Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চা শ্রমিকদের ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

চা শ্রমিকদের ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে আন্দোলন হয়েছে। আমি সেই সময় মালিকদের সঙ্গে বসে আপনাদের দৈনিক মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা নির্ধারণ করে দিয়েছি। আমার মনে হয় সেখানে আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী করতে পেরেছি।
গতকাল চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামে চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন।

চা শ্রমিকদের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু চা শিল্পকে জাতীয়করণ করেননি। বরং নানাভাবে প্রণোদনা দিয়েছেন, যাতে এই শিল্পটা ভালোভাবে গড়ে উঠতে পারে। জাতির পিতা চা শ্রমিকদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেন। তাদের ভোটাধিকারও দেওয়া হয়। চা শিল্পের উন্নতির জন্য বিশেষ ভর্তুকির ব্যবস্থা করেন। বিনামূল্যে বাসভবন, সুপেয় পানি, রেশন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এক সময় চা শ্রমিকদের অন্যভাবে ব্যবহার করা হতো। বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপের ফলে তারা অধিকার ফিরে পায়।
সরকার চা শ্রমিকদের সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, চা শ্রমিকরা আমাদের দেশেরই নাগরিক। কিন্তু এক সময় তাদের নাগরিকত্ব ছিল না। ঘরবাড়ি ছিল না। যেহেতু চা শ্রমিকরা সবসময় নৌকা মার্কায় ভোট দেন, সেহেতু আমরা চেষ্টা করেছি আপনাদের সমস্যাগুলো দূর করতে।

সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আন্দোলন হয়েছে। আমি সেই সময় মালিকদের সঙ্গে বসে আপনাদের দৈনিক মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা নির্ধারণ করি। আমার মনে হয় সেখানে আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী করতে পেরেছি।
চা-শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশরা আপনাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে এসেছিল। তখন আপনাদের কোনও নাগরিক অধিকার ছিল না। কোনও সুযোগ-সুবিধা ছিল না। আজ আপনারা এদেশের নাগরিক। বঙ্গবন্ধু আপনাদের নাগরিকত্ব দিয়েছেন। তার কন্যা হিসেবে আপনাদের প্রতি আমার একটি দায়িত্ব রয়েছে। আমি চেষ্টা করি সবসময় এই দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করতে। মালিকরা যাতে আপনাদের যথাযথভাবে মর্যাদা দেয় ও দেখে সেই উদ্যোগ নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চা শিল্প আমাদের দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। চা বাগান দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি এই চা শিল্প আমাদের অর্থখাতের জন্যও ভীষণ দরকারি। তাই এই চা শিল্প যেন ধ্বংস হয়ে না যায় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য আমি আমার সব চা শ্রমিক ভাইদেরও অনুরোধ জানাবো এই চা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।

ইতোপূর্বে চা-শ্রমিকদের দেওয়া স্বর্ণের চুড়ি উপহার পাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা গণভবনে আমার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় উপহার নিয়ে এসেছিলেন। সেই উপহার এখনও আমি হাতে পরে বসে আছি। আমি কিন্তু ভুলিনি। আমার কাছে এটা হচ্ছে সব থেকে অমূল্য সম্পদ। চা-শ্রমিক ভায়েরা চার আনা আট আনা করে জমিয়ে আমাকে এই উপহার দিয়েছেন। এত বড় সম্মান, এতবড় উপহার আমি আর কখনও পাইনি।
রীতা আর মনির সঙ্গে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রীও :
চা শ্রমিক রীতা পানিকা ও সোনা মনির কথা শুনে আবেগে কেঁদে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনেও কাঁদেন চা শ্রমিকরা। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পাত্রখোলা বাগানের চা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বক্তব্যে চা শ্রমিক রীতা পানিকা প্রথমে চা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানান। তিনি মজুরি বৃদ্ধি করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
এসময় অশ্রুসিক্ত নয়নে রীতা পানিকা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমরা সব সময় আপনার কথা ভেবে এসেছি এবং ভেবে যাব। আমরা জানি আপনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। সেই স্বাধীনতা নিয়ে আমরা বেঁচে আছি। আমরা চাই আপনার বাবার মতো আপনিও কোনোদিন আমাদের কাছ থেকে সরে যাবেন না। আপনি আমাদের কাছে চিরজীবি থাকবেন। আমরা চা শ্রমিকরা যে কষ্টে আছি সেটা আপনি দেখেছেন এজন্য আপনাকে কোটি কোটি ধন্যবাদ। আপনাকে আমাদের কমলগঞ্জ উপজেলায় এক কাপ চায়ের দাওয়াত দিচ্ছি। আপনি আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন। আপনাকে আমরা দেখছি, এটা যে আমাদের জন্য কতো আনন্দের সেটা মুখের ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এসময় রীতা পানিকা কোনো ভুল ক্রটি হলে ক্ষমা চান।

প্রধানমন্ত্রী আবেগে অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, আপনারা ক্ষমা চাইবেন কেন। আপনারা যেটা করেছেন সেটা বাঁচার তাগিদে করেছেন। আমি সেটা বুঝি। এজন্য আগে আমি মালিকদের সঙ্গে বসেছি এখন আপনাদের সঙ্গে বসলাম।
চা শ্রমিক সোনা মনি বলেন, আমি আপনার ওপর খুশি আছি। আগে ১২৯ টাকা পেতাম এখন ১৭০ টাকা পাই মা। আমাদের কোনো অভাব নাই। আপনি সব করে দিয়েছেন। আপনি আমাদের একটা সুবিধা করিয়া দিবেন যাতে পেট ভরিয়া খেতে পারি। এসময় তিনি বাগানের স্কুলগুলো সরকারি করার দাবি জানান।
এসময় মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ, মৌলভীবাজার আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নেছার আহমদ, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধরা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ