পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সরকারী-বেসরকারি বিনিয়োগ ও অব্কাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ডে ভ‚মি হচ্ছে অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। সড়ক-মহাসড়ক, রেলওয়ে, বন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইপিজেডসহ নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রতিনিয়ত ভ‚মি অধিগ্রহণ চলছে। সরকারের একেকটি উন্নয়ন প্রকল্পে যাদের জমিজিরাত অধিগ্রহণ করা হয়। ক্ষতিপুরণ পেতে তাদেরই সবচেয়ে বেশি বঞ্চনা ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভ‚মি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। পদ্মাসেতু প্রকল্প, খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্প থেকে শুরু করে মহেশখালী মেগা প্রকল্পের ভ‚মি অধিগ্রহণে দুর্নীতি-হয়রানির ধারা অব্যাহত রয়েছে। ভ‚মি অধিগ্রহণে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানা রকম অনিয়ম চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। একদিকে জমিদাতারা নানাভাবে হয়রানি-বঞ্চনার শিকার হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব বিভাগেও এ খাতে শুভঙ্করের ফাঁকি ধরা পড়ছে। গত অর্থ বছরে বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পের ভ‚মি অধিগ্রহণে প্রায় আড়্ইা হাজার কোটি টাকার ঘাপলার রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি কোষাগার থেকে এ বিপুল টাকা উন্নয়ন প্রকল্পের ভ‚মি অধিগ্রহণ বাবদ ছাড় করা হলেও মহা হিসাব রক্ষণ অফিস এ ব্যয়ের কোনো হিসাব খুঁজে পায়নি বলে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়।
দেশের দক্ষিণে সমুদ্রোপকুলবর্তী মহেশখালিতে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের অগ্রগতি এবং ব্যয় স্বাভাবিকভাবে চললেও যাদের জমি অধিগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে কাজের ভিত্তি গড়ে তোলা হয়েছিল সে সব ভ‚মি মালিকের পাওনা পরিশোধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও বিস্তর হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রান্তিক কৃষক ও দরিদ্র মানুষ দেশের উন্নয়নের প্রয়োজনে নিজেদের জমি দিতে বাধ্য হওয়ার পর তাদের সাথে অমানবিক ও প্রতারণামূলক আচরণ করছে একশ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা ও তাদের দালালরা। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, মহেশখালির উন্নয়ন প্রকল্পে ভ‚মি অধিগ্রহণের শিকার প্রান্তিক মানুষের কাছ থেকে প্রদত্ত টাকার ১৫ শতাংশ হারে ঘুষ গ্রহণের পরও মাসের পর মাস ধরে জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় ঘুরতে হচ্ছে। জমি অধিগ্রহণের চেক পাওয়ার আগেই যদি ৩ লাখ টাকার জন্য ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে ঘুরতে হয়, চেক হাতে পেতে আর কত টাকা হাতিয়ে নেবে তারা তা আন্দাজ করাও কঠিন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মেগা প্রকল্পের বড় বড় ইমারত ও ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। মূলত: প্রকল্প গ্রহণের শুরুতেই সরকারের লোকজন প্রজেক্ট প্রোফাইল অনুসারে জমি অধিগ্রহণের নোটিশ টানিয়েই কাজ শুরু করে দেয়। এরপর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সব ধাপ অতিক্রম করার পরও জমির মালিকদের পাওনার জন্য দালালদের মোটা অংকের টাকা দিতে বাধ্য হতে হয়। অত:পর জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় মাসের পর মাস ধরে ধর্ণা দিয়েও তারা টাকা পায় না। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে টাকা পেলেও তাদের প্রাপ্য ঠিকভাবে বুঝে পেয়েছে কিনা তা দেখার কেউ নেই।
জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার কর্মকর্তারা জমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধের দায়িত্বে থাকলেও পুরো প্রক্রিয়াকে সাধারণ মানুষের কাছে অনেকটা অস্বচ্ছ, জটিল ও সিন্ডিকেটেড বলেই প্রতিয়মান হয়। ৩০-৪০ভাগ ঘুষ নিয়ে টাকার চেক প্রদান করা হলেও দলিল, পর্চা বা রেকর্ডে কোনো ভুলভ্রান্তি থাকলে সে সব ভুলভ্রান্তিকে পুঁজি করে জমি মালিকদের বঞ্চিত করা বা নামমাত্র টাকা দিয়ে বিদায় করার অভিযোগ রয়েছে। এ খাতে দৈনিক কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেটেড দালালচক্র এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। মহেশখালি ইপিজেড, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মত সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক মেগা প্রকল্পেই যদি এমন চিত্র বেরিয়ে আসে, অন্যসব প্রকল্পের অবস্থা কি তা সহজেই অনুমেয়। দরিদ্র মানুষকে ঠকিয়ে, বঞ্চিত করে, ঘুষ ও ভাগবাটোয়ারার যোগসাজশ ছাড়াও জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা এবং ভ‚মি অফিসের একশ্রেণীর কর্মকর্তা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভ‚মি অধিগ্রহণের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ধরণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে কয়েকজন সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। ভ‚মি অধিগ্রহণে সিন্ডিকেটেড দুর্নীতির অভিযোগ কোনো নতুন বিষয় নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নিস্ক্রীয়তা বিষ্ময়কর। যে সব উন্নয়ন প্রকল্প দেশকে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, সেব প্রকল্পের জন্য নিজেদের জমি ও বাড়িঘর ত্যাগ করা পরিবারগুলো দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারা প্রতারিত ও বঞ্চনার শিকার হওয়ার বাস্তবতা রুখতে হবে। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই দ্রæততম সময়ে ও সহজে ক্ষতিপুরণসহ জমির মূল্য বুঝিয়ে দেয়ার স্বচ্ছ ও কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ খাতে দালাল, মধ্যস্বত্বভোগীদের অর্থ লুণ্ঠনের রাস্তা বন্ধ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।