পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভোগ্যপণ্যের আমদানি সেই সাথে সরবরাহ বাড়ছে। তাতে পবিত্র রমজান মাসে খাদ্যপণ্যের সঙ্কটের আশঙ্কা কমছে। সিন্ডিকেটের কারসাজি কিংবা মজুতদারি না হলে ছোলা, মসুর ডাল, সয়াবিন, চিনি, পেঁয়াজ, খেঁজুর, ভোজ্যতেলসহ রোজায় অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুধু গত জানুয়ারি মাসেই এই সাত পণ্যের সাড়ে ১২ লাখ টন আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। আমদানি-রফতানির সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক মাস আগেও ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা ছিল। এখন পর্যাপ্ত আমদানির ফলে সে আশঙ্কা কেটে গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউসের তথ্য বলছে রোজায় প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। বড় বড় আমদানিকারকদের পাশাপাশি ছোট আমদানিকারকেরাও এলসি খোলার সুযোগ পেয়েছে। অনেক পণ্য বন্দর হয়ে গুদামে পৌঁছে গেছে। আরো কিছু পণ্য পাইপ লাইনে আছে। কিছু ভোগ্য পণ্য চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানি রয়েছে। স্থল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ছোলা ও পেঁয়াজ আসা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে এসব পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। রোজার আগে বাজার স্থিতিশীল হয়ে আসবে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আছদগঞ্জে ব্যস্ততা বেড়েছে। এসব পাইকারি বাজার থেকে সড়ক ও নৌপথে ভোগ্যপণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা। ট্রাকে, পিকআপে ও নৌকায় পণ্যবোঝাইয়ে ব্যস্ত শ্রমিকেরা। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৩ মার্চ পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসাবে সামনের দিনগুলোতে পাইকারি বাজারে ব্যস্ততা আরো বাড়বে। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ স্টকিস্ট ট্রেড এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ জাহেদি বলেন, এলসি খোলা বেড়ে যাওয়ায় আমদানি বেড়েছে। ভারত থেকেও স্থলপথে ছোলা আমদানি হচ্ছে। এতে বস্তাপ্রতি ছোলার দাম একশ থেকে দেড়শ’ টাকা কমে গেছে। পেঁয়াজের আমদানিও বেড়েছে। কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা কমে এখন পাইকারি বাজারে ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ছোলা, পেঁয়াজের দাম আরো কমবে। মসুর ডাল, বুটের ডাল, চিনি, ভোজ্যতেলসহ ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরবরাহ স্বাভাবিক হলে সিন্ডিকেট করেও দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। খাতুনগঞ্জের মেসার্স হক ট্রেডিংয়ের মালিক মো. আজিজুল হক বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যস্ততা বাড়লেও অন্যবছরের একই সময়ের তুলনায় কেনাবেচা কিছুটা কম। কারণ ডলার সঙ্কটের কারণে এবার আগেভাগে এলসি খোলা যায়নি। শেষ সময়ে এলসি খোলায় এখনও অনেক পণ্য বাজারে আসেনি। তবে এখন ধীরে ধীরে বাজারে সরবরাহ বাড়ছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত এলসি সঙ্কটের কারণে বাজারে ভোগ্যপণ্যের আমদানি নিয়ে শঙ্কা ছিল। কিন্তু সরকারের নানা উদ্যোগে এলসি খোলা বেড়ে যাওয়ায় গত দেড় মাসে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বেড়েছে। বিশেষ করে চিনি, ভোজ্যতেল ও সব ধরনের ডালের আমদানি বেড়েছে। এতে বাজারে সঙ্কট যেমন কাটছে তেমনি দামও পড়ে যাচ্ছে। তবে আমদানি থেকে বিক্রি পর্যন্ত যত পর্যায়ে এসব পণ্য হাতবদল হয় তার কোনো পর্যায়েই যাতে সেগুলো মজুদ না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। কারণ যথাযথ তদারকি না হলে পর্যাপ্ত আমদানির সুফল থেকে ভোক্তারা বঞ্চিত হবেন।
এদিকে জানুয়ারি থেকে আমদানি বেড়েছে। কাস্টমসের হিসাবে চাহিদার বিপরীতে ডিসেম্বর পর্যন্ত চিনি আমদানি ২২ শতাংশ কম হয়েছিল। জানুয়ারিতে চিনি আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার টন। সেই হিসাবে ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টন চিনি চলতি ফেব্রুয়ারির মধ্যেই পৌঁছার কথা। দেশে চিনির মোট চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টন। দেশে উৎপাদন হয় ৩০ হাজার টন। বাকি চাহিদা আমদানি করে মেটানো হয়। রমজানে চিনির চাহিদা তিন লাখ টনে উন্নীত হয়। হিসাব বলছে, রোজা শুরুর আগেই প্রায় ১৫ লাখ টন চিনি পৌঁছে যাবে গুদামে। পর্যায়ক্রমে আরো চিনি আসবে। চট্টগ্রাম বন্দরে ফেব্রুয়ারি মাসে চিনিবাহী জাহাজ এসেছে পাঁচটি, যেখানে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি ছিল দুই লাখ ৪১ হাজার টন।
২০২১ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে অপরিশোধিত চিনি আমদানির পরিমাণ ছিল নয় লাখ ৪১ হাজার টন। ২০২২ সালের একই সময়ে সাত লাখ ৩৩ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করা হয়েছে। আর শুধু জানুয়ারিতে আমদানি করা হয়েছে এক লাখ ৭৮ হাজার টন। সে হিসাবে জুলাই থেকে জানুয়ারি এই সাত মাসে চিনি এসেছে নয় লাখ ২১ হাজার টন। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চিনির দাম না কমলেও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি দেশের স্থলবন্দর দিয়েও ছোলা আসছে। খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে ছোলা আসছে। তাতে দাম কমে গেছে। খেঁজুরের আমদানিও স্বাভাবিক রয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে খেঁজুর আমদানি করা হয় ১১ হাজার ৭৭৩ টন। ২০২১ সালে আমদানি করা হয়েছিল ১২ হাজার ১৫৩ টন। আর শুধু গত জানুয়ারিতে আমদানি করা হয়েছে সাত হাজার ৭৭০ টন। ফলে শেষ সাত মাসে আমদানি হয়েছে সাড়ে ১৯ হাজার টন। জানুয়ারিতে ঋণপত্র খোলা হয়েছে সাড়ে ২৯ হাজার টন। পুরো বছর যেখানে খেঁজুরের চাহিদা এক লাখ টন; শুধু রমজানে সেই চাহিদা থাকে ৫০ হাজার টন। সে হিসাবে এবার চাহিদার চেয়ে বেশি খেঁজুর এসেছে। আগের আমদানি করা খেঁজুরও আছে।
সয়াবিন তেল আমদানি গত বছরের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি হয়েছে। ২০২১ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয় দুই লাখ ৯৭ হাজার টন। আর ২০২২ সালের একই সময়ে এসেছে তিন লাখ ২১ হাজার টন। শুধু গত জানুয়ারিতে এসেছে ৩৭ হাজার ৬৫৫ টন। সে হিসাবে জুলাই থেকে সাত মাসে আমদানি করা হয়েছে তিন লাখ ৫৯ হাজার টন। বীজ আকারে সয়াবিন আমদানি ২৩ শতাংশ বেড়েছে। বিগত ২০২২ সালে এসেছে সাত লাখ ১৪ হাজার টন। ২০২১ সালের একই সময়ে এসেছিল পাঁচ লাখ ৭৯ হাজার টন। জানুয়ারিতে ঋণপত্র খোলা হয়েছে তিন লাখ ৯০ হাজার টন।
পাম তেলের আমদানিও রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। গত জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে পরিশোধিত পাম তেল আমদানি করা হয়েছে নয় লাখ ৫২ হাজার টন। গেল জানুয়ারিতে তিন লাখ ৯০ হাজার টনের ঋণপত্র খোলা হয়েছে। গত ছয় মাসে আগের ছয় মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দুই লাখ টন মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। দেশে মসুর ডালের চাহিদা বছরে ছয় লাখ টন। রমজান মাসে চাহিদা এক লাখ টন। ২০২২ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মসুর ডাল আমদানি হয়েছে এক লাখ ৯৯ হাজার টন। আর ২০২১ সালের একই সময়ে আমদানি করা হয়েছিল এক লাখ ৯ হাজার টন। আমদানি বেড়েছে ৮২ শতাংশ। আর শুধু জানুয়ারিতেই এসেছে ৩৯ হাজার ৬০০ টন মসুর ডাল। সে হিসাবে সাত মাসে মসুর ডাল আমদানি হয়েছে দুই লাখ ৩৯ হাজার টন।
২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে তিন লাখ ৮৬ হাজার টন। আমদানি বেড়েছে ১১ শতাংশ। শুধু ডিসেম্বরেই ৪৮ হাজার টন এবং জানুয়ারিতে সাড়ে ৪২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। ফলে বাজারে পেঁয়াজর দাম পড়তি।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে চাহিদার চেয়ে বেশি ভোগ্যপণ্য থাকার পরও নানা অজুহাতে দাম বাড়ানো হচ্ছে। কারা এই মূল্যবৃদ্ধির সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে হবে। কেন দাম বেশি তা খতিয়ে দেখতে হবে। এখন থেকে তদারকি না বাড়ালে পবিত্র রমজান মাসে মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরা যাবে না বলেও মনে করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।