পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
যুক্তরাষ্ট্রের বহুল আলোচিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ। এ নির্বাচনে মার্কিনীরা তাদের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবেন। অবশ্য ভোট গ্রহণের দিক দিয়ে এটি ৫৮তম নির্বাচন। এই সঙ্গে মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের কিছু পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ঐতিহ্যগতভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় প্রধান দুই দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও রিপাবলিকান দলের মধ্যে। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না, দুই দলের প্রার্থী যথাক্রমে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে জোর লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন নাগরিকরা এই দু’জনের মধ্যে একজনকে পরবর্তী চার বছরের জন্য তাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করবেন। নির্বাচনের প্রচারণার ধরন ও প্রকৃতি থেকে প্রতীয়মান হয়েছে, তারা এই দু’জনের মধ্যে কাকে বেছে নেবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে তাদের অনেক চিন্তা-ভাবনা ও হিসাব-নিকাশ করতে হয়েছে। সর্বশেষ বিভিন্ন জরিপে হিলারি ক্লিনটন ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে কয়েক পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। এতেই শেষ কথা বলা যাবে না। ভোটের পর ফলাফল ঘোষণার মধ্য দিয়েই দুই প্রার্থীর অবস্থান জানা যাবে। এই নির্বাচনে ভোট দেবেন মোট ১৪ কোটি ৬৩ লাখ রেজিস্টার্ড ভোটার। এর মধ্যেই প্রায় আড়াই লাখ ভোটার ভোট দিয়ে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রীতি মোতাবেক, নির্ধারিত দিনের এক সপ্তাহ আগে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। এবার যে আগাম ভোট পড়েছে, গত বারের তুলনায় তা দ্বিগুণ। মার্কিনীদের কাছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সঙ্গত কারণেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে এই নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চলে। প্রচার-প্রচারণার শেষ পর্যায়ে তারা অনেকটাই শ্রান্ত-ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তারপরও তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় ঘাটতি দেখা যায় না। যেহেতু পরবর্তী চার বছর দেশের নীতি-নিয়ন্ত্রক কে হবেন তা বেছে নেয়ার জন্য এ নির্বাচন সুতরাং মার্কিনীদের কাছে এর গুরুত্ব কতটা তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। বরাবরই সারাবিশ্বের দৃষ্টিও এই নির্বাচনের প্রতি নিবদ্ধ থাকে। বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট মানে বিশ্বের প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্র শুধু প্রধান পরাশক্তিই নয়, অর্থনৈতিক দিক দিয়েও তার অবস্থান এক নম্বরে। বিশ্বের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক, স্ট্রেটেজিকসহ নানা ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে। সে কারণেই বিশ্ববাসী এ নির্বাচনকে আগাগোড়া নজরে রাখে এবং কে প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন, গুরুত্বের সাথে তা বিবেচনা করে।
অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের নির্বাচন একটু আলাদা। এই প্রথমবারের মতো ডেমোক্র্যাটিক পার্টি একজন মহিলাকে মনোনীত করেছে। এর আগে আর কখনো কোনো মহিলা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হননি। হিলারি ক্লিনটন মহিলা হলেও দক্ষ রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। তিনি দু’বারের ফার্স্ট লেডি এবং বারাক ওবামার প্রথম টার্মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি সুপরিচিত। তিনি যদি নির্বাচিত হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন মহিলা প্রেসিডেন্ট পাবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক পরিচিতি তেমন নেই। তিনি ব্যবসায়ী ও ধনকুবের হিসেবে পরিচিত। তিনি যদি প্রেসিডেন্ট হন ১৯৫০ সালে প্রেসিডেন্ট আইজেন আওয়ারের পর প্রথমবারের মতো কোনো প্রার্থীর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই হোয়াইট হাউসে পদার্পণের ঘটনা ঘটবে। যে কারণেই হোক, এবারের নির্বাচনে প্রচারণার দিকটি ছিল নেতিবাচক। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে যেভাবে কাদা ছোড়াছুড়ি হয়েছে, অতীতের কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তেমনটি দেখা যায়নি। তারা একে অপরকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণ করেছেন, মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন একে অপরের বিরুদ্ধে, পারিবারিক জীবন নিয়েও অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন। তবে তুলনামূলকভাবে হিলারি ক্লিনটন সংযম প্রদর্শন করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য ও প্রচার-প্রচারণায় বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তিনি বর্ণবাদকে উস্কে দিয়েছেন, কালোদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, কথা বলেছেন মুসলমানদের বিরুদ্ধে। মার্কিন সমাজে বর্ণবাদ ও ধর্মবিদ্বেষ থাকলেও সেটা তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন। বর্ণবাদ ও ধর্মবিদ্বেষকে নির্বাচনে জেতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোন না কেন, আগামীতে এর খেসারত মার্কিন সমাজকে দিতে হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদ্বেষমূলক ও আক্রমণাত্মক প্রচার-প্রচারণার কারণে মার্কিন সমাজের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়।
প্রেসিডেন্ট যেই হোন, যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ নীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে একটি কথা প্রচলিত থাকলেও বাস্তবে বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রভাব পড়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি। সেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও দেশ-বিদেশের নীতিতে প্রেসিডেন্টের প্রভাব থাকাই সম্ভব। এই বিবেচনা সামনে রেখে লন্ডনের সানডে টাইমস তার এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, যদি হিলারি জয়ী হন তাহলে বুঝতে হবে মার্কিন ভোটাররা নিরাপদ রাস্তা বেছে নিয়েছেন। হিলারি আগের মতোই দেশ চালাবেন। কিন্তু ট্রাম্প যদি জয়ী হন তাহলে সবকিছু বদলে যাবে। লন্ডনের গার্ডিয়ান বলেছে, হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে বিশ্বের বর্তমান স্থিতিবস্থা বজায় থাকবে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে সব ছারখার হয়ে যাবে। বিশ্ব এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হবে। সানডে টাইমস ও গার্ডিয়ানের এই অভিমতের সঙ্গে মার্কিন ও বিশ্বের সচেতন মানুষ দ্বিমত পোষণ করবেন বলে মনে হয় না। বলাই বাহুল্য, মার্কিন নাগরিকদের কাছে এবারের ভোটদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা সবদিক বিচার-বিবেচনা করে ভোট দেবেন বলেই ধারণা করা যায়। তাদের দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণতার প্রতি আস্থা রেখেই আমরা বলতে চাই, তারা ভুল করবেন না। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক। যেই প্রেসিডেন্ট হোন, আগামীতে সে সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশা রাখি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।