বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পৃথিবীর প্রথম মসজিদ ও ঘর হচ্ছে কাবা ঘর। এটা শুধু মানব-দানব নয় বরং গোটা বিশ^জগতের পথ প্রদর্শক হচ্ছে পবিত্র কাবা। আল্লাহ বলেন, নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময় (সূরা ইমরান ৩:৯৬)।
গতকাল রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে খুৎবাপূর্ব আলোচনায় খতিব প্রিন্সিপাল মাওলানা খালিদ সাইফুল্লা এসব কথা বলেন। খতিব বলেন, পবিত্র কাবা ঘরের তওয়াফ, আরাফা, মীনা, মুজদালিফায় উপস্থিতি, সাফা-মারওয়ায় সাঈ, মাকামে ইব্রাহীমে সালাত আদায়, হাজারে আসওয়াদ চুম্বন, কোরবানি, জামারায় পাথর নিক্ষেপসহ একগুচ্ছ নেক আমলের যৌগিক ইবাদাতই হচ্ছে হজ। এটা ইসলামে পাঁচটি ভিত্তির একটি। ধনী মুসলমানদের উপর জীবনে একবার তা আদায় করা ফরজ। আল্লাহ বলেন, এতে রয়েছ মকামে ইব্রাহীমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে, লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। আর যে লোক তা মানে না। আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না (সূরা ইমরান ৩:৯৭)।
খতিব বলেন, একজন হাজীকে তালবিয়া পাঠ করতে হয়। লাব্বায়িকা আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক, লাব্বায়িকা লা শরীকা লাকা লাব্বায়িকা, ইন্নাল হামদা ওয়াননিয়মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শরীকা লাক। মহান আল্লাহ তা’য়ালার সামনে হাজির হওয়ার মাধ্যমে শিরক মুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেয়া, তাঁর প্রশংসা ও রাজত্বের মালিকানার ঘোষণা দেয়া। এ ইবাদাতটি মূলত মক্কা মুকাররমার সাথে সম্পৃক্ত। এটি এমন ইবাদাত যা এই পবিত্র ভূমির সাথে খাস। হযরত সালেহ ও হুদ (আ.) এ দুজন নবী ছাড়া পৃথিবীর সকল নবী রাসূলগণ এ ভূমিতে হাজির হয়েছেন। হজ আদায় করেছেন। পবিত্র বাইতুল্লাহ তথা হেরেম শরীফে নামায আদায় করলে পৃথিবীর অন্য মসজিদ বা জায়গার তুলনায় এক লক্ষ গুণ বেশি সওয়াব হয়ে থাকে। তিন মসজিদ ছাড়া অন্যকোন মসজিদে অধিক সওয়াবের আশায় সফর করার বিধান নেই। বিশ^নবী জনাবে মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম স্থান হওয়ার কারণে পবিত্র এ ভূমির মর্যাদা শীর্ষ স্থান দখল করেছে। ছোট বড় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার পাহাড় রয়েছে পবিত্র মক্কায়। এর মধ্যে হেরা পর্বত অন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে জিব্রাঈল (আ.) এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর প্রিয় বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদ (সা.) এর উপর কোরআন নাযিল করেছেন। এছাড়া জাবালে সূর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হিজরতের সময় বিশ^নবী (সা.) হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখানেও পবিত্র কোরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে। প্রিয় নবী (সা.) এর বিশেষ মুয়জিযা প্রকাশ পেয়েছে।
রাসূল (সা.) এবং ইসলামের বিশাল ইতিহাস এ নগরীর সাথে সম্পৃক্ত। এ নগরী ছাড়া দ্বীন ইসলামকে কল্পনাও করা যায় না। বিধায় এর প্রতিটি পাহাড়-পর্বত, ধূলিকণা, ময়দান, ইমারাত বিশেষ করে পবিত্র কাবার টানে ছুটে চলে মুমিন মুসলমান দলে দলে, এবং মহান আল্লাহর রহমত ও বরকত অর্জন করে ধন্য হয়। হিজরতের মহান ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালা মদীনাতুল মুনাওয়ারার মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ জায়গায় হিজরতে জন্য তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে: আরও বলুন: পালনকর্তা, আমাকে কল্যাণকর ভাবে নামিয়ে দাও, তুমি শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী (সূরা মু’মিনুন ২৩:২৯)।
সূরা আহযাব: ৬০, মুনাফিকুন : ০৮, তওবা : ১০১, ১২০ মোট ৪টি আয়াত ও অসংখ্য হাদীসে মদীনার নাম সরাসরি উল্লেখ আছে। স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা নিজে এর নামকরণ করেছেন।
প্রিয় নবী (সা.) এর রওজা মুবারকের যেখানে তিনি শায়িত আছেন সে জায়গাটুকুর মর্যাদা পবিত্র কাবার থেকেও বেশি। পৃথিবীর সকল ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত। পবিত্র কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ সূরা ও আয়াতগুলো এ ভ‚মিতেই অবতীর্ণ হয়েছে। এখানে নবী (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত মসজিদে নববী রয়েছে। যেখানে নামায আদায় করলে অন্য মসজিদের তুলনায় এক হাজার গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। রাসূল (সা.) এর রওযা ও মেম্বরের মধ্যে যায়গাটুকু জান্নাতের অংশ। এ মদীনা নবী (সা.) এবং খোলাফায়ে রাশেদিনের খেলাফত পরিচালনার রাজধানী ছিল। সারা বিশে^ যখন ইসলাম থাকবে না তখন সাপ যে রকম গর্তে প্রবেশ করে ইসলাম কিয়ামতের পূর্বে মদীনায় ফিরে যাবে। আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই ঈমান মদীনার দিকে ফিরে আসবে যেমনিভাবে সাপ তার গর্তে ফিরে আসে, (সহীহ বুখারী)। মদীনায় মহামারি ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। রাসূল (সা.) বলেন, ‘মদীনার প্রবেশ দ্বারসমূহে ফেরেশতারা প্রহরায় নিযুক্ত আছেন, এতে মহামারি ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না, (সহীহ মুসলিম)।
পবিত্র এ ভূমিতে মসজিদে কোবা, মসজিদে কিবলাতইনসহ রাসূল (সা.) এর স্মৃতিধন্য অসংখ্য মসজিদ রয়েছে। রয়েছে ওহুদ, বদর, খন্দকসহ অসংখ্য যুদ্ধের স্মৃতি। রয়েছে নবী (সা.) এর হাতের স্পর্শে বরকতপূর্ণ স্থান। সাহাবী, নবী পতœীদের পুণ্যময় স্মৃতি ও বরকত। রয়েছে জান্নাতুল বাকি, যেখানে অসংখ্য সাহাবী ওলীদের পবিত্র কবর। যা যিয়ারতের মাধ্যমে রূহানী দোয়া হাসিল করে থাকে কোটি কোটি মুমিন মুসলমান। বিশেষ করে নবী (সা.) এর রওজা পাকে সালাম প্রদান ও যিয়ারত। হাদীসে এসেছে নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার কবর যিয়ারত করল, তার উপর আমার সুপারিশ ওয়াজিব হলো (বায়হাকি)। দুনিয়া আখিরাতের মুক্তির জন্য পবিত্র মক্কা মদীনায় যাওয়া মুসলমানদের জন্য একান্ত কর্তব্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।