Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কুড়িগ্রামে আকস্মিক বন্যা

ভারতের পাহাড়ি ঢলে কৃষকের সর্বনাশ শেরপুরে উন্নতি হচ্ছে বন্যা : ভেসে উঠছে ক্ষয়-ক্ষতির চিত্র : ব্রীজের কারণে চরম দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

শফিকুল ইসলাম শফিক বেবু, কুড়িগ্রাম/ মো. মেরাজ উদ্দিন, শেরপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

কুড়িগ্রামে টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার রৌমারী উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলা সদর, যাদুরচর, শৌলমারী, দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ৪৯ গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ১০৭ হেক্টর জমির ধান, পাট ও শাকসবজি। এছাড়া রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা ও ভেলা। রৌমারী উপজেলার ২১টি বিদ্যালয়ে পানি ওঠায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান।

কাশিয়াবাড়ি গ্রামের কৃষক আকবর আলী জানান, এবার আড়াই বিঘা জমিতে ধান চাষ করা হয়। এর মধ্যে দেড় বিঘা জমির ধান কাটতে পারলেও ভারত থেকে হঠাৎ পাহাড়ি ঢল এসে এক বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। এতে ২১ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয়ে ও বাড়ির চারপাশে পানি উঠায় নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছে না তারা। এতে পড়াশুনার খুব ক্ষতি হচ্ছে।

পুরাতন যাদুরচর এলাকার কৃষক হাজী আব্দুস সামাদ জানান, হঠাৎ পাহাড়ি ঢল নামায় এলাকার সব রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এখন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নাই। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না।

লালকুড়া গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ জানান, ‘হঠাৎ বন্যার পানি আইসা জমিতে রাখা সব খড় ভাসাইয়া নিয়া গেছে। এখন গরুরে খাওয়ামো কী, এ চিন্তায় আছি।’ যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান , বন্যার পানিতে ইউনিয়নের ২০০ বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। এছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১২ গ্রামের ১৭ হাজার মানুষ। ভেলা আর নৌকায় পারপার হতে হচ্ছে। গত শনিবার ইউএনওকে সরেজমিন বন্যাকবলিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখানো হয়েছে এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দ্রুত ত্রাণ সহায়তার জন্য অনুরোধ করা হয়।

রৌমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলার ২১টি বিদ্যালয় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ১৩টি বিদ্যালয় যাদুরচর ইউনিয়নের। পানিবন্দি এলাকার শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে না এলেও কোনো সমস্যা নেই। রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশারাফুল আলম রাসেল ইনকিলাবকে জানান, বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। বন্যার্ত পরিবারগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। আপাতত ফান্ডে যা আছে তা থেকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তাগুলো মেরামতে কাজ চলছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আরও চাহিদার আবেদন দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে পাহাড়ী ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। উন্নতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির। এরই সাথে ভেসে উঠছে ক্ষয়-ক্ষতির চিত্র। বিধ্বস্ত রাস্তা ও ব্রীজের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন গ্রামের যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াই এ দুর্ভোগের কারণ। ভারি বর্ষণ কমে যাওয়ায় বিভিন্ন গ্রামের বাড়িঘরের পানি নেমে গেছে। এতে কমেছে পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা। উজানে পানি কমলেও গতকাল সকাল থেকে ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ও হাতিবান্ধা ইউনিয়নের ১০ গ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকছে।

উপজেলা তথ্য মতে, পাহাড়ি ঢলে মহারশী ও সোমেশ্বরী নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থানে এবং উপজেলার গ্রামীণ ও পাকা সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঢলের পানির প্রবল তোড়ে ১৮০ ফুট এলজিইডির পাকা সড়ক, দেড় কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, মহারশি নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থানের দেড় কিলোমিটার এবং সোমেশ্বরী নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থানের এক কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্ধশত কাঁচা ও আধাপাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মারত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ ২০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে ঝিনাইগাতী সদর, কাংশা ও ধানশাইল ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেটে, সাতরিয়ে, ভাড়া করা নৌকা করে পাড় হচ্ছে ।
আহম্মেদনগর-দীঘিরপার সড়ক, গুরুচরণ দুধনই-পানবর সড়ক ও রামেরকুড়া সড়কসহ ১০টি স্থানে বেশ কয়েক জায়গায় সড়ক ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে হাজার হাজার জনগনের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাদাত হোসেন ইনকিলাবকে জনান, আমাদের প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলে মহারশি নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই বাঁধ ভেঙে উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ ঝিনাইগাতী বাজার ও সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এতে পরিষদের কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হয় এবং ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। আমরা প্রতিবছর বাঁধের মেরামত করি। কিন্তু এখানে একটি স্থায়ীভাবে বাঁধের ব্যবস্থা করলে সবাই ক্ষতির হাত থেকে বাচঁবে।

আহম্মদনগরের বাসিন্দা মো. আছমত আলী জানান, আমার প্রজেক্টের মাছ পাহাড়ি ঢলে ভাসায় নিয়া গেছে গা। পানির চেয়ে মাছ আগে গেছে গা। কর্জধার কইরা মাছ চাষ করছিলাম এহন কি কইরা খামু।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনূল হক জানান, শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে ছোট-বড় দেড় শতাধিক মাছের প্রজেক্টের মাছ ভেসে গেছে। এতে মাছ ও অবাকাঠামোসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ হওয়ার পথে। উপজেলার দুই কিলোমিটার কাঁচা পাকা সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এসব ভাঙা সড়ক ও ব্রীজ কালভার্টের দ্রুতই মেরামত করা হবে। যেখানে যে অবস্থা ছিলো সে অবস্থায়ই ফিরিয়ে আনা হবে।

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারের মাঝে বিতরণের জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ পাওয়া ১০ মেট্রিক টন জিআর এর চাল সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিতরণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের মাঝে উপ-বরাদ্দ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ