পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পৃথিবীর শুরুলগ্ন থেকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতির কল্যাণে অফুরন্ত নিয়ামত নাযিল করে আসছেন, যা পরিমাপ করা অসম্ভব। আমাদের চারপার্শ্বে যা কিছু দেখতে পাই সবই আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ। ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র থেকে বৃহত্তর সকল বস্তু দ্বারাই মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে। দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সকল নিয়ামতের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। এতো নিয়ামত ও অনুগ্রহের বিনিময়ে রাব্বুল আলামীন বান্দাগণের নিকট চেয়েছেন কেবল আনুগত্য, তাঁর সমীপে নিজেকে উৎসর্গের মাধ্যমে পূতপবিত্রা অর্জন করা। আল্লাহ পাকের দেয়া সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আমরা কি যথাযথভাবে শুকরিয়া আদায় করতে পারছি? আল্লাহ কি আমাদের আচরণে সন্তুষ্ট? গতকাল রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে জুম্মার পূর্ব আলোচনায় খতিব মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন।
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া আদায়ের ব্যাপারে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে তিনি পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াত তুলে ধরেন, তোমরা আমাকে স্মরণ কর; আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর অকৃতজ্ঞ হয়ো না।” (সূরা বাকারা ১৫২ আয়াত), “তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দান করব, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর।” (সূরা ইব্রাহীম ৭ আয়াত)। খতিব মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বলেন আমরা আমাদের কৃতকর্মের দরুণ ধীরে ধীরে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্রমশই দুনিয়াবী আজাব ও গজবে নিপতিত হচ্ছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনের সূরা আর-রহমানে তাঁর কতিপয় নিয়ামতের উদাহরণ উপস্থাপন করে অসংখ্যবার বলেছেন “তোমরা আমার কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?” তবুও আমাদের হুঁশ ফিরছে না। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার মিছে মায়ার জালে নিজেদের আবৃত করে ইবলিসের পদাঙ্ক অনুসরণের মাধ্যমে আখিরাতে চিরস্থায়ী জাহান্নামের বাসিন্দা বনে যাচ্ছি। কিয়ামতের দিন আল্লাহ যখন বলবেন তোমাদের কি সতর্ক করা হয়নি? তোমরা কি আমার বাণীসমূহ পড়নি? তোমরা কি আমার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত আজাব ও গজব দেখনি? তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের পরিণতি অবলোকন করনি? একটু ভাবুনতো তখন কি জবাব দিবেন?
যুগে যুগে অকৃতজ্ঞ, আল্লাহর ক্ষমতা-নিয়ামত অস্বীকারকারী ও পাপাচারে লিপ্ত গোষ্ঠীদের করুন পরিণতির কথা তুলে ধরে খতিব বলেন, আমরাও সে পথেই হাঁটছি। আল্লাহ বড় কোন গজব নাযিলের পূর্বে ছোট ছোট গজব দিয়ে মানুষকে সতর্ক করেন, যদি তা মানুষ অনুধাবন করে ন্যায়ের পথে ফিরে আসে তাহলে তাঁদের উপর আল্লাহ অফুরন্ত রহমত নাযিল করেন। আর যদি অনুধাবন না করে পাপাচার অব্যাহত রাখে সেক্ষেত্রে এমন আজাবে নিপতিত করেন যা থেকে পরিত্রাণের কোন পথ অবশিষ্ট থাকে না। বর্তমানে দুনিয়ার যে দিকে তাঁকাবেন কেবল হাহাকার, বিপদ, আজাব, গজব, অশান্তিতে জনজীবন অতিষ্ঠ। মনে করবেন না এগুলো কেবল প্রাকৃতিক বিষয়। বরং এসব আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তষ্টির বহিঃপ্রকাশ। ভুলে যাবেন না আল্লাহর রহমান ও রহিম নামের পাশাপাশি আরো একটি নাম রয়েছে তা হলো “কাহহার”।
এখনও সময় আছে আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় ধরণের কোন গজব ও আজাব আসার পূর্বেই আমাদের ইসলামমূখী হওয়া উচিত। আল্লাহর নিয়ামতের যথাযথ ব্যবহার ও শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে নিজেদের আল্লাহর রহমতের চাদরে আবৃত করা উচিত। আপনি যত বড় ক্ষমতাশীল হননা কেন, যত নিরাপত্তা বলয়ের মাঝে থাকেন না কেন অকৃতজ্ঞ হলে আজাব থেকে কখনই পরিত্রাণ পাবেন না।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন জুমার বয়ানে বলেন, আমাদের জীবন মরণ সব কিছুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহপাক মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সম্মানিত করে গোটা মাখলুকাতকে মানুষের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তার দোস্ত মহানবী (সা.) কে সিদরাতুল মুনতাহা পাড় করে তার দিদারে নিয়ে গেছেন। এই বিরল সম্মান আর কাউকে দেয়া হয়নি। খতিব বলেন, দুনিয়া হলো পরকালের জমিন। দুনিয়া থেকেই আখেরাতের সম্বল যোগাড় করে নিতে হবে। অন্যায়ভাবে কাউকে কষ্ট দেয়া কারো ওপর জুলুম করা যাবে না। অন্য সম্প্রদায় বা সংখ্যালঘুদেরকেও কষ্ট দেয়া যাবে না। এমনকি পশু পাখিকেও কষ্ট দেয়া যাবে না। আজ-কাল কিছু হলেই মানুষ লাঠি-সোটা নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে। ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের আচরণ মোটেই উচিৎ নয়। খতিব বলেন, কিয়ামতের দিন পেশী শক্তি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মানুষের প্রতি এহছান করা হলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ আরশের নীচে ছায়া দান করবেন। আল্লাহ সবাইকে দ্বীনের ছহী বুঝ দান করুন। আমিন।
ঢাকার শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি জুমার বয়ানে বলেন, গত ৪১ বছরের মধ্যে এবারের বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। মারাত্মক অনাবৃষ্টির কারণে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকে নেমে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাই খাদ্য উৎপাদনে দীর্ঘ মেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে। এটি আমাদের মানবজাতির অপকর্মের কুফল। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে "স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। মহান আল্লাহ তাদেরকে অপকর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।" (সূরা রূম, আয়াত ৪১)। সুতরাং, মহান আল্লাহর রহমতের বৃষ্টির জন্য আমাদের কোরআন ও হাদিসে উল্লেখিত করণীয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
গোটা জাতি নিজেদের অপকর্ম থেকে ফিরে আসার জন্য মহান আল্লাহর কাছে তাওবা ইস্তেগফার করবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে "তোমরা মহান পালনকর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদেরকে মুষলধারে বৃষ্টি দান করবেন। তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্তদি বাড়িয়ে দিবেন। তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং নদীনালা প্রবাহিত করবেন।" (সূরা নুহ, আয়াত ১০-১২)।
খতিব বলেন, বৃষ্টির জন্য মসজিদে মসজিদে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, "আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিন খুৎবা দিচ্ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে। আপনি আল্লাহর নিকট দু'আ করুন। তিনি যেন আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। তিনি তখন দু'আ করলেন। ফলে এত অধিক বৃষ্টি হলো যে, আমাদের নিজ নিজ ঘরে পৌঁছতে পারছিলাম না। এমনকি পরের জুমা পর্যন্ত বৃষ্টি হতে থাকলো। আনাস (রা.) বলেন, তখন সে লোকটি অথবা অন্য একটি লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি দু'আ করুন, আল্লাহ যেন আমাদের উপর হতে বৃষ্টি সরিয়ে নেন। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে আল্লাহ! আমাদের আশেপাশে, আমাদের উপর নয়। আনাস (রা.) বলেন, আমি দেখতে পেলাম, মেঘ ডানে ও বামে পৃথক হয়ে বৃষ্টি হতে লাগলো, মদিনাবাসীর উপর বর্ষন হচ্ছিল না।" ( সহিহ বুখারি, ১০১৫)
খতিব বলেন, বৃষ্টির জন্য দু'রাকাত ইস্তিস্কার নামায আদায় করা। আব্বাদ ইবনে তামীম (রা.) তার চাচা থেকে বর্ণনা করেনঃ "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির জন্য দু'আ করলেন। অতঃপর তিনি দু'রাকাত সালাত আদায় করলেন এবং চাদর উল্টিয়ে নিলেন।" (সহিহ বুখারী, ১০২৭)
আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন এক বেদুইন জুম'আর দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! অনাবৃষ্টিতে পশুগুলো মারা যাচ্ছে, মানুষ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'আর জন্য দু'হাত উঠালেন। লোকজনও দু'আর জন্য আল্লাহর রাসূলের সঙ্গে হাত উঠিয়ে দু'আ করতে লাগলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা মসজিদ হতে বের হবার পূর্বেই বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেল, এমন কি পরবর্তী জুমা পর্যন্ত আমাদের উপর বৃষ্টি হতে থাকল।" (বুখারি শরিফ, ১০২৯)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।