চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
॥ তিন ॥
তাই যৌক্তিকভাবেই ইসলাম শান্তি প্রতিষ্ঠা ও এর স্থায়িত্ব বজায় রাখার স্বার্থে সকল ধরনের সন্ত্রাসকে প্রতিরোধে ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নির্র্মূল করার নির্দেশনা দান করে। ইসলাম বলতে প্রথমত ও প্রধানত কুরআন ও রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ বা হাদীসকেই বুঝায়। রাসূল (সা.) বলেছেন: “আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে গেলাম, এই দু‘টি জিনিসকে যতক্ষণ আঁকড়ে ধরে রাখবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না, সে দু‘টি জিনিস হলো আল্লাহর কিতাব তথা কুরআনও তাঁর রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ তথা হাদীস।” তাই সন্ত্রাস প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা বলতে সন্ত্রাস প্রতিরোধে কুরআন ও রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহতে বর্ণিত নির্দেশনাসমূহ বর্ণনা করা উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য যে, সন্ত্রাস প্রতিরোধক আয়াত, হাদীস ও রাসূল (সা.)-এর আদর্শ এত বেশি যে, তার সবগুলো এই স্বল্প পরিসরে উল্লেখ করা অসম্ভব। তাই এ ব্যাপারে ঐ তিন উৎসের মৌলিক নির্দেশনাসমূহ নিম্নে পেশ করার প্রয়াস পাচ্ছি। সন্ত্রাস প্রতিরোধে আল-কুরআনের নির্দেশনা ঃ আল-কুরআনে প্রথমত সাধারণতভাবে সন্ত্রাসের কারণ সৃষ্টি হওয়ার ছিদ্রপথ বন্ধ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
ন্যায়পরায়ণতা ও সদাচরণের নির্দেশ ও অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালঙ্ঘনমূলক কাজ করতে নিষেধ প্রদান করে আল-কুরআনে নির্দেশনা এসেছে যে, “আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালঙ্ঘন; তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।” সন্ত্রাস মূলত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনের ফলেই সৃষ্ট। তাই জীবনের সকল ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন, বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে আল-কুরআনে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আল্লাহ বলেন: “বল, হে কিতাবীগণ! তোমরা তোমাদের দ্বীন সম্বন্ধে অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি কর না; এবং যে সম্প্রদায় ইতঃপূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে, অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে ও সরল পথ হতে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না।” অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তোমরাও আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; কিন্তু সীমালঙ্ঘন কর না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসেন না।” উপরোক্ত প্রথম আয়াতে আহলে কিতাবদের উদ্দেশ্য করে এবং দ্বিতীয় আয়াতে সশস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রের প্রসঙ্গ বর্ণিত হলেও অন্যান্য আয়াত ও হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, সীমালংঘন ও বাড়াবাড়ি মুসলিমদের জন্যও সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ।
পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা নিষিদ্ধ। সন্ত্রাস নিঃসন্দেহে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। তাই সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে বা অন্য কোনভাবে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আল-কুআনে নির্দেশনা এসেছে। আল্লাহ বলেন: “দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তোমরা তাতে বিপর্যয় ঘটাইও না, তাঁকে ভয় ও আশার সাথে ডাকবে। নিশ্চয় আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মপরায়ণদের নিকবর্তী।” এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত মুফাসসির হাফিয ইবনে কাছীর র. বলেন, “শান্তি স্থাপনের পর ভূপৃষ্ঠে বিপর্যয় ও যে সকল কর্মকা- পৃথিবীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তা থেকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। কেননা যখন কাজ-কারবার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যথাযথভাবে চলতে থাকে, তখন যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়, তবে তা হবে বান্দার জন্য বেশী ক্ষতিকর। এজন্য আল্লাহ এরূপ করতে নিষেধ করেছেন।” ইমাম কুরতুবী র. বলেন, স্বল্প-বিস্তর যতটুকুই হোক শান্তি স্থাপনের পর আল্লাহ পৃথিবীতে কম বা বেশি যাই হোক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন।” অনর্থ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হতে নিষেধ করে আল্লাহ বলেন: “আল্লাহ যাহা তোমাকে দিয়েছেন তা দ্বারা আখেরাতের আবাস অনুসন্ধান করো এবং দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলো না; তুমি অনুগ্রহ করো যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেয়ো না, আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালবাসেন না।”
সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হারাম। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: “আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করো না।” আদম সন্তানকে সম্মানিত ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন: “আমি তো আদম-সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি; স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; তাদেরকে উত্তম রিয্ক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।”
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।