Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশি পোশাকের চাহিদা বেশি

চট্টগ্রাম

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:১৮ এএম

হরেক রকমের শাড়িতে ঠাসা প্রতিটি দোকান। দেশি শাড়ির পাশাপাশি রয়েছে ভারতীয় নানান ডিজাইনের শাড়ি। তবে ক্রেতাদের আস্থা দেশি শাড়িতে। চট্টগ্রামে এবারের ঈদ বাজারে দেশি পোশাকের চাহিদাই বেশি। ঈদ সামনে রেখে বন্দরনগরীর মার্কেট, বিপণিকেন্দ্র ও শপিংমলে বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। তবে পোশাকের মূল্যেও ঊর্ধ্বগতি। তাতে বিরক্ত ক্রেতারা। স্বাদ এবং সাধ্যের সমন্বয় ঘটাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। বিপাকে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের লোকজন। কিছু কিছু মার্কেটে পোশাকের কয়েকগুণ বেশি মূল্য হাঁকার অভিযোগ রয়েছে। ফিক্সডপ্রাইজের নামে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণারও অভিযোগ আছে। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের মধ্যেও মার্কেটে ক্রেতার আগমন বাড়ছে। বিক্রেতারা আশা করছেন, সামনের দিনগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি আরও বাড়বে। জমজমাট হবে কেনাকাটাও। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের মার্কেট, শপিংমলগুলোকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। প্রতিটি শপিংমলে আলোর বন্যা। রাতে-দিনে প্রায় ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকছে এসব মার্কেট। অভিজাত শপিংমলের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী রেয়াজুদ্দিন বাজার, নিউমার্কেট, টেরিবাজার, চকবাজারে ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়। জহুর হকার্স মার্কেট এবং ফুটপাতের পসরাগুলোতেও ক্রেতা সমাগম। মার্কেট ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অভিজাত মার্কেটগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি ব্যাপক হলেও সে তুলনায় কেনাকাটা এখনও কম। ক্রেতাদের বেশিরভাগই এখনও ঘুরেফিরে দেখছেন, কিনছেন কম।

ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। ফলে সামনের দিনগুলোতে কেনাকাটা বেশ জমে উঠবে বলে প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের। তবে রেয়াজুদ্দিন বাজার, টেরিবাজারসহ ঐতিহ্যবাহী পুরাতন মার্কেটগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতির সাথে কেনাবেচাও বাড়ছে। বিশেষ করে টেরিবাজার ও রেয়াজুদ্দিন বাজার এবং জহুর হকার্স মার্কেটে কেনাকাটা পুরোপুরিই জমে উঠেছে। মার্কেটগুলোতে হরেক পোশাকের কমতি নেই। দেশি পোশাকের পাশাপাশি প্রতিবেশি ভারত, চীন, পাকিস্তান, থাইল্যান্ডসহ বিদেশি পোশাকের কালেকশানও রয়েছে। প্রায় প্রতিটি দোকানেই আছে ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিসসহ নানা রকমের পোশাক।
নিউমার্কেট, সানমার ওশ্যান সিটি, আফমি প্লাজা, ফিনলে স্কয়ার, মিমি সুপার, বালি আর্কেড, আখতারুজ্জামান সেন্টার, আমিন সেন্টার, ইউনেস্কো প্লাজাসহ অভিজাত শপিংমলগুলোতে ক্রেতা সমাগম বাড়ছে। সেইসাথে কেনাকাটাও বাড়তে শুরু করেছে। ভিন্নচিত্র চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, সেন্ট্রাল প্লাজা, আগ্রাবাদ লাকী প্লাজা, সাউথল্যান্ড সেন্টার, ব্যাংকক-সিঙ্গাপুর মার্কেট, ঝনক প্লাজা, মহাজন টাওয়ার, আলী শাহ প্লাজা, চকবাজারের কেয়ারি ইলিশিয়াম, গুলজার টাওয়ার, মতি টাওয়ার, চকভিউ মার্কেট, তামাকুমন্ডি লেইন, কল্লোল সুপার, চক সুপার মার্কেট, বহদ্দারহাট হক টাওয়ার, কর্ণফুলী মার্কেট, নন্দনকানন পুলিশ প্লাজা, নূপুর মার্কেটসহ রেয়াজুদ্দিন বাজারের আশপাশের মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়।
এসব মার্কেটে কেনাকাটাও বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতার ভারে জমজমাট থাকছে এসব মার্কেট। ব্যবসায়ীরা জানান, এবার বেচাকেনাও বেশ ভাল। এসব মার্কেটে দামও মোটামুটি নাগালের মধ্যে। তাতে স্বস্তিতে ক্রেতারাও। টানা দুই বছর পর এবার পুরোদমে খোলা ঈদের মার্কেট। ব্যবসায়ীরা গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার টার্গেট নিয়ে হরেক পণ্যের সমাহার ঘটিয়েছে। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ক্রেতাদের অবস্থা কাহিল। এ অবস্থায় টার্গেট পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা।
মার্কেটগুলোতে পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, শাড়ি, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গার পাশাপাশি শিশুদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা মার্কেট ঘুরে ঘুরে পছন্দের পোশাকটি কিনে নিচ্ছেন। এবার গ্রীষ্মে ঈদ হচ্ছে। এ কারণে ঈদের পোশাকেও বৈচিত্র্য এসেছে। ক্রেতাদের পছন্দ দেশি পোশাক। বিশেষ করে সুতার তৈরি পোশাকের প্রতি আকর্ষণ সবার। তরুণ-তরুণীদের হাল ফ্যাশনের পোশাক। বড়দের জন্যও রয়েছে আধুনিক ডিজাইনের সব পোশাক। শিশুদের পোশাকেও এসেছে বৈচিত্র্য। ঐতিহ্যবাহি সিল্ক, কাতান, খাদি পোশাকের পাশাপাশি টাঙ্গাইলের শাড়ি এবং তাঁতের শাড়িও পছন্দের তালিকায় রয়েছে। দেশি নামকরা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক বিক্রি হচ্ছে বেশি। শাড়ি এবং থ্রি-পিস ও লেহেঙ্গায় অত্যাধুনিক সব কারুকাজ রয়েছে। এসব পোশাক পছন্দ করছেন তরুণীরা।
পোশাকের পাশাপাশি জুতা এবং কসমেটিকসের দোকানগুলোতেও ভিড় বাড়ছে। গত কয়েক বছরে দেশে পাদুকা শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিশ^মানের জুতা তৈরি হচ্ছে দেশে। চীন, ভারত, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা জুতার ভিড়ে ক্রেতাদের পছন্দ দেশে তৈরি জুতা। দামেও কিছুটা স্বস্তা হওয়ায় দেশি জুতা বিক্রি হচ্ছে বেশি। মার্কেট, শপিংমলের পাশাপাশি নগরীর অভিজাত আবাসিক এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে গড়েওঠা ফ্যাশন হাউসগুলোতেও জমজমাট কেনাকাটা চলছে। অনলাইনেও ঈদের কেনাকাটা সারছেন অনেকে। পছন্দের পোশাকটি অনলাইনে কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। এক্ষেত্রে প্রতারণারও শিকার হচ্ছেন অনেকে।
বেশিরভাগ মসজিদে খতমে তারাবিহ শেষ হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এখন পুরোপুরি ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছেন। ক্রেতারাও ছুটছেন ঈদের বাজারে। সকাল ১০টা থেকে ঈদ বাজারে নানান শ্রেণি পেশা ও বয়সের মানুষের ভিড় বাড়ছে। তবে ইফতারি এবং তারাবির পর প্রতিটি মার্কেটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। মার্কেটগুলোকে ঘিরে যানজট সহনীয় রাখতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। ক্রেতাদের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি মার্কেট কর্তৃপক্ষও নানা উদ্যোগও নিয়েছে। প্রতিটি মার্কেট সাজানো হয়েছে নববধূর সাজে। রাত যত গভীর হচ্ছে ততই জমে উঠছে ঈদ বাজার। এই ধারা চাঁদ রাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এমন প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদবাজার

২৬ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ