পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বৈশ্বিক অতিমারি করোনার মধ্যেই নতুন করে দেখা দিয়েছে মাঙ্কিপক্স। ইতোমধ্যে ইউরোপের ৯টি দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ ১২টি দেশে অন্তত ৮০ জনের দেহে মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। রোগটি নতুন নয়। ১৯৭০ সালে আফ্রিকার জায়ারে বা কঙ্গোতে প্রথম মানুষের মধ্যে রোগটি দেখা যায়। এরপর ১১টি আফ্রিকান দেশে বিভিন্ন সময় এই রোগে অনেককে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। ২০০৩ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ প্রত্যক্ষ করা যায়। আফ্রিকার বাইরে এই প্রথম কোনো দেশে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ। মাঙ্কিপক্স প্রাণঘাতী নয়। তবে দ্রুত প্রসারণশীল ও যথেষ্ট বিরক্তিকর। এতে বৃদ্ধ ও শিশুদের বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। শিশুদের জন্য এটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এতদিন পর ফের রোগটি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় দেখা দেওয়ায় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা লক্ষ করায় বিশ্বের সর্বত্রই উদ্বেগ ও বিচলন দেখা দিয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এর মধ্যেই সমকামী ও উভকামীদের সতর্ক করে দিয়েছে। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ধারণা, সমকামী ও উভকামী পুরুষদের যৌন চক্র থেকে রোগটি ছড়িয়ে থাকতে পারে। ব্রিটেনে এ পর্যন্ত যে ক’জনের মধ্যে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত করা গেছে তারা সবাই সমকামী বা উভকামী। স্পেন-পর্তুগাল বা ইউরোপীয় অন্যান্য দেশে যাদের মধ্যে এ রোগের সংক্রমণ দেখা গেছে, তাদেরও বেশির ভাগ সমকামী বা উভকামী। অনেকে মনে করেছেন, এই যৌন অনাচার হতে পারে এ রোগের কারণ ও মাধ্যমে। আগে ধারণা করা হতো, বানর, কাঠবিড়াল বা ইঁদুরের মাধ্যমে মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এখন গবেষকদের অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে, এ ভাইরাসের উৎস আসলে কোথায় এবং কীভাবে বা কোন মাধ্যমে তা ছাড়ায়, সেটা নির্ণয় করা।
করোনা বা অন্যান্য প্রাণঘাতী ভাইরাসের মতো না হলেও মাঙ্কিপক্স ত্বরিৎ সংক্রমণশীল একটি ভাইরাস। সাবধানতা অবলম্বন এবং যথাসময়ে চিকিৎসা করা না হলে দৈহিকভাবে নাজুক শিশুর মৃত্যুও হতে পারে এতে। কাজেই রোগটির বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। এর লক্ষণগুলো সকলেরই জানা থাকা প্রয়োজন, যাতে কে আক্রান্ত হয়েছে তা সহজে শনাক্ত করা যায়। সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথা, পিঠ ও গায়ে ব্যথার সঙ্গে কাঁপুনিও হতে পারে। একইসঙ্গে দেহের বিভিন্ন লসিকাগ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। ছোট ছোট ক্ষতচিহ্ন, ফুসকুড়ি বা র্যাশ তো স্বাভাবিক ব্যাপার। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্বাসনালি, ক্ষতস্থান, নাক, মুখ কিংবা চোখের মাধ্যমে এমনকি আক্রান্তের স্পর্শ ও কাপড়-চোপরের মাধ্যমেও এ রোগ অন্যের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। এ রোগ থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় হলো, সংক্রমণের প্রক্রিয়া ও মাধ্যম থেকে দূরে থাকা। কোনো কারণে কেউ আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আক্রান্তকে পৃথক করে রাখা এবং চিকেনপক্সের প্রচলিত ওষুধপত্র ব্যবহার করলেই রোগী নিরাময় লাভ করতে পারে। এতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। চিকেনপক্সের টিকা মাঙ্কিপক্সের জন্য কার্যকর। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামীতে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ বাড়তে পারে এবং আরো দেশে তা বিস্তার লাভ করতে পারে। বিজ্ঞানীরা এও বলছেন, বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস বিশ্বের দেশে দেশে দেখা দিতে পারে। সুতরাং বিশ্ববাসীকে সতর্ক হতে হবে। ভাইরাসজনিত রোগব্যাধী থেকে আত্মরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশে মাঙ্কিপক্সের বিস্তার ঘটার আশংকা কম। তারপরও আমাদের সাবধান হতে হবে। রোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখতে হবে। আমাদের দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ বিদেশে থাকে। তাছাড়া দেশ থেকে ও বিদেশ থেকে বহু মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। তাই আশংকার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। সতর্ক ও সাবধান হলেই চলবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর মধ্যেই তৎপর হয়ে উঠেছে। করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় যে সাফল্য ও কৃতিত্ব দেখিয়েছে, বিশ্বে তা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মাঙ্কিপক্স বা অন্য যে কোনো ভাইরাসজনিত রোগ মোকাবিলায় মন্ত্রণালয় যে সক্ষম হবে, এ বিশ্বাস আমাদের আছে। ইতোমধ্যে মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থল বন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ থেকে আসা যাত্রীদের ওপর নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, হাসপাতাল প্রস্তুত রাখতে হবে, আক্রান্ত রোগীদের পৃথক করে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে এবং কার্যকর ওষুধপত্র ও চিকেনপক্সের টিকার উল্লেখযোগ্য মজুত গড়ে তুলতে হবে। কথায় বলে, রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অধিক কার্যকর ও কাক্সিক্ষত। সেটাই এখন করতে হবে। জনগণকে আশ্বস্থ করতে হবে, সতর্ক ও সচেতন করতে হবে যাতে তারা অহেতুক উদ্বেগ ও শংকায় আক্রান্ত না হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।