Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বগুড়ায় মাদ্রাসা ছাত্রকে নৃশংসভাবে হত্যা

বগুড়া ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০২২, ৩:৩৩ পিএম

বগুড়ায় স্ত্রীর তালাকের প্রতিশোধ নিতে শিশু সামিউল ইসলাম সাব্বির(১০) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তার সদ্য সাবেক সৎ বাবা। এই ঘটনায় সৎ বাবা ফজলুল হক (৪০) এবং হত্যাকাণ্ডে সহায়তা প্রদানকারী অনিতা রানী(৩৫) নামে এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ফজলুল হক শাজাহানপুর উপজেলার খরনা কমলাচাপড় গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে এবং অনিতা উপজেলার চেলো গ্রামের মৃত খিরদ চন্দ্র দেবনাথের মেয়ে। বুধবার বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী তার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৯টা দিকে শাজাহানপুর উপজেলার মানিকদিপা উত্তরাপাড়া গ্রামে লাউ ক্ষেতের জমিতে গলায় সুতার রশি পেঁচানো অবস্থায় শিশু সামিউলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার জানান, শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর গ্রামের মৃত ডালের আলী প্রাং এর মেয়ে সালেহা বেগম (২৮) প্রায় ১০ বছর আগে মাঝিড়া কাগজীপাড়া গ্রামের মৃত মনঞ্জুর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩০) কে বিয়ে করেন। জাহাঙ্গীর আলমের সাথে সংসার চলাকালে সালেহার ছেলে সামিউল ইসলাম সাব্বির জন্মগ্রহণ করে। সামিউল ইসলাম বর্তমানে সাজাপুর পূর্ব দক্ষিণপাড়া তালিমুল কোরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছিল। মাদক সেবন করার কারণে বনিবনা না হওয়ায় প্রায় দেড় মাস পূর্বে সালেহা তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম কে তালাক দেয়। এরপর সালেহা তার ছেলেকে সাথে রেখেই শাজাহানপুর থানার খরনা কমলাচাপড় গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে ফজলুল হক কে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে ফজলুল হক সালেহার ছেলেকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না। ফজলুল হক সালেহার ছেলে সামিউলকে সালেহার মা ও বোনের নিকট রেখে আসার জন্য শারীরিক নির্যাতন ও মানসিক চাপ দিতে থাকে।

এছাড়া ফজলুল হক মাঝেমধ্যে রাতের বেলায় সামিউলকে ঘরের বাইরে রেখে দরজা বন্ধ করে দিত এবং খাবার না দিয়ে অনাহারে রাখতো। ঈদ-উল-ফিতর এর দিন শিশু সামিউল তার মায়ের সাথে বেড়াতে যেতে চাইলে সৎ বাবা ফজলুল হক শিশু সামিউলকে মারপিট করে সালেহার বোনের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। সালেহা তার সন্তানের কষ্ট দেখে ফজলুল হকের সাথে বিয়ের ১০/১৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর কাজী অফিসের মাধ্যমে ১১ মে তালাক প্রদান করে। পরে ফজলুলকে তালাক দিয়ে সালেহা তার সন্তানকে নিয়ে সাজাপুর গ্রামে তার বোনের বাড়ীতে যায়। এমন অবস্থায় গত ১৪ মে ঈদ পরবর্তী ছেলের মাদ্রাসা খুললে সালেহা তার ছেলেকে নিজে গিয়ে মাদ্রাসায় রেখে আসে। এদিকে সালেহা তার স্বামী ফজলুল হক কে তালাক দেওয়ায় ফজলুল হক তার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তার ছেলেকে খুন করার পরিকল্পনা করে।

পুলিশ সুপার আরও জানান, পরিকল্পনা মোতাবেক ফজলুল সালেহার ছেলেকে নেওয়ার জন্য ১৬ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাজাপুর পূর্ব দক্ষিণপাড়া গ্রামের তালিমুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পৌঁছায় এবং সালেহার ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য মাদ্রাসার শিক্ষক মোঃ আবু মুছা (২৭) কে বলে। মাদ্রাসার নিয়ম অনুযায়ী মায়ের অনুমতি ছাড়া সন্তান কারো কাছে দেওয়া নিষেধ থাকায় মাদ্রাসার শিক্ষক আবু মুছা আসামী ফজলুল হকের নিকট শিশু সামিউলকে দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর ফজলুল হক পূর্বেই অনিতা রানীকে শিশু সামিউলের মা পরিচয় দিয়ে অনিতা রানীর মোবাইল নম্বর মাদ্রাসার শিক্ষকের নিকট দিয়ে বলে যে, সামিউল ইসলাম সাব্বির এর মায়ের সাথে কথা বলেন। তাৎক্ষনিক মাদ্রাসার শিক্ষক আবু মুছা তার ব্যক্তিগত নাম্বার থেকে ফজলুল হকের দেওয়া অনিতা রানীর মোবাইল নাম্বারে ফোন করে। ফোনে অনিতা রানী শিশু সামিউল ইসলাম সাব্বির এর মায়ের পরিচয় দিয়ে সামিউলকে ফজলুল হকের নিকট দিয়ে দিতে বলে। সে সময় মাদ্রাসার শিক্ষক মাদ্রাসার অন্যান্য ছাত্রদের সামনে শিশু সামিউলকে ফজলুল হকের নিকট দিয়ে দেয়।

অনিতা রানীর এমন সহায়তায় ফজলুল হক মানিকদিপা উত্তরপাড়া টু খড়না কলমাচাপড় গামী কাঁচা রাস্তার পাশের লাউয়ের জমিতে শিশু সামিউলকে নিয়ে গলায় সুতার রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। শিশু ছামিউলের লাশ গোপন করার জন্য আসামী ফজলুল হক লাউ ক্ষেতের উত্তর/পশ্চিম কোনায় মাচার ঘুটির সাথে বেঁধে রেখে চলে যায়। পরে ১৭ মে সকাল ৮টার দিকে পুলিশ সামিউলের মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর ফেসবুকের মাধ্যমে শিশু সামিউলের লাশের বিষয়ে লোকমুখে শুনে সালেহা ও তার আত্মীয়-স্বজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তার ছেলের মরদেহ সনাক্ত করে । পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৭মে মরদেহ উদ্ধারের ৬ ঘণ্টার মধ্যেই আসামীদের গ্রেফতার করে।

পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনায় শিশু সামিউলের মা সালেহা বাদী হয়ে আসামী ফজলুল হক ও আসামী অনিতা রানীর বিরুদ্ধে শাজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার( প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম, ডিবির ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ ও শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ