Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভূমি অধিগ্রহণের অর্থছাড়ে প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী নির্দেশ

| প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০২২, ১২:০৫ এএম

অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজের মূল ভিত্তিই হচ্ছে ভূমি। পদ্মাসেতুর মতো মেগাপ্রকল্পসহ নতুন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও প্রশস্তকরণ, রেলপথ, ফ্লাইওভার, বিদ্যুৎকেন্দ্র, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মতো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হাজার হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয়। এসব ভূমির বেশিরভাগই ব্যক্তি মালিকানাধীন। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সাধারণ মানুষকে বসতভিটা, এমনকি নির্ভরশীল একখন্ড আবাদি জমির স্বত্ত্ব ত্যাগ করতে হয়। তাদের ত্যাগেই একেকটি প্রকল্প বাস্তবতায়নের মধ্য দিয়ে দেশ উন্নয়নের মহাসরণিতে এগিয়ে যায়। অথচ, দুঃখজনক এই যে, শত শত বা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের সব ধাপ পেরিয়ে গেলেও অনেক ক্ষেত্রে অধিগ্রহণকৃত জমির নির্ধারিত মূল্য পেতে স্থানীয় প্রশাসনের এলএ শাখায় বছরের পর বছর ধরে ঘুরতে হয় ভূমি মালিকদের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এলএ শাখার দুর্নীতিবাজ চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে বড় অংকের ঘুষ দিয়ে সরকারের অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য ছাড় করতে হয়। এ বিষয়ে অনেক অভিযোগও লেখালেখি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন সময়ে ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া সহজিকরণ ও দ্রুতায়িত করার তাগিদ দিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন দ্রুত মূল্য পরিশোধের।

গত বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় দেয়া বক্তব্যে তিনি ফের অধিগ্রহণ করা জমির অর্থ দ্রুত ছাড় করে জমি মালিকদের হাতে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অস্বচ্ছতা, অহেতুক সময়ক্ষেপণ ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। দুর্নীতির সবচেয়ে পুরনো ও গতানুগতিক ধারাটি হচ্ছে, জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে নানা ধরনের অস্বচ্ছতা, টালবাহানা, ঘুষ-কমিশন ও ভাগাভাগির বাণিজ্য। পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সাথে এই সেতুর সড়ক ও রেলসংযোগের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে আরো বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চললেও প্রকল্প শুরুর ৫-৬ বছর পরেও এই প্রকল্পে জমিদাতাদের অধিগ্রহণের টাকা পেতে অশেষ ভোগান্তি ও দুর্নীতির চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের টাকা নিয়েও নানা ধরনের নয়ছয় ও প্রকৃত মালিকদের ভোগান্তির চিত্র বেরিয়ে এসেছে। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে ভূমি অধিগ্রহণকে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে ২০১৭ সালে ভূমি অধিগ্রহণ আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়। সে আইনে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য পরিশোধের প্রক্রিয়া ও সময়সীমা বেঁধে দেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এখনো আইনের কোনো তোয়াক্কা করছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এলএ শাখার কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ারদের বিরুদ্ধে ভুয়া নাম ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে অধিগ্রহণের টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নিজেদের পকেটে ভরার অভিযোগও রয়েছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জমি অধিগ্রহণ করে জনগণের রাজস্বের টাকায় সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। জমি অধিগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রতিটি প্রকল্পের বাস্তব উন্নয়ন শুরু হলেও অধিগ্রহণের টাকা নিয়েই সবচেয়ে বেশি টালবাহানা, জালিয়াতি ও জনভোগান্তির অভিযোগ উঠতে দেখা যায়। আইন অনুসারে স্থাপনা ও ফসলের ক্ষতিপূরণসহ বাজারমূল্যের তিনগুণ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও এলএ শাখার কর্মকর্তাদের লোভাতুর চোখ থাকে জমি মালিকদের প্রাপ্য এই টাকার উপর। এ কারণেই অধিগ্রহণ চূড়ান্ত হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে জমির মালিকদের টাকা পরিশোধের আইনগত নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনের এলএ শাখায় দৌড়ঝাপ কমিয়ে আনতে অনলাইনে টাকা পরিশোধের প্রস্তাবও এসেছে। এ ক্ষেত্রে দু’একটি পাইলট প্রকল্পের সাফল্য সম্পর্কেও গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বেশকিছু প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির অভিযোগ এখনো অমীমাংসিত। জমি অধিগ্রহণ করে নির্মাণ করা সবগুলো প্রকল্প সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তদন্তসাপেক্ষে একটি স্বচ্ছ প্রতিবেদন ও পরিসংখ্যান তৈরি করা যেতে পারে। শুধু যে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিচালক বা এলএ শাখার তরফেই দুর্নীতি অস্বচ্ছতা হয়, তা নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে জমি মালিকরাও মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং রাতারাতি স্থাপনা নির্মাণ করে বাড়তি ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুযোগ গ্রহণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা দূর করতে আগেই অধিগ্রহণকৃত জমির ছবি তুলে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। হয়রানি, দুর্নীতি ও বঞ্চনা রুখতে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে অধিগ্রহণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন