Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিখিলের সেরা সুন্দর সৃষ্টি প্রিয় নবী (সা.)

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

প্রিয় নবী সা. কেমন ছিলেন, তা কোরআন হাদীসে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে। এখানে যেমন নবী করীম সা. চরিত্রমাধুরির বর্ণনা পাওয়া যায়, তেমনি পাওয়া যায় তাঁর সুদর্শন চেহারা, দেহাবয়ব শরীফ ও আকৃতি মুবারকের বিশদ বর্ণনা।

রবিউল আওয়ালের পবিত্র অবসরে এসবের বিশুদ্ধ বিবরণ দেওয়া সমীচীন মনে করি। আরবিতে এ সম্পর্কিত বর্ণনার নাম শামায়িল। সুরত। চরিতামৃত মুবারকের নাম সীরত। জীবনাদর্শকে বলা হয় সুন্নাহ বা সুন্নত। হুযুর আকরাম (সা.) এর নাসিকা মোবারক এত নূরানি এবং উজ্জ্বল ছিল যে, কোনো দর্শক ভালোভাবে খেয়াল করে না দেখলে সাধারণত এরকমই দেখতে পেত যে, তাঁর নাসিকা মোবারক উন্নত; কিন্তু আসলে তা অতিরিক্ত উঁচু বা উন্নত ছিল না, বরং নূরের তাজাল্লির ফলে এরকম উঁচু মনে হতো। অধিকন্তু এ দৃশ্যমান উচ্চতার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব, মর্যাদা ও পরম নেকবখতির দ্যুতি পরিস্ফুটিত হতো।

হুযুর আকরাম (সা.) এর মুখ মোবারক সম্পর্কে হযরত জাবির রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে সহীহ মুসলিমে এরূপ বর্ণনা এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশস্ত মুখগহ্বরের অধিকারী ছিলেন। এরকম বর্ণনা শামায়েলে তিরমিযীতে হযরত ইবনে আবি হালা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস শরীফে পাওয়া যায়।

হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশস্ত মুখগহ্হরের অধিকারী ছিলেন বলে তাঁর পবিত্র মুখনিঃসৃত বাণী হতো ভরাট স্বরবিশিষ্ট।

নবী কারীম (সা.) এর পবিত্র মুখ থেকে যে বাণী বের হতো, তা ছিল নেহায়েত সম্পন্ন ও ভরাট বাক্যের সমাহার। তিনি কখনো অস্পষ্ট ও অসম্পূর্ণ শব্দ উচ্চারণ করতেন না। তিনি ছিলেন নিতান্তই স্পষ্টভাষী।

নবী কারীম (সা.) এর বাণী সর্বদাই ঠোঁটের কাছাকাছি থাকত। দ্বিধা-দ্ব›েদ্বর সাথে বিলম্ব করে তিনি কিছু বলতেন না। নবী কারীম (সা.)-এর সামনের দাঁত উজ্জ্বল, শুভ্র ও প্রশস্ত ছিল। হযরত আলী (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা.) এর সামনের দাঁত উজ্জ্বল ও চকচকে ছিল। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে, হুযুর পাক (সা.) এর ওষ্ঠযুগল প্রশস্ত ছিল। যখন তিনি কথোপকথন করতেন, তখন এরকম দেখা যেত, যেন ওষ্ঠযুগলের ফাঁক দিয়ে সামনের দাঁত থেকে নূরের ঝিলিক বেরোচ্ছে।

ইমাম তাবরানী রহ. আওসাত নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন, হুযুর আকরাম (সা.) এর ওষ্ঠদ্বয় এবং মুখগহ্হরের সৌন্দর্য ও আকর্ষণ সমগ্র মানবজাতির চেয়ে বেশি ছিল। এক বর্ণনায় আছে, হুযুর পাক (সা.) এর দন্ত মোবারক পরিমিত বড় ছিল। অর্থাৎ, মহানবী (সা.) এর মুখ সৌন্দর্যের দিক দিয়ে পূর্ণ ও প্রকৃষ্ট ছিল।

রাসূলে আকরাম (সা.) এর মুখের লালা রোগীদের জন্য পূর্ণ শেফা ছিল। হাদীস শরীফে আছে, খায়বারের যুদ্ধের দিন হযরত আলী (রা.)র চোখে যন্ত্রণা হচ্ছিল, তখন হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় মুখের লালা মোবারক তাঁর চোখে লাগিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে হযরত আলী (রা.) সুস্থ হয়ে গেলেন।

অন্য এক ঘটনা। একদা হুযুর (সা.) এর কাছে একটি পানির মশক আনা হলো। তিনি সেখান থেকে এক আঁজলা পানি নিয়ে কুলি করে উক্ত মশকের মধ্যে ফেলে দিলেন। এরপর উক্ত মশকের পানি যখন ক‚পে ফেলা হলো, তখন তার পানি থেকে কস্তুরির সুঘ্রাণ ছড়াতে লাগল।

একদা হযরত আনাস (রা.)র ক‚পের পানিতে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পবিত্র মুখের লালা মোবারক ফেলে দিলেন। এরপর দেখা গেল, মদীনা শরীফের সমস্ত ক‚পের পানির চেয়ে উক্ত ক‚পের পানিই অধিক সুপেয় আর সুস্বাদু হয়ে উঠেছিল।

একবার হুযুর (সা.) এর কাছে কতিপয় দুগ্ধপোষ্য শিশুকে আনা হলো। তিনি স্বীয় মুখের লালা মোবারক তাদের মুখে দিলেন। অতঃপর শিশুগুলো এতই পরিতৃপ্ত হলো যে, সারাদিন তারা আর দুধই পান করল না।

ইমাম হাসান (রা.) একদা অত্যন্ত পিপাসার্ত হয়ে পড়লেন। হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় জিহবা মোবারক তাঁর মুখের ভেতর পুরে দিলেন। প্রিয় দৌহিত্র নানাজানের জিহবা মোবারক চুষতে লাগলেন। সমস্ত দিন তিনি আর ক্ষুৎপিপাসা অনুভব করলেন না। এ ধরনের অসংখ্য মোজেযা রয়েছে।



 

Show all comments
  • হাসান সোহাগ ১৩ অক্টোবর, ২০২১, ২:৫২ এএম says : 0
    প্রিয় নবী (সা.) ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি। মহান আল্লাহ তাঁকে অপরূপ সৌন্দর্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। দুনিয়ার সব মুসলমান স্বপ্ন দেখে যদি সবকিছুর বিনিময়ে হলেও নবী (সা.)-কে জীবনে এক নজর দেখতে পেতাম!
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুর রহমান ১৩ অক্টোবর, ২০২১, ২:৫৩ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ যেন আমাদের স্বপ্নে হলেও নবী (সা.)-কে জীবনে একবার দেখার সৌভাগ্য নসিব করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • নিয়ামুল ১৩ অক্টোবর, ২০২১, ২:৫৪ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের সবাইকে শেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীনে অটল থাকার তৌফিক দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • জব্বার ১৩ অক্টোবর, ২০২১, ২:৫৬ এএম says : 0
    মহান রাব্বুল আলামিন আসমান, জমিন, গ্রহ-নক্ষত্রসহ আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন, সেই মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর প্রিয় বন্ধুকে কিভাবে সৃষ্টি করেছেন, তিনি দেখতে কেমন ছিলেন, প্রতিটি মুমিনেরই তা জানতে ইচ্ছা করে।
    Total Reply(0) Reply
  • কে এম আরিফুল ইসলাম ১৩ অক্টোবর, ২০২১, ২:৫৬ এএম says : 0
    প্রিয় নবী (সা.) ছিলেন অত্যন্ত সুন্দর মানুষ। যাঁর সৌন্দর্যের কাছে আকাশের চাঁদও হার মানত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাসূল (সা.)

১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন