। শ্রমিকদের উসকাচ্ছে। আমরা সাধারণ শ্রমিকদের কাজে যেতে অনুরোধ করছি, তাদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের।’
অপরদিকে, সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জের বাগানগুলোতেও কাজে যোগ দেননি চা শ্রমিকরা। ৩০০ টাকা মজুরি দেয়ার দাবিতে তারা অনঢ় রয়েছেন। এ অবস্থায় গতকাল বিকালে বাগানগুলোর পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে বৈঠকে বসেন চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। সে বৈঠকেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন চা শ্রমিকরা। ফলে চা শিল্পে সৃষ্ট অচলাবস্থা কাটছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রতিদিন অন্তত ২০ কোটি টাকা হারে ক্ষতি হচ্ছে এ শিল্পে।
হবিগঞ্জে চা-শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলবে : গতকাল জেলার ২৪টি চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে হবিগঞ্জের ২৪টি বাগানের শ্রমিকরা তাদের নিজ নিজ বাগানের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। পরবর্তী কর্মসূচি কিংবা কাজে যোগদানের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতা ও ভ্যালি প্রধানদের নির্দেশনার অপেক্ষায় তারা। ৩০০ টাকা মজুরির দাবি আদায় হলেই কাজে যোগ দেয়ার কথা জানান তারা।
গত সোমবার কয়েকটি বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলেও মঙ্গলবার তারাও আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। সকাল থেকে মালনীছড়া চা বাগানে জড়ো হয়ে আন্দোলনে যোগ দিতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। শ্রমিক নেতারা জানান, মঙ্গলবার সিলেট ভ্যালির শ্রমিক নেতারা বৈঠকে বসবেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নির্ভর করবে বলেও জানান তারা। মালিকরা বলছেন, বেশিরভাগ চা বাগান লোকসানি, তাই সর্বোচ্চ ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা মজুরি দিতে রাজি হয়েছেন তারা।
এদিকে গতকাল সকাল থেকে লাক্কাতুড়া, মালনীছড়া ও তারাপুর বাগানের শ্রমিকরা ৩শ’ টাকা মজুরির দাবি নিয়ে মিছিল করে লাক্কাতুড়া বাগান সংলগ্ন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তায় জড়ো হন। তারা রাস্তার পাশে বিভিন্ন ধরনের প্লে কার্ড নিয়ে বসে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানান। সিলেটের অন্যান্য বাগানের শ্রমিকরাও কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকেন। সোমবার লাক্কাতুড়াসহ যেসব বাগানের শ্রমিকদের একাংশ কাজে যোগ দিয়েছিলেন তারা গতকাল সকাল থেকে রয়েছেন কর্মবিরতিতে।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আজ কাজে যোগ দিবেন চা শ্রমিকরা : এদিকে শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, শ্রীমঙ্গলসহ বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের নিজ নিজ বাগানের সামনে অবস্থান নিয়ে ধর্মঘট পালন করেন। পরবর্তী কর্মসূচি কিংবা কাজে যোগদানের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতা ও ভ্যালি প্রধানদের নির্দেশনার অপেক্ষায় চা শ্রমিকরা। ৩শ’ টাকা মজুরির দাবি আদায় হলেই কাজে যোগ দেয়ার কথা জানান তারা। গত সোমবার কয়েকটি বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলেও মঙ্গলবার তারাও আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। চা শ্রমিকরা নিজেদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ঐক্যবদ্ধ যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন তা এখন বিভক্তির সুর শোনা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আস্থা রেখে স্থানীয় চা শ্রমিক নেতারা আন্দোলন থেকে সরে আসতে চাইলেও কেন্দ্রীয় নেতারা এখন বেঁকে বসেছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারাই একপর্যায়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে চা শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়ার আহবান করেন। এদিকে, স্থানীয় চা শ্রমিক নেতাদের অনেকেই এখন আন্দোলন নিয়ে শঙ্কিত। তারা মনে করছেন, আন্দোলন বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন বা ভ্যালির নেতাদের আন্দোলনে দেখা না যাওয়ায় সাধারণ চা শ্রমিকরা তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। নারী চা শ্রমিক সন্ধ্যা রানী ভৌমিক বলেন, ইউনিয়ন ও ভ্যালির নেতারা আমাদের আন্দোলনে নামিয়ে এখন সটকে গেছেন। আজ ১৫ দিন ধরে কাজ বন্ধ রেখে আমরা আন্দোলন করছি।
গতকাল মঙ্গলবার চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়ার লক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভাগীয় শ্রম দফতরের উপ-পরিচালক মো. নাহিদুল ইসলামসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ বাগানে বাগানে গিয়ে চা শ্রমিকদের প্রধানমন্ত্রী মজুরি বৃদ্ধির আশ^াস দিয়ে কাজে যোগ দেয়ার আহবান জানান। জেলা প্রশাসনের আহবানে চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন।
মাঠ পর্যায়ের একাদিক চা শ্রমিক নেতারা দৈনিক ইনকিলাব’র এই প্রতিবেদককে জানান, বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মজুরি বৃদ্ধির আশ^াসে দেশের প্রায় ৭০% চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দিবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।