পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বর্ণিল সাজে সেজেছে চট্টগ্রাম নগরীর মার্কেট, শপিংমল, বিপণি কেন্দ্র্রগুলো। প্রতিটি দোকান ঠাসা দেশি-বিদেশি হরেক পোশাকে। টানা দুই বছর করোনার কারণে বেচাবিক্রি প্রায় বন্ধ ছিল। এবার করোনামুক্ত পরিবেশে পবিত্র মাহে রমজান পালিত হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, এবার বেচাকেনা বাড়বে। ঢল নামবে ক্রেতার। আর তাতে গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে। ঈদ বাজার সামনে রেখে প্রস্তুত ব্যবসায়ীরা। সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে শপিংমল। তবে এখনও ক্রেতা নেই। যারা আসছেন তারা ঘুরে ফিরে দেখছেন কিনছেন কম।
নগরীর মসজিদগুলোতে চলছে খতমে তারাবিহ। প্রতিবারের মত এবারও ১৫ রমজানের আগে বেশিরভাগ মসজিদে খতমে তারাবি শেষ হবে। আর তখন মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের আগমন বাড়বে এমন প্রত্যাশা বিক্রেতাদের। ক্রেতা আকর্ষণে প্রতিটি মার্কেটে হরেক আয়োজন করা হয়েছে। র্যাফেল ড্র এর পাশাপাশি কিছু কিছু পণ্যে ছাড় দেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বেশিরভাগ মার্কেটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা রয়েছে। ক্রেতাদের নিরাপত্তা রয়েছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা, আর্চওয়ে। মেটাল ডিটেকটরে ক্রেতাদের তল্লাশি করে মার্কেটে প্রবেশের আয়োজনও আছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে আছে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা। বিনামূল্যে মাস্ক বিলির ব্যবস্থাও রয়েছে মার্কেটের প্রবেশপথে।
থানা-পুলিশের পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে। মার্কেট এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণেও ট্রাফিক পুলিশের সাথে কাজ করছে নিরাপত্তা কর্মীরা। প্রতিটি দোকানেই হাল ফ্যাশনের বর্ণিল পোশাকের সমাহার। দেশে তৈরি আধুনিক ডিজাইনের পোশাকের পাশাপাশি রয়েছে বিদেশি পোশাক। বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারত, চীন, থাইল্যান্ড থেকে আসা পোশাক রয়েছে মার্কেটগুলোতে। শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রী-পিস, হিজাবের পাশাপাশি শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি-পায়জামা, শিশুদের পোশাকের সমাহার প্রতিটি দোকানে। এর পাশাপাশি প্রসাধনী, জুতা-স্যান্ডেল থেকে শুরু করে ঈদে প্রয়োজনীয় সবধরণের সামগ্রী রয়েছে মার্কেট, শপিংমলে।
মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটের ব্যবসায়ীরা সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। প্রতিটি দোকানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে খন্ডকালীন বিক্রয় কর্মীর। স্মার্ট এসব বিক্রয় কর্মীরা ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে প্রস্তুত। ব্যবসায়ীরা নানা বয়সী নারী-পুরুষের জন্য দেশি বিদেশি ফ্যাশনেবল পোশাকের সংগ্রহ নিয়ে এসেছেন। এবারের ঈদ যেহেতু গ্রীষ্মে তাই সুতি কাপড়ের পোশাকের চাহিদাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া এর বাইরে বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি, পাঞ্জাবী, থ্রি-পিস, হাল আমলের তরুণীদের পছন্দের টপস, সারারা-গারারা এবং গাউন ড্রেসও সংগ্রহে রেখেছেন অনেকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ বাজার সামনে রেখে শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন। তবে এখনো ঈদের বেচাবিক্রি ওই অর্থে শুরু হয়নি। ব্যবসায়ীরা এখন ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন। এছাড়া এবার যেহেতু করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, তাই ব্যবসায়ীরা মানসিকভাবে অনেক বেশি চাঙা। তাদের প্রত্যাশা, গত দুই বছরের মন্দা এবার কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
নগরীর নিউমার্কেট, রেয়াজুদ্দিন বাজার, টেরীবাজার, তামাকুমণ্ডি লেইন, জহুর হকার্স মার্কেট, চকবাজারের মতি টাওয়ার, গুলজার টাওয়ার, বালি আর্কেড, কেয়ারি ইলিশিয়াম, জিইসি মোড়ের সেন্ট্রাল প্লাজা, স্যানমার ওশ্যান সিটি, ইউনেস্কো সিটি সেন্টার, মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, কল্লোল সুপার, ষোলশহর ফিনলে স্কয়ার, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, লালখান বাজারের আমিন সেন্টার, কাজির দেউড়ির ভিআইপি টাওয়ার, আগ্রাবাদের আখতারুজ্জামান সেন্টার, সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট, লাকী প্লাজা, সাউথল্যান্ড সেন্টার, চৌমুহনি মার্কেট, ইপিজেডের ঝনক প্লাজা, স্টিল মিলের মহাজন টাওয়ার, বন্দরটিলার আলীশাহ প্লাজাসহ নগরীর ছোট বড় শতাধিক মার্কেট, বিপণি কেন্দ্র ও শপিংমলে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দিনে এবং ইফতারির পর ক্রেতারা মার্কেটে আসতে শুরু করেন। তবে এখনও ক্রেতাদের ভিড় তেমন নেই। কেনাকাটাও তেমন জমেনি। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ক্রেতার অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, যারা ভিড় পছন্দ করেন না তাদের অনেকে এখন নিরিবিলি কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। এজন্য মার্কেটগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে পনেরো রমজানের পর ক্রেতারা মার্কেটমুখী হবেন। তখন বাজার জমে উঠবে এমন প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।
নগরীর টেরীবাজার ও রেয়াজুদ্দিন বাজারের থান কাপড়ের দোকানগুলোতে রোজার আগেই কেনাকাটা জমে উঠে। অনেকে সেখান থেকে পছন্দের কাপড় কিনে পোশাক তৈরি করছেন। নগরীর খলিফাপট্টিসহ দর্জি পাড়াগুলোতে এখন ধম ফেলানোর ফুসরত নেই। রাত-দিন কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত দর্জিরা। অভিজাত শপিংমলের পাশাপাশি নগরীর হকার্স মার্কেট এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাতগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ছে। মূলত হতদরিদ্র মানুষেরাই ফুটপাতের পসরা থেকে ঈদের কেনাকাটা সারেন।
মহানগরীর বাইরে জেলার উপজেলা সদরগুলোতেও অত্যাধুনিক শপিংমল গড়ে উঠেছে। এসব শপিংমলেও ঈদ বাজারের প্রস্তুতি চলছে। তবে অনেকেই পছন্দের পোশাকটি কিনতে মহানগরীর বড় বড় শপিংমলগুলোতে ভিড় করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। মার্কেটে হরেক পণ্য সাজিয়ে রাখলেও মহানগরীর যানজট নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। ঈদ বাজার জমে উঠতেই নগরীতে যানজট আরও তীব্র হবে এমন আশঙ্কা করছেন তারা। তবে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঈদ বাজারে যানজট এবং ক্রেতাদের নিরাপত্তার যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এবারের ঈদের আগে অর্থনীতিতে মন্দা অবস্থা নিয়েও কিছুটা দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ী দোকান মালিকেরা। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং নিন্মবিত্তের অবস্থা শোচনীয়। এ অবস্থায় ঈদবাজার কতটা জমে উঠবে তা নিয়েও সংশয়ে অনেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।