পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে আমদানি-রফতানিতে বড় ধরণের ঘাটতি চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। করোনাকালীন বাস্তবতা পেরিয়ে আমরা যখন একটি গতিশীল অর্থনীতির দিকে যাত্রর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখনই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ যেন সবকিছু আবারো এলোমেলো করে দিল। বিশেষত রাশিয়ার উপর পশ্চিমা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং রাশিয়া থেকে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের সরবরাহ বিঘিœত হওয়ায় জ্বালানির মূল্য হু হু করে বেড়ে যাওয়ায় আমাদের মত জ্বালানি ও শিল্পের কাঁচামালের আমদানি নির্ভর দেশের জন্য বড় ধরণের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। জ্বালানি ও আমদানি পণ্যের পরিবহন খরচ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে, গত অর্থবছরের তুলনায় আমদানি ব্যয় প্রায় ৪৩ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার এই বাস্তবতার পেছনে অপ্রয়োজনীয় ও কম গুরুত্বপূর্ণ বিলাসী পণ্য আমদানিতে অধিক অর্থ ব্যয়ের প্রবণতা বড় ভূমিকা রাখছে বলে জানা যায়। দেরিতে হলেও ইতিমধ্যে কম গুরুত্বপূর্ণ ও বিলাসী পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও গত কয়েক দিনে বাজারে ডলারের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে। গত সোমবার একদিনেই ডলারের বিপরীতে টাকার মানে ৮০ পয়সা পতন ঘটেছে। গত ২০ দিনে ডলারের মূল্য ১ টাকা ৩০ পয়সা বেড়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও আদতে খোলা বাজারে আরো অনেক বেশি মূল্যে ডলার বিক্রির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এতে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও অর্থ পাচারের প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে শিল্পের কাচামাল, জ্বালানি ও ভোগ্যপণ্যসহ সামগ্রিক আমদানি খাতে ৬৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের বিপরীতে রফতানি ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স থেকে আয় হয়েছে ৪৩ দশমক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলারের ঘাটতির ধাক্কা সামাল দিতে হচ্ছে আমাদের। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, কোনো উঠতি অর্থনীতির দেশকে কমপক্ষে ৮ থেকে ১২ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মত অর্থ রিজার্ভ রাখতে হয়। সর্বশেষ তথ্যে, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে ডলারের রিজার্ভ রয়েছে প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার। এর থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে থাকায় হিসাবের বাইরে রাখতে হবে। প্রতিমাসে আমদানি ব্যয় মেটাতে রিজার্ভ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার খরচ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রির্জাভ দিয়ে সর্বোচ্চ ৫ মাসের ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব। এ হিসেবে প্রয়োজনের তুলনায় রির্জাভের ঘাটতি রয়েছে ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। চলতি অর্থবছরে গার্মেন্ট রফতানি আয় বাড়লেও আমদানি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে না। অন্যদিকে, প্রবাসী কর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া রেমিটেন্সের হার গত অর্থবছরের চেয়ে অন্তত ১৬ শতাংশ হারে কমে যাওয়ার বাস্তবতা অর্থনৈতিক চিত্রকে অনেকটা টালমাটাল করে তুলেছে। গত প্রায় দেড় বছরে বিদেশে কয়েক লাখ শ্রমিক গেলেও রেমিটেন্স বাড়েনি।
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে রফতানি ও প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রবাহ না বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয় মিটাতে ডলারের উপর চাপ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে। টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বাড়ানোর পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনা, অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বন্ধ রাখা এবং বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা এবং সরকারি আমলাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফরের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়ে সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। আমদানিখাতে ব্যাংকগুলোর বর্ধিত চাহিদা মিটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ৫১০ কোটি ডলার বিক্রি করেও বাজার স্থিতিশীল রাখতে পারছে না। শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকটের শুরুতে ডলার নিয়ে একই ধরণের সমস্যা দেখা দিলেও সময়মত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বাংলাদেশে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে নানা ধরণের কারসাজির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মিথ্যা ডক্যুমেন্ট ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারের তথ্য বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে, জনশক্তি রফতানি বাড়লেও রেমিটেন্স আয় কমে যাওয়ার কারণ কি তা খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। জনশক্তি রফতানি খাতের বিশৃঙ্খলা, অস্বচ্ছতা দূর করে বৈধ পথে দেশে অর্থ পাঠানোর প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে রেমিটেন্স আয়ে নেতিবাচক প্রবণতা রোধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীল রাখতে, সাময়িকভাবে হলেও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি পুরোপুরি বন্ধ রাখা দরকার। ডলারের ভারসাম্যহীন মূল্যবৃদ্ধি সমন্বয়ের পদক্ষেপ নিতে হবে। ডলার পাচার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিলম্ব ঘটলে অর্থনীতি নাজুক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গার্মেন্টসহ রফতানি পণ্যের মূল্য সমন্বয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ব্যয় কমানোর জন্য ইতিমধ্যে গৃহিত উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।