মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মস্কোয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক করেন জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস। বৈঠকে পুতিনের কাছে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং শান্তি বৈঠকের প্রস্তাব দেন গুতেরেস। জবাবে পুতিন জানান, কয়েকটি শর্ত মেনে নিলে শান্তি বৈঠকে বসতে তিনি রাজি। এদিকে, খেরসন নামের ইউক্রেনের আরো একটি অঞ্চল মুক্ত করেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ক্রাইমিয়া সমস্যার সমাধান এবং পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলো নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য জানাতে হবে ইউক্রেনকে। পুতিনের ইঙ্গিত, পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলোকে ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে হবে। তারা স্বাধীনতা পেলেই ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি বৈঠক সম্ভব বলে জানিয়েছেন পুতিন। তবে একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, আলোচনা এখনো চলছে। কিন্তু ইউক্রেনকে রাশিয়ার ওসব শর্ত মেনে নিতে হবে। পুতিন বলেন, ইস্তাম্বুলে সাম্প্রতিক আলোচনা ‘যুগান্তকারী’ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। কিন্তু, ইউক্রেনের বুচা শহরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নৃশংসতার খবর প্রকাশের পর তা আর এগোয়নি। এ ধরনের খবরকে ‘উসকানিমূলক’ দাবি করে পুতিন বলেন, এর সঙ্গে রুশ সেনাবাহিনীর কোনো সম্পর্ক নেই। মারিউপোলের বর্তমান পরিস্থিতিকে তিনি ‘জটিল এবং দুঃখজনক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এই অবরুদ্ধ শহরে রুশ বাহিনী আর কোনো হামলা করছে না।
উল্লেখ্য, রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখল করে নিলেও ইউক্রেনসহ একাধিক রাষ্ট্র ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নেয়নি। এবার যুদ্ধ শুরু হওয়ার অব্যবহিত আগে দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল দুইটি নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করে। দুইটি অঞ্চলেই রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীরা শক্তিশালী। রাশিয়ার প্রস্তাব ওই অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে হবে ইউক্রেনকে। পুতিন একথা ঘোষণা করার আগেই জেলেনস্কি তার প্রাত্যহিক ভিডিওবার্তায় বলেছেন, পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলো কী করবে, তা স্থির হবে অবাধ গণভোটের মাধ্যমে। যুদ্ধের আবহে তা সম্ভব নয়। মানুষ যা সিদ্ধান্ত নেবে, তিনি তা মেনে নেবেন। রাশিয়াও দোনেৎস্ক, লুহানস্কের মতো অঞ্চলগুলোতে গণভোটে রাজি হয়। কিন্তু তারপের ডিগবাজি খেয়ে ইউক্রেন জানিয়েছিল, বন্দুকের নলের সামনে গণভোট হতে পারে না। এখন ওই অঞ্চলগুলোতে গণভোটের পরিস্থিতিই নেই।
পুতিনের কাছে গুতেরেস বলেছেন, মারিউপলে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা মানুষকে উদ্ধারের সুযোগ করে দিতে। স্টিল প্লান্টে বহু বেসামরিক মানুষ আটকে পড়েছেন, তাদের উদ্ধারে সাহায্য করতে। পুতিন জানিয়েছেন, রেডক্রস এবং জাতিসংঘের উপস্থিতিতে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব। কিন্তু একইসঙ্গে তা বক্তব্য, ইউক্রেনের সেনা ওই বেসামরিক মানুষদের যেতে দিতে চায় না। তারা তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। বেসামরিক মানুষদের সামনে রেখে তারা রাশিয়ার সেনার সঙ্গে লড়াইয়ের চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য, প্রায় এক লাখ মানুষ আটকে আছেন মারিউপলের ওই স্টিল প্লান্ট অঞ্চলে। তার মধ্যে বহু নারী এবং শিশুও আছে বলে ইউক্রেনের প্রশাসন জানিয়েছে।
কয়েকটি নতুন দেশে বিভক্ত হচ্ছে ইউক্রেন : ইউক্রেন বেশ কয়েকটি স্বাধীন দেশে বিভক্ত হতে যাচ্ছে। রাশিয়াকে দুর্বল করতে ইউক্রেনকে ব্যবহারে যে কৌশল যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছে তার ফলেই ইউক্রেন বিভক্ত হয়ে বেশ কয়েকটি নতুন দেশের আবির্ভাব হবে। মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি নিকোলাই পাত্রুশেভের এ কথা বলেছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাত্রুশেভ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর ধরেই ইউক্রেনের নাগরিকদের মধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঘৃণা জাগানোর চেষ্টা করছে।’ পাত্রুশেভ বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভে তাদের পছন্দের লোকদের ব্যবহার করে রাশিয়াকে নিপীড়ন করা চেষ্টা করছে। তারা রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ইউক্রেনকে বেছে নিয়েছে কিন্তু তারা যা করছে তা মূলত ইউক্রেনের জনগণকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। পশ্চিমের নীতি এবং কিয়েভের বর্তমান শাসকদের কর্মকাণ্ডের ফলাফল হবে কেবল- ইউক্রেনকে কয়েকটি রাজ্যে বিভক্ত করা।’ বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাত্রুশেভের মন্তব্য এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের বর্তমান গতি-প্রকৃতি ইঙ্গিত দেয় যে, রাশিয়া ইউক্রেনকে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত করে ফেলতে চায়। এর আগে, গত সপ্তাহে শীর্ষ এক রাশিয়ান জেনারেল জানিয়েছিলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্ব এবং দক্ষিণ অংশ দখলে নিতে চায়।
খেরসন অঞ্চল মুক্ত : জানা গেছে, চলমান সামরিক অভিযানের তৃতীয় মাসে এসে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন অঞ্চল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রুশ সেনারা। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের বাহিনী দক্ষিণ ইউক্রেনের সমগ্র খেরসন অঞ্চলটিকে ‘মুক্ত’ করেছে। রুশ বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। কিয়েভও বলছে, মস্কোর সেনারা ডনবাসের দুটি শহর এবং উত্তর-পূর্ব খারকিভের এক জোড়া গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। মঙ্গলবার ইউক্রেনের একজন আঞ্চলিক সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, (খেরসনের) আঞ্চলিক প্রশাসনের এবং একইসঙ্গে সিটি কাউন্সিলের নতুন প্রধান নিয়োগ করেছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী।
পশ্চিমা অস্ত্রের চালানে হামলা : ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করা তা হামলা করার বৈধ টার্গেট হিসাবে বিবেচিত হবে এতদিন হুমকি দিয়ে আসছিল রাশিয়া। তবে আমেরিকা ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা সে হুমকিতে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে ইউক্রেনকে যেভাবে ক্রমাগত অস্ত্র সরবরাহ করেছে সেটাকে অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষকও রাশিয়া ও নেটোর মধ্যে ছায়া-যুদ্ধ হিসাবে বর্ণনা করছেন। সোমবার ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত পাঁচটি রেলওয়ে সুবিধাগুলিতে রকেট হামলা করেছে রাশিয়া।
সরবরাহ লাইন এবং অবকাঠামো লক্ষ্য করে পশ্চিম ও মধ্য ইউক্রেন জুড়ে আক্রমণগুলো এমন সময়ে করা হলো, যখন বিলিয়ন মূল্যের ভারী কামান ব্যবস্থা, ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া যান ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য পশ্চিমারা পাঠাতে শুরু করেছে। ইউক্রেনকে সমন্বিত-ভাবে অস্ত্র সাহায্য দেয়া নিয়ে মঙ্গলবার জার্মানিতে আমেরিকা প্রায় ৪০টি দেশের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ডেকে এনে এক বৈঠক শুরু করেছে। এই বৈঠক শুরুর দিন অর্থাৎ সোমবার ব্রিটেন ঘোষণা করেছে তারা স্টারট্রেক বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত সাঁজোয়া গাড়ি পাঠাবে ইউক্রেনে। আর মঙ্গলবার জার্মানি বলেছে তারা রেডার যুক্ত কয়েক ডজন ট্যাংক দেবে যা দিয়ে বিমান ধ্বংস করা যায়।
পোল্যান্ড-বুলগেরিয়ায় গ্যাস বন্ধ করল : পোল্যান্ড এবং বুলগেরিয়ায় বুধবার থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। উভয় দেশই রুবেলে জ্বালানি সরবরাহের জন্য অর্থ প্রদান করতে অস্বীকার করার পরে রাশিয়া এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এক বিবৃতিতে গ্যাজপ্রম জানিয়েছে, রাশিয়ান জ্বালানি কর্পোরেশন গ্যাজপ্রম নিশ্চিত করেছে যে, দুই দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। ‘রুবেলে অর্থ প্রদানের অনুপস্থিতির কারণে গ্যাজপ্রম বুলগারগার্জ (বুলগেরিয়া) এবং পিজিএনআইজি (পোল্যান্ড) গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে স্থগিত করেছে।’
মঙ্গলবার পোল্যান্ড একটি নোটিস পেয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। গ্যাসপ্রোমের সেই নোটিসে বলা হয়েছে, বুধবার থেকে পোল্যান্ডে আর গ্যাস পাঠানো হবে না। ইয়ামাল পাইপলাইনের সাহায্যে গ্যাসপ্রোম পোল্যান্ডে গ্যাস পাঠায়। বুধবার থেকে তা বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। বুধবার সে কাজ শুরু করে দিল রাশিয়া। পোল্যান্ড এবং বুলগেরিয়ায় গ্যাস দেয়া বন্ধ করা হচ্ছে। রাশিয়ার গ্যাসের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল পোল্যান্ড। বুলগেরিয়া সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ার গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। তবে তারা জানিয়েছে, গত কিছুদিনে বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলার চেষ্টা করছে তারা।
রাতারাতি কেন গ্যাস দেয়া বন্ধ করা হচ্ছে নোটিসে স্পষ্ট করে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে রাশিয়ার সংবাদমাদ্যম গ্যাসকমের এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার শর্ত না মানার জন্যই একাজ করা হচ্ছে। রাশিয়ার শর্ত ছিল, রুবেলে গ্যাস কিনতে হবে ‘অবন্ধু’ দেশগুলিকে। অবন্ধু অর্থাৎ, যুদ্ধে যারা রাশিয়ার পাশে নেই অথবা সরাসরি ইউক্রেনকে সমর্থন করছে। পোল্যান্ড সরাসরি ইউক্রেনকে সমর্থন করছে। বিপুল পরিমাণ ইউক্রেনের বাস্তুহারা পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। বস্তুত, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেই রাশিয়া রুবেলে গ্যাস ও তেল কেনার কথা বলেছিল। ইউরোপ তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। ইউরোপের একাধিক দেশ জানিয়েছিল, গ্যাস ও তেল সংক্রান্ত যে চুক্তি রাশিয়ার সঙ্গে আছে, রুবেলে দাম দিতে গেলে সেই চুক্তি ভঙ্গ হবে। সেই ঘটনার পর এই প্রথম রাশিয়া এবিষয়ে এত কড়া পদক্ষেপের কথা জানালো। সূত্র : ডয়চে ভেলে, আরটি, এক্সিওস, ইন্টারফ্যাক্স, পলিটিকো, রয়টার্স, বিজনেস ইনসাইডার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।