Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দাবিতে অনড় চা শ্রমিকরা

কয়েক দফা বৈঠকেও মতৈক্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ সরকারি আমলারা কাজে যোগ দেননি সিলেট ও হবিগঞ্জের শ্রমিকরা : সাধারণ শ্রমিকরা বলছেন নেতারা পকেটে ঢুকে গেছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া চা-বাগানের শ্রমিক জানকি। মিছিলে এসেছেন। তার হাতে ‘আটা রুটির সংগ্রাম, চলছেই চলবে’ লেখা প্ল্যাকার্ড। জানকি জানান, নেতারা পকেটে ঢুকে গেছে আমরা ঢুকব না। আমরা ১২০ টাকা মজুরি মানি না। আমাদের মাঠে নামিয়ে তারা উধাও। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার চাই। আমরা ডাল-ভাত খেয়ে ভালো করে বাঁচতে চাই। গতকাল চা বাগানের মিছিলে এসে মনে কষ্ট নিয়ে কথা গুলো বলছিলেন তিনি।

এদিকে প্রশাসন ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের গত রোববার রাতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আবার ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাধারণ চা-শ্রমিকেরা। গতকাল সকাল থেকে শ্রমিকনেতাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজে ফিরেছিলেন উপজেলার ভাড়াউড়া, ভুরভুরিয়াসহ কয়েকটি চাবাগানের শ্রমিকেরা। কিন্তু অন্যান্য বাগানের শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দেওয়ায় তারাও কাজ বন্ধ করে ধর্মঘটে অংশ নেন।
এছাড়া গতকাল বেলা ১১টায় বিক্ষুদ্ধ চা-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট চা-বাগানে যান বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ। শ্রমিকদের গত রোববার রাতের সভার কথা বোঝাতে ও ধর্মঘট প্রত্যাহার করার কথা বলতে গিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের হাতে লাঞ্ছিত হন তিনি। দুপুর ১২টার দিকে কালীঘাট চা বাগান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ফুলছড়া চাবাগান হয়ে ভাড়াউড়া চাবাগানে এসে জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
এর আগে গত রোবাবার রাত ৯টায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চা শ্রমিকনেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে আগের ১২০ টাকা মজুরিতে কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। দুই পক্ষ যৌথ বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভাগীয় শ্রম দফতর শ্রীমঙ্গলের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দীসহ বিভিন্ন ভ্যালির সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের প্যাডে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে সভার সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে তার সম্মানে চা-শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে গতকাল কাজে যোগ দেবে। আপাতত চলমান মজুরি ১২০ টাকা হারেই শ্রমিকেরা কাজ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে পরবর্তী সময়ে মজুরির বিষয়টি নির্ধারিত হবে। আসন্ন দুর্গাপূজার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হওয়ার জন্য চা-শ্রমিকনেতারা আবেদন করেছেন, যা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জানানো হবে। চা-শ্রমিকের অন্যান্য দাবি লিখিত আকারে জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া হবে। সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। আর বাগানমালিকেরা চা-বাগানের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ধর্মঘটকালীন মজুরি শ্রমিকদের পরিশোধ করবেন।
দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে টানা ৯ দিন ধরে ধর্মঘট পালন করেন শ্রমিকেরা। সরকারি আমলা, সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েক দফায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হলেও বারবার ব্যর্থ হয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছায়নি। ধর্মঘটের নমব দিন গত রোববার সকাল থেকে সিলেট, বড়লেখা, কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গলে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন শ্রমিকেরা। হবিগঞ্জে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন চা-শ্রমিকরা।
সিলেট ব্যুরো জানায়, চা শ্রমিক আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে ‘ফাটল’। নেতৃত্বের মধ্যে বিশ^াস অবিশ^াসের দোলাচালে এ ফাটলে আন্দোলনরত শ্রমিকরা এখন বিভক্ত। গত রোববার রাতে মৌলভীবাজারে প্রশাসনের সাথে চা শ্রমিক ইউনিয়নের বৈঠকে কাজে যোগ দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন সাধারণ শ্রমিকরা। তারা ‘রাতের অন্ধকারের সিদ্ধান্ত’ মানেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলনে অনড় থাকার ঘোষণা দিলেও সিলেটের একটি অংশ দুপুরের যোগ দেন কাজে।
হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার ২৪টি চা বাগানের শ্রমিক এখনও কাজে যোগ দেয়নি। সাধারণ শ্রমিকদের দাবি তারা ৩০০ টাকা মজুরি না পেলে কাজে যোগ দেবেন না। গত ৯ আগস্ট থেকে ৩০০ টাকা মজুরির জন্য আন্দোলন শুরু করে। তা বাস্তবায়ন করেই তারা কাজে যোগদান করবে। এদিকে বেলা আড়াইটায় চান্দপুর চা বাগানে ছুটে যান জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব বিজেন ব্যানার্জীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ সময় জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান চা শ্রমিকদেরকে অনুরোধ করেন কাজে যোগ দিতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চা শ্রমিক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ