Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ মৌসুম মাহে রমজান খুৎবা পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০২২, ৫:০৫ পিএম

তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ মৌসুম মাহে রমজান। এ মাসটি বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ উপঢৌকন। তাকওয়া অর্জনকারী ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য করা, কখনো নাফারমানি না করা এবং আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। তাকওয়ার এ শিক্ষা আমরা রমজানের মাধ্যমেই অর্জন করতে পারি। আজ রমজানের প্রথম জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। প্রথম জুমার নামাজে অংশ নিতে সকাল ১১টা থেকে বিভিন্ন এলাকার মুসল্লিরা বায়তুল মোকাররমে জড়ো হতে থাকেন। নগরীর অন্যান্য মসজিদেও জুমার নামাজে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। নগরীর মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজমেও জুমার নামাজে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন আজ জুমার বয়ানে মাহে রমজানের গুরুত্ব ও মহত্ব তুলে ধরে বলেন, কোরআন নাযিলের মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। আমাদের দেশের সন্তানরা বর্হিবিশ্বে কোরআন তেলাওয়াতে প্রথম স্থান অর্জন করছে। খতিব বলেন, আল্লাহ বলেছেন, রোজা আমার জন্য আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমি নিজেই দিবো। রমজানের পরনিন্দা, গীবত এবং অপরের দোষ চর্চা পরিহার করতে হবে। জান্নাত লাভ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইতে হবে। সঠিক হিসাবের ভিত্তিতে যাকত আদায় করতে হবে। খতিব বলেন, পহেলা বৈশাখ আসন্ন। মাহে রমজানের মধ্যে পহেলা বৈশাখ নিয়ে অযথা মাতামাতি পরিহার করতে হবে। কথিত পন্তা ইলিশের সংস্কৃতি পরিহার করুন। পন্তা ইলিশের টাকা গরিব অসহায়দের মাঝে বিতরণ করুন। যদি একান্তই পান্তা ইলিশ খেতে হয় তা’হলে ঘরে বসে পরিবার নিয়ে সেহরির সময়ে পান্তা ইলিশ খান। খতিব বলেন, হিজাব নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের দেশেও মাঝে মধ্যে হিজার নিয়ে বাধার সৃষ্টি করা হয়। তিনি বলেন, মুসলমান নারীদের হিজাব পরিধান ধর্মীয় বিধান। হিজাব নিয়ে কোনো প্রকার বাধা বা নিষেধাজ্ঞা জারি করা যাবে না এব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।
ঢাকার মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, রমজান মাস তাকওয়া অর্জন ও অনুশীলনের মাস। তাকওয়ার গুণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। কারণ মুত্তাকিরাই আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে "নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানের অধিকারী হবে সে, যে সর্বাধিক পরহেযগার (মুত্তাকি)" সূরা হুজরাত, আয়াত নং-১৩। এই মাস গোনাহের পঙ্কিলতায় নিমগ্ন আত্মার পরিশোধনের মাস। আমলের দুর্বল চাকাকে সবল করার মাস। খতিব বলেন, রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের বারিধারায় সিক্ত হওয়ার মাস। এই মাসকে আল্লাহ তায়ালা খুব বেশি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জনের ভরা বসন্ত বানিয়েছেন। এ মাস থেকেই মুমিন সামনের দিনগুলোর ঈমানি প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয় করে। এই মাসের প্রতিটা মুহূর্ত সীমাহীন কল্যাণ ও বরকত দ্বারা পরিপূর্ণ। কারণ, এই মাস আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য অনেক বড় নেয়ামত ও গনীমত স্বরূপ। নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, রমজান মাস মুমিনের জন্য গনীমত এবং মুনাফেকের জন্য ক্ষতির কারণ। (মুসনাদে আহমদ ২/৩৩০)। এই মাস আখেরাতের ব্যবসার মৌসুম। যে ব্যবসার মাধ্যমে মানুষ আখেরাতের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে। যে ব্যবসার মূল লক্ষ্য হল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতুন নাঈম। যে ব্যবসায় ব্যর্থ হলে অনন্তকালের জন্য আজাব ও গজবে ভুগতে হবে। কোরআন নাযিলের এই মাসে বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত করুন। আন্তরিক প্রশান্তি মিলবে এবং ডিপ্রেশনে ভুগতে হবে না।
খতিব আরও বলেন, পহেলা বৈশাখ সমাগত। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলা বর্ষবরণের নামে আমাদের অনেকেই বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের পর মদীনায় গিয়ে দুটি উৎসব বন্ধ করেছিলেন। একটি হচ্ছে, বছরের প্রথম দিন উদযাপন বা "নওরোজ"। অপরটি ছিল "মিহিরজান"। এ উৎসব দুটির বিপরীতে চালু হয় মুসলমানদের দুই ঈদ। কারণ, নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন পালন করার রীতি ইসলামে নেই। এটা পারস্যের অগ্নিপূজকদের অনুকরণ। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদেরই দলভুক্ত।” তাই যে কোন নওরোজ চাই সেটা থার্টি ফাস্ট নাইট হোক কিংবা পহেলা বৈশাখ, তা পালন করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই আসুন, রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় বর্ষবরণের নামে সব ধরনের বেহায়াপনা ও গোনাহের কাজ পরিত্যাগ করি। শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় নববর্ষের দিবস-রজনী অতিবাহিত করি। একটি বছরের বিদায়লগ্নে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করি, বছর তো শেষ, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা যে মহান উদ্দেশ্যে (তাঁর ইবাদত-বন্দেগির জন্য) আমাকে এই দুনিয়ায় পাঠালেন, সে পথে কতটুকু হেটেছি? সে পথে আমার প্রাপ্তি কতটুকু? হযরত ওমর (রা.) একবার মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, হিসাব চাওয়ার আগে নিজের হিসাব করে নাও, তোমার কাজ পরিমাপ করার আগে নিজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও। (তিরমিজি)। রমজানের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা যাবতীয় ভোগবিলাস, হিংসা-বিদ্বেষ ও সংঘাত পরিহার করে জীবনের সর্বস্তরে পরিমিতিবোধ, গোনাহ বর্জন এবং ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের মাধ্যমে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন। আমীন।
ভোলা সদর নিজাম হাসিনা ফাউন্ডেশন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা এ কে এম মুশাররফ হুসাইন আজ জুমার বয়ানে বলেন, তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ মৌসুম মাহে রমজান। এ মাসটি বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ উপঢৌকন, কেননা একজন তাকওয়া অর্জনকারী ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য হলো,তিনি সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য করবে, কখনো নাফারমানি করবে না, সর্বদা আল্লাহ তায়ালাকে স্মরন করবে, কখনো ভূলে যাবে না, সর্বদা আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, কখনো অকৃতজ্ঞ হবে না। তাকওয়ার এ শিক্ষা আমরা রমজানের মাধ্যমেই অর্জন করতে পারি। এছাড়া আরো কিছু গুন আমরা অর্জন করতে পারি, যেমন জবানকে সংযত রাখা, সর্বদা তসবিহ তাহলীল জিকিরের মাধ্যমে সময় কাটানো, অসহায় মানুষদের মাঝে খাদ্য পরিবেশন, রোজাদারদের ইফতারি করানো, এছাড়া শেষ রজনীতে মহান রবের দরবারে সেজদায় পড়ে চোখের পানি ফেলে ক্রন্দন করে গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ মুত্তাকিদের জন্য আল্লাহ তায়ালা করে দিয়েছেন। আল্লাহ সবাইকে রমজানে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
ঢাকার মিরপুর শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি আজ জুমার বয়ানে বলেন, রোজার উদ্দেশ্য হলো জীবনের সকল ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর আদেশ পালন এবং নিষিদ্ধ কাজ বর্জনের জন্য তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ ভয় অর্জন করা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ১৬ ঘণ্টা মানবিক চাহিদার একেবারে মৌলিক ও প্রয়োজনীয় বস্তু থেকে বিরত থাকতে হয়। অথচ রোজাদারের ঘরে খাবার ও পানীয় সামগ্রী বিদ্যমান রয়েছে। এগুলো থেকে শুধু মহান আল্লাহর ভয় অন্তরে থাকার কারণে বিরত থাকা সম্ভব হয়। এভাবে রমজান মাসের ৩০ দিন চেষ্টা চলতে থাকে। সব ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে সারা বছর মানুষকে মহান আল্লাহর ভয়ের ভিত্তিতে বিরত রাখার জন্যই রোজা ফরজ করা হয়েছে।
খতিব বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তুমি রোজা রাখবে তখন তোমার কর্তব্য হলো " তোমার কান, চোখ, মুখ, হাত, পা এবং সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর অপছন্দীয় কাজ থেকে বিরত রাখবে" (কাশফুল মাহজুব)। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যা আচরণ থেকে বিরত হয় না, তার ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকায় আল্লাহর কিছু যায় আসে না, এ পরিস্থিতিতে রোজার কোনো সওয়াব হবে না। (সহিহ বুখারী, হাদিস:১৯০৩)।
খতিব বলেন, রোজা রাখার দ্বারা দৈহিক সত্তার উপর নৈতিক সত্তার পরপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। মানুষের স্বভাবে নম্রতা, বিনয়, ভদ্রতা-শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ, সহনশীলতা, মায়া-মমতা ও ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। এছাড়া রোজার মাধ্যমে রুহানী শক্তি তথা অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচিত হয়। অসভ্যতা ও পশুত্বের স্বভাব থেকে মানুষ মুক্তি লাভ করে। আল্লাহ সবাইকে নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
ঢাকার নিউমার্কেট গাউসিয়া মার্কেট জামে মসজিদ খতিব মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া আজ জুমার বয়ানে বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমজানে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) যখন তাঁর সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁর সাথে একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কোরআন শোনাতেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন। (সহীহ বুখারী- ১৯০২)। নিজের প্রিয় ও উত্তম বস্তু দান করার প্রতি উৎসাহ দিয়ে মহাগ্রন্থ আল কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, তোমরা কস্মিণকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না কর। আর তোমরা যদি কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন। (সূরা আলে ইমরান-৯২)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা ২৬১)। পবিত্র কোরআনে নবীর প্রতি নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাদেরকে বলে দিন যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তারা নামাজ কায়েম রাখুক এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করুক ঐদিন আসার আগে, যেদিন কোন বেচা কেনা নেই এবং বন্ধুত্বও নেই। (সূরা ইবরাহীম-৩১)।
খতিব বলেন, আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন কোন মানুষ মারা যায়, তখন তার কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি জিনিস ব্যতীত; এক. সাদকাহ জারিয়াহ দুই. যে জ্ঞান দ্বারা উপকার পাওয়া যায় তিন. সৎ সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’’ (মুসলিম ১৬৩১, তিরমিযী ১৩৭৬)। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান-১৩৪)। খতিব বলেন, কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান খয়রাত কর, তবে তা কতইনা উত্তম। আর যদি দান খয়রাত গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্যে আরও উত্তম। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দিবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খুব খবর রাখেন। (সূরা বাকারা-২৭১)। আল্লাহ সবাইকে নেক আমলে সম্পৃক্ত থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।
গুলিস্থানস্থ ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব আল্লামা মুহিউদ্দীন রাব্বানী জুমার বয়ানে বলেন, আরবি মাসসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ হচ্ছে মাহে রমজান মাস। বছরের বাকি এগার মাস অপেক্ষা অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য অপরিসীম। দুনিয়ার কোনো সম্পদের সঙ্গে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না। রমজানের আগমনে বিশ্বনবি অনেক আনন্দিত হতেন। সাহাবাদের উদ্দেশ্যে এভাবে ঘোষণা দিতেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের দরজায় বরকতময় মাস রমজান এসেছে।’ তারপর রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরআনের ঘোষণা দিয়ে এ মাসের বিশেষ ফযিলত বর্ণনা করতেন। আর তা ছিল এমন ’হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা রাখা ফরজ (বাধ্যতামূলক) করা হয়েছে। যেভাবে তোমাদের আগের লোকদের (নবি-রাসূলের উম্মতের) ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)। খতিব বলেন, এ মাসেই মানুষ ও জিন জাতির মুক্তির সনদ কোরআন মজীদ একত্রে লাওহে মাহফূয থেকে প্রথম আসমানে বাইতুল ইযযতে অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সর্বপ্রথম এ মাসেই ওহী অবতীর্ণ হয়। কোরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে (তরজমা) ‘রমজান মাসই হল সে মাস যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। (সূরা বাকারা ১৮৫)। অন্য এক হাদীসে এ মাসের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে যে, ‘রমজান মাসের শুভাগমন উপলক্ষে জান্নাতের দরজাসমুহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৭৯/১)। হাদীস শরীফে এসেছে ‘আল্লাহ তায়ালা প্রত্যহ ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমদ হাদীস ২১৬৯৮)। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের ফযিলত ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো যথাযথভাবে পালনের তৌফিক দান করুন। আমিন।

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, রমজান মাসের গুরুত্ব, ফযিলত ও মহাত্ম অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশী। মহাগ্রন্থ কোরআনুল কারিম মুসলিম মিল্লাতের মুক্তি ও কল্যাণের লক্ষ্যে যেমন গাইড লাইন তদ্রুপ রমজানের রোজাও মুসলিমদের জন্য মুত্তাকি ও পরহেজগারি অর্জনের বিরাট মাধ্যম। রোজাদারের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে অফুরন্ত নেয়ামত ও বিশেষ পুরুস্কারের ঘোষণা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পার। (সূরা বাকারা, আয়াত নং ১৮৩)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোজাদারের জন্য দু’টি সময় বড় আনন্দ ও খুশির, একটি ইফতারের সময় আর একটি তার মহান প্রভু আল্লাহর তায়ালার দিদার তথা সাক্ষাৎ লাভের সময়। (বুখারী ও মুসলিম)। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, কেয়ামতের দিন রোজাদারদের জন্য একটি বিশেষ হাউজ থাকবে, যেখানে রোজাদার ব্যতিত অন্য কারও আগমন ঘটবে না।(মুসনাদে বায্যার : ৮১১৫)। খতিব বলেন, রোজা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যেক সুস্থ, মুকীম, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং হায়েয-নেফাসমুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নারীর ওপর ফরজ। শরয়ী ওযর ব্যতিত একটি রোজাও কোন মুসলমান ইচ্ছাকৃতভাবে পালন না করলে তার জন্য সে জঘন্য অপরাধী সাব্যস্ত হবে। দ্বীনের মৌলিক বিধান লঙ্ঘনকারী ও ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারী হিসাবে গণ্য হবে এবং কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে। সিয়াম তথা রোজা ভঙ্গ কারীর সম্পর্কে হযরত উসামা (রাজি.) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম আমার কাছে দুই ব্যক্তি আগমন করেছে। তারা আমার বাহুদ্বয় ধরে এক দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে গেল। আমাকে বলল, আপনি পাহাড়ে উঠুন। আমি বললাম, আমি তো উঠতে পারব না। তারা বলল, আমরা আপনাকে উপরে ওঠতে সহজ করে দিব। আমি উপরে উঠলাম। যখন পাহাড়ের সমতলে পৌঁছলাম, হঠাৎ ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনতে পেলাম। বললাম, এসব কিসের আওয়াজ।
তারা বলল, এটা জাহান্নামীদের চিৎকারের আর্তনাদ। আমি বললাম এরা কারা ? তারা বলল এরা বে-রোজাদার। তারপর আমাকে নিয়ে এগিয়ে চলল। হঠাৎ কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদেরকে তাদের পায়ের মাংসপেশি দ্বারা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের মুখের দুই প্রান্ত ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং তা থেকে রক্ত স্বজোরে ঝরছে। আমি বললাম, এরা কারা ? তারা বলল, এরা দুনিয়াতে ইফতারের সময় হওয়ার আগেই রোজা ভেঙ্গে ফেলত। (মুসতাদরাকে হাকেম হাদীস নং : ১৬০০)। অতএব এ মাসে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ, রোজা পালন, তারাবিহ নামাজ আদায়, সাহরি খাওয়া, সময়মত ইফতার করা, অধিক পরিমানে কোরআন তিলাওয়াত, গরীব অসহায় ও দ্বীনি কাজে সহযোগীতা, বেশি বেশি দান খয়রাত, দোয়া দরুদ ও নফল সালাত আদায় করা অপরিহার্য্য এবং পরস্পরে ঝগড়া বিবাদ, গালি গালাজ, কোলহ দন্দ্ব, সমালোচনা গীবত, মাপে কম দেয়া, অন্যায় ভাবে দ্রব্য মূল্যের দাম বৃদ্ধি, বেহায়াপনা অশ্লীলতাসহ সর্ব প্রকার গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা উচিৎ। আল্লাহ আমাদের সকলকে তৌফিক দান করেন। আমিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুৎবা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ