Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ভারতে কেন সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়িয়ে পার পাওয়া যায়

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৪ এএম

ভারতে গত ১০ এপ্রিল যে রাম নবমী পার্বণ হয়ে গেল তার আগের বেশ কয়েকদিন ধরে একের পর এক এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যাতে নতুন করে প্রমাণিত হয়েছে ঘৃণা ছড়িয়েও দেশটিতে সহজে পার পাওয়া যায়।

রাম নবমীকে কেন্দ্র করে নেতাদের মুখে চরম ঘৃণাসূচক বিবৃতি শোনা গেছে। কয়েকটি রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা পর্যন্ত হয়েছে। মানুষ মারা গেছে। দক্ষিণের হায়দ্রাবাদ শহরে, কট্টর হিন্দু দল বিজেপির একজন এমপি - যাকে ২০২০ সালে ঘৃণা ছড়ানোর দায়ে ফেসবুকে নিষিদ্ধ করা হয় - নিজের গলায় একটি গান গেয়েছেন। সেই গানের কথা ছিল - যে মানুষ হিন্দু দেবতা রামের নাম করবে না, তাকে ভারত থেকে বের করে দেওয়া হবে। তার কয়েকদিন আগে, অনলাইনে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় উত্তর প্রদেশ রাজ্যের একজন হিন্দু ধর্মগুরু প্রকাশ্যে মুসলিম নারীদের অপহরণ এবং ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছেন। ঐ ভিডিও নিয়ে হৈচৈ শুরু হলে এক সপ্তাহ পর পুলিশ একটি মামলা দায়ের করে এবং বুধবার ঐ গুরুকে আটক করে।

প্রায় একই সময়ে ইয়াতি নরসিংঘানান্দ সরস্বতী নামে আরেক বহুল পরিচিত একজন হিন্দু ধর্মগুরু রাজধানী দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হিন্দুদের হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার ডাক দেন। এই গুরুর বিরুদ্ধে আগেও এমন ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে এবং তিনি সেই মামলায় এখন জামিনে রয়েছেন। পুলিশ বলেছে যে অনুষ্ঠানে সরস্বতী ভাষণ দিয়েছে তার কোনো অনুমতি ছিলনা এবং তিনি তার জামিনের শর্ত ভেঙ্গেছেন। কিন্তু তারপরও ঐ গুরুর বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

ভারতে অনেক দিন ধরেই প্রকাশ্যে এমন সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বিবৃতি দেওয়া একটি সমস্যা। ১৯৯০ সালে, ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের কিছু মসজিদে হিন্দু বিরোধী ঘৃণাসূচক বক্তব্য দেয়ার পর সেখানে সহিংসতা শুরু হয় যার পরিণতিতে দলে দলে হিন্দুরা কাশ্মীর ছাড়ে। ঐ একই বছর বিজেপি নেতা লাল-কৃষ্ণ আদভানি অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ চত্বরে রাম মন্দির নির্মাণের আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর দলবদ্ধ হিন্দুরা কয়েকশ বছরের পুরনো মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেয় যার পরিণতিতে ব্যাপক হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ানো ও বক্তব্য বিবৃতি দেয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। এমনকি ছোটোখাটো রাজনীতিকদের কথাবার্তাও সোশ্যাল মিডিয়া এবং টিভি চ্যানেলগুলোর সুবাদে ব্যাপক প্রচার পাচ্ছে, এবং এসব অখ্যাত লোকও সহজে নিজেদের পরিচিত করে তুলতে তার সুযোগ নিচ্ছে - বিবিসিকে বলছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নীলাঞ্জন সরকার। ফলে, তিনি বলছেন, ঘৃণাসূচক বক্তব্য বিবৃতির ‘বিরতিহীন বিস্তার ঘটছে।’ ‘আগে সাধারণত নির্বাচনের আগে এসব ঘৃণাসূচক কথাবার্তা শোনা যেত। কিন্তু এখন মিডিয়া জগতের নতুন যে চালচিত্র তাতে রাজনীতিকরা বুঝতে পেরেছেন যে একটি রাজ্যে এ ধরনের বক্তব্য দিলে অন্য রাজ্যেও নিজের দলের লোকজনের সুবিধা হবে,’ বলছেন সরকার।

টিভি নিউজ চ্যানেল এনডিটিভি ২০০৯ সালে ‘ভিআইপি হেট স্পিচ’ নামে একটি কর্মসূচি নেয় যেখানে তারা বড় বড় রাজনীতিকদের - মন্ত্রী, এমপি - ঘৃণাসূচক বক্তব্য-বিবৃতির ওপর নজর রাখে। জানুয়ারি মাসে এনডিটিভি জানায়, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রবণতা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বেশ কজন শীর্ষ বিজেপি নেতা - যাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও রয়েছেন - এসব সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক বিবৃতি দিয়েও সহজে পার পেয়ে গেছেন। বেশ কজন বিরোধী রাজনীতিকও - যেমন লোকসভার এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এবং তার ভাই আকবর উদ্দিন ওয়াইসি - ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে একাধিকবার অভিযুক্ত হয়েছেন। ২০১২ সাল থেকে আকবর উদ্দিন ওয়াইসির বিরুদ্ধে এরকম দুটো মামলা হয় যেগুলো থেকে বুধবার তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন ঘৃণা ছড়ানোর প্রবণতা সমাজে যখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়, তার পরিণতি ভয়াবহ। ‘যখন পরিবেশ পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে ওঠে, মানুষ যখন চরম ভীতি-উসকানির মধ্যে জীবনযাপন করতে থাকে, তখন সে তার স্বাভাবিক জীবন-যাপন, জীবিকা থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে,’ বলেন সিরকার। সেটাই, তার মতে, কোনো সমাজ এবং রাষ্ট্রের ‘সবচেয়ে বড় ক্ষতি।’ সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ